উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি ও বর্ষার শেষে শুরু হবে শুষ্ক মৌসুম। দেখা দেবে নাব্য সংকট। ব্যাহত হবে নৌ চলাচল। শুষ্ক মৌসুমের দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি ড্রেজিং জোনের সত্তরটি নৌপথ সংরক্ষণমূলক ড্রেজিং করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুষ্ক মৌসুমে নৌপথের দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ৬৩০০ কিলোমিটার। উজান থেকে নেমে আসা পলির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এসব নৌপথে জমে থাকে। এসব পলি অপসারণ করে সারা বছর নৌ পথ সচল রাখতে অপসারণ করতে হবে প্রায় ৩.০৪ কোটি ঘনমিটার বা ৬.০৪৯৬ কোটি টন (১ ঘন মিটার=১.৯৯ টন প্রায়) পলি। যার মধ্যে ১.৭৬ কোটি টন অপসারণ করা হবে বেসরকারি ড্রেজারের মাধ্যমে। বাকি ১২৮ লাখ ঘনমিটার বা ১.২৮ কোটি টন অপসারণ করা হবে সরকারি ড্রেজারের মাধ্যমে। এসব কাজে ব্যয় হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে এসব তথ্য জানাগেছে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এটি বলতে গেলে আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। তবে প্রতি বছর কি পরিমাণ পলি অপসারণ করা প্রয়োজন তার সম্ভাব্য খরচ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ীই আমরা পরিকল্পনা করে থাকি। চলমান বন্যায় দেশের বিভিন্ন নদীতে ব্যাপক পলি জমার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তনও আসতে পারে। তবে ড্রেজিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় ও সংরক্ষণ মূলক ড্রেজিং না হওয়ায় অনেক নদী আজ মৃত্যু প্রায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৬টি জোনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নৌপথ রয়েছে ঢাকা জোনে। এ জোনে নৌ পথ হচ্ছে ৩৪টি। এ জোনে পলি জামার হারও বেশি। এসব নৌ পথ সচল রাখার জন্য চলতি বছর ১৭৫ লাখ ঘনমিটার বা ১.৭৬ কোটি টন পলি অপসারণ করতে হবে। রংপুর জোনে ৩টি নৌ পথের ১৯ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করতে হবে। বরিশাল জোনে ১৫ টি নৌ পথের ৪৯.৫০ লাখ ঘনমিটার পালি অপসারণ করতে হবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ড্রেজিং জোনের ৭ টি নৌ পথের প্রায় ২৮ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করতে হবে যার মধ্যে ২৫ লাখ ঘনমিটারই করা হবে বেসরকারি ড্রেজারের মাধ্যমে। খুলনা ড্রেজিং জোনে ৫ টি নৌ পথের প্রায় ২০.৫০ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করতে হবে। যার মধ্যে ১৩.৫০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হবে বেসরকারিভাবে। বাকি সাত লাখ ঘনমিটার সরকারি ড্রেজার দিয়ে করানো হবে। মাদারিপুর জোনের ৪টি নৌ পথের ১২ লাখ ঘনমিটার পলি ড্রেজিং করা হবে। যা সরকারি ও বেসরকারিভাবে সমাপ্ত করা হবে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর (ড্রেজিং বিভাগ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ছাইদুর রহমান বলেন, উজান থেকে প্রতি বছর প্রায় ৩ বিলিয়ন টন পলি বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ নদীতে আসে। নৌ চলাচল সচল রাখার জন্য প্রতিবছরই বর্ষা শেষ হলে সংরক্ষণমূলক ড্রেজিং করতে হয়। চলতি বছরের জন্য আমরা একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এতে করে দেশের প্রায় ৬৩০০ কিলোমিটার নৌ পথের সংরক্ষণ ড্রেজিং করতে হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। প্রয়োজনীয় দরপত্র আহ্বানেরও কাজ চলছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতি বছর নৌ যান মালিক সমিতি, কার্গো মালিক সমিতেসহ সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে সম্ভাব্য সংকট নিরশনে চাহিদাপত্র আহ্বান করে থাকি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বন্দর কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদার ভিত্তিতেই এই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও হঠাৎ করেও যদি কোনো নাব্য সংকট দেখা দেয় তারও সমাধান করা হয়ে থাকে।