ত্রিপুরার সাথে কুমিল্লার ব্যবসা-বাণিজ্য চলত নৌপথেই। কিন্তু স্বাধীনতার পর সীমান্ত আইনের ফলে তা আর সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার মধ্যে সরাসরি পণ্য আমদানি-রপ্তানির রুট হিসেবে নৌপথ কেমন হবে তার পর্যবেক্ষণের জন্য পরীক্ষামূলক ১০ টন সিমেন্ট বোঝাই কার্গো পাঠানো হয়েছে সোনামুড়ায়। নাব্যতা থাকায় গোমতী নদীর দাউদকান্দি থেকে সোনামুড়া পৌছাতে নৌযানটির সময় লেগেছে ২দিন, আটকে গেছে প্রায় ১৪টি স্থানে।
প্রথমবারের মতো নৌপথে পন্য গেল ত্রিপুরায়। নৌপথে দু’দেশের ব্যবসা সম্প্রসারনের অংশ হিসেবে গত (৫ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লার গোমতী নদীর দাউদকান্দি থেকে সিমেন্ট বোঝাই একটি কার্গো ভারতের ত্রিপুরার সোনামুড়ায় প্রবেশ করে। সরু নদীতে ড্রেজিং না হওয়ায় নাব্য সংকটের ফলে ভারী পন্যবাহী নৌযান চলাচলের উপযোগী নয়। তাছাড়া নৌপথে রয়েছে কম উচ্চতার ১৮টি সড়ক সেতু ও ২ টি রেলসেতু রয়েছে যা বড় নৌযান চলাচলে বাধার কারণ হতে পারে।
ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস বলেন, বাংলাদেশ ভারতের জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। সাধারণত দু'দেশের মধ্যে ট্রাকে পণ্য আমদানি রপ্তানি করা হয়। নৌ পথ চালু হলে তা হব সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব। করোনা মহামারীতেও দু’দেশেরে মধ্যে বানিজ্যিক সংযোগ অব্যাহত আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, গোমতী নদীর পানি প্রবাহ সারাবছর একরকম থাকে না। বর্ষা মওসুমে এখানে প্রায় ৩ থেকে ৪ মিটার পানি থাকে শীত মওসুমে কোথাও কোথাও ১ মিটার পানি থাকে। ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য এটাকে যদি সারাবছর নৌ চলাচলের উপযোগী করতে হয় তাহলে এই পুরো নদীকে পূণঃখননের আওতায় আনতে হবে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল বলেন, এই নৌপথে আমদানি রপ্তানি শুরু হলে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে, এখানকার ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। কারণ আমাদের দেশ থেকে বিদেশে পন্য রপ্তানীর সুযোগ তৈরী হবে, আমরা বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করবো। তবে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে নৌপথে সম্প্রসারিত হবে ব্যবসা বাণিজ্য, তেমনি গোমতীর পানিতে নির্ভরশীল কৃষিতে আসবে আমূল পরিবর্তন।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, ১২ থেকে ১৪টি স্থানে পলি জমে নাব্যতা সৃষ্টি হওয়ায় নৌযানটি আটকে যায়। এই ট্রায়াল রানের মাধ্যমে আমরা সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছি। কোথায় কোথায় নাব্যতা রয়েছে, কোথাও কোথাও ব্রিজের হাইট নিয়ে আমাদের চিন্তা ভাবনা করতে হবে, গোমতী নদীর ড্রেজিংয়ের ব্যপারে আমাদের প্রকল্প নেয়া হয়েছে তা অনুমোদন পেলেই নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করে আরও বেশি পরিমান মালামাল কিভাবে নিয়ে যাওয়া যায় তার ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভারত সরকার এই নৌপথে বানিজ্যের জন্য বেশ আগ্রহী, কারণ বিবির বাজার স্থল বন্দর এর পাশে নৌবন্দর হলে আন্তসীমান্ত বানিজ্যে বিশেষ সহায়ক হবে।
তিনি আরও বলেন, ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি করা হলে নদীর পানি প্রবাহ বাড়বে। গোমতী নদীতে পণ্য রপ্তানীর সুযোগ পেলে ব্যবসায়ীরা অনেক লাভবান হবেন- এমনটাই মত ব্যবসায়ীদের।