একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। মহাজোটের শরিক যুক্তফ্রন্টের প্রার্থীও চূড়ান্ত হয়েছে। ১৪ দল ও যুক্তফ্রন্টের বিকল্প ধারাকে মিলিয়ে ১৬টি সংসদীয় আসন দিয়ে মহাজোটের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন আলোচনা ও দর কষাকষির পর দলগুলো এসব আসন পায়। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র হস্তান্তর করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক দলগুলোর প্রার্থীদের মধ্যে যারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন, তাদের হাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আসন্ন সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে যে ১৭টি আসনে আওয়ামী লীগের দুজন করে প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছিল, সেসব আসনেও প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি। গতকাল সকালে ওই আসনগুলোর চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে ২৪০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ৪০ থেকে ৪২টি, ওয়ার্কার্স পার্টিকে পাঁচটি, জাসদকে (ইনু) তিনটি, জাসদ (আম্বিয়া) একটি, তরিকত ফেডারেশনকে দুটি, যুক্তফ্রন্টকে (বিকল্পধারা) তিনটি ও জাতীয় পার্টিকে (জেপি) দুটি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এ সংখ্যা ৫৫ থেকে ৬০ হবে।’

তিনি জানান, ‘এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে কারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তা আগামীকাল (শনিবার) নির্বাচন কমিশনে তালিকা জমা দেওয়ার সময় জানানো হবে।’

চূড়ান্ত প্রার্থী যারা : ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন রাশেদ খান মেনন (ঢাকা-৮), ফজলে হোসেন বাদশা (রাজশাহী-২), মোস্তফা লুৎফুল্লাহ (সাতক্ষীরা-১), টিপু সুলতান (বরিশাল-৩) ও ইয়াসিন আলী (ঠাকুরগাঁও-৩)। ১৪ দলের শরিক জাসদের প্রার্থীরা হলেন হাসানুল হক ইনু (কুষ্টিয়া-২), শিরীন আখতার (ফেনী-১) ও রেজাউল করিম তানসেন (বগুড়া-৪)। মহাজোটের শরিক বিকল্পধারার চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন এমএ মান্নান (লক্ষ্মীপুর-৪), মাহী বি চৌধুরী (মুন্সীগঞ্জ-১) ও এফএম শাহীন (মৌলভীবাজার-২)। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (পিরোজপুর-২) ও রুহুল আমিন (কুড়িগ্রাম-৪) হলেন ১৪ দলের আরেক শরিক জেপির চূড়ান্ত প্রার্থী। সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী (চট্টগ্রাম-২) ও আনোয়ার খান (লক্ষ্মীপুর-১) পেয়েছেন ১৪ দলের শরিক তরিকত ফেডারেশন থেকে মনোনয়ন। মঈনুদ্দিন খান বাদল (চট্টগ্রাম-৮) পেয়েছেন জাসদ (আম্বিয়া) থেকে মনোনয়ন।

গতকাল সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে প্রথমে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীকে মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে মহাজোটের শরিক দলগুলোকে মনোনয়নের চিঠি দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এরপর পর্যায়ক্রমে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান, জাসদের শিরীন আক্তার ও বিকল্প ধারার আবদুল মান্নান যার যার দলের প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি নেন ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন কাদের : মনোনয়নের পূর্ণাঙ্গ তালিকা শনিবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘শরিক দলগুলো আরো বেশি আসন প্রত্যাশা করে। তবে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে এর বেশি মনোনয়ন দিতে পারছে না। শরিক দলগুলো চাইলে অন্য আসনেও নিজেদের প্রতীকে প্রার্থী দিতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘মহাজোটের শরিকদের ৫৫ থেকে ৬০টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে দু’-একটি আসন এদিক-সেদিক হতে পারে। যা ইসিতে মনোনয়নের তালিকা জমা দেওয়ার আগে চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘মহাজোটের শরিক দলগুলোর প্রার্থীদের যেসব আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ছাড়া অন্যরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।’

এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।