নৌকা কাউকে বঞ্চিত করে না

কোটালীপাড়ায় জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন শেখ হাসিনা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সরকার

কোটালীপাড়ায় নির্বাচনী জনসভায় হাসিনা

নৌকা কাউকে বঞ্চিত করে না

  • হাসান শান্তনু ও হায়দার হোসেন কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ থেকে
  • প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে, তাদের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে। আমি দেশবাসীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি যুদ্ধাপরাধী, খুনি, অগ্নিসন্ত্রাসীরা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেজন্য নৌকায় ভোট দিন। নৌকায় ভোট দিয়ে তাদের রুখে দিন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারো আওয়ামী লীগকে জনগণের সেবা করার সুযোগ দিন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। যেখানে যাকে নৌকা মার্কার প্রার্থী করা হয়েছে তাদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। বাংলাদেশ আজ মাথা উঁচু করে চলতে পারে। আবারো মা-বোনদের কাছে ভোট চাই। নৌকায় ভোট দিয়ে কেউ বঞ্চিত হয় না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের মানুষ আর না খেয়ে থাকবে না, বেকার থাকবে না, কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না। আমরা মানুষের জন্য এসব সুবিধা এনে দিয়েছি। আজকে সবার হাতে মোবাইল ফোন। এই সরকারের কল্যাণে এটা সম্ভব হয়েছে। সরকারের অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ঘরে বসে মানুষ টাকা উপার্জন করতে পারছে। শিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা সহজ হয়। আমরা শিক্ষা বিস্তারে কাজ করেছি। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করেছি। দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। এর ফলে বিনিয়োগ বড়বে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশের মানুষও বিনিয়োগ করতে পারবে। একটি বাড়ি একটি খামার করেছি। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক তৈরি করেছি এ ছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মানুষের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। শিক্ষাই একটি শিক্ষিত জাতি গড়তে পারে। আমরা শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক কাজ করেছি। তিনি বলেন, প্রতিটি গ্রামের মানুষ শহরের সুযোগ পাবে। আমার গ্রাম আমার শহর হিসেবে গড়ে উঠবে। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত গ্রাম গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবো। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের। আমি সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। কোটালীপাড়ার মানুষের প্রতি শেখ হাসিনা বলেন, পিতা-মাতা-ভাই হারা আমি। আপনারা ভোট দেন বলেই আমি জনগণের সেবা করার সুযোগ পাই। আপনারাই আমার আপনজন। আপনারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে আমার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে আরেকবার মানুষের সেবা করার সুযোগ করে দেন। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা আমার একমাত্র লক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল বলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।

কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র জয়ধরের সভাপতিত্বে জনসভা পরিচালনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আয়নাল হোসেন।

বিকাল ৪টায় শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আকরাম উদ্দিন আহম্মদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বিএম মোজাম্মেল হক, আহম্মদ হোসেন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আবদুল্লাহ, এসএম কামাল, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম হুমায়ুন কবীর, আওয়ামী লীগ নেতা বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোটালীপাড়ার পৌর মেয়র কামাল হোসেন শেখ, সাবেক পৌর মেয়র এইচএ অহেদুল ইসলাম, কমল চন্দ্র সেন প্রমুখ।

এদিকে শেখ হাসিনার জনসভাকে কেন্দ্র করে তার নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ার সর্বস্তরের মানুষ ছিল উদ্বেলিত। কোটালীপাড়াকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। সকাল থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়নের নারী পুরুষ নির্বিশেষে  খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে থাকে জনসভাস্থল শেখ লুৎফার রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশাল জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। মুহূর্তেই রূপ নেয় বিশাল জনসভায়। জনসভাস্থলে নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী সভামঞ্চে উঠলে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা উলুধ্বনি দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়।

এর আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জিয়ারতের মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল দুপুর সোয়া ২টায় সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তিনি এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আকরাম উদ্দিন আহম্মদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, আবদুর রহমান এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি, বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, আহম্মদ হোসেন, এসএম কামাল, যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার প্রমুখ।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ভবনে যান এবং সেখানে তিনি কিছু সময় অতিবাহিত করেন। এরপর তিনি সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স মসজিদে অনুষ্ঠিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন।

গতকাল দুপুর ২টায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে সড়কপথে টুঙ্গিপাড়ায় এসে পৌঁছান।

মুকসুদপুর ও কাশিয়ানীর রাস্তায় মানুষের ঢল : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া সড়কপথে আগমন উপলক্ষে মুকসুদপুরের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। গতকাল সকালে শেখ হাসিনা সড়কপথে টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার সময় গোপালগঞ্জ জেলার প্রবেশদ্বার মুকসুদপুর হতে কাশিয়ানী উপজেলার গেড়াখোলা ব্রিজ থেকে ফুকরা পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দুই পাশে জনতার ঢল নামে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত ও এক নজর দেখার জন্য মুকসুদপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার নিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মুকসুদপুর কলেজ রোড সড়কের দুই পাশে অপেক্ষা করে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে মুকসুদপুর কলেজ রোড পেট্রোল পাম্পের কাছে তৈরি করা হয় সভামঞ্চ।

ঢাকা-মাওয়া সড়কের দুই পাশে নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী : সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সকাল ৮টা থেকে মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের কুচিয়ামোড়া, নিমতলা, হাসাড়া, ছনবাড়ি, দোগাছি, মেদেনীমণ্ডল, মাওয়া ও শিমুলিয়া এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে অপেক্ষা করেন। শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য রাস্তার দুই পাশে সাধারণ জনগণ ভিড় জমান। সকাল সোয়া ৯টার দিকে সিরাজদিখানের নিমতলা এলাকা অতিক্রম করেন তার গাড়ি বহর। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। শ্রীনগরের ছনবাড়ি এলাকা অতিক্রম করেন সাড়ে ৯টার দিকে। এখানে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের মহাজোটের প্রার্থী মাহি বি. চৌধুরীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

সকাল পৌনে ১০টার দিকে লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছান, সেখানে মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলিসহ উপজেলার নেতাকর্মীরা শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর ভিআইপি ফেরিঘাটে রাখা ক্যামেলিয়া ফেরিতে চলে যান। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে কাঁঠালবাড়ীর উদ্দেশে ফেরিটি ছেড়ে যায়।

উজ্জীবিত রাজবাড়ীবাসী : গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, আজ দুপুর ১২টায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় নির্বাচনী পথসভায় অংশ নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তার আগমনে এ অঞ্চলের মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছে। রাজবাড়ীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ২য় পদ্মা সেতু নির্মাণ, পদ্মানদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে রাজবাড়ীকে রক্ষাসহ বিভিন্ন দাবি আরো জোরালো হয়ে উঠেছে। গোয়ালন্দ ইউএনও ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু জানান, প্রধানমন্ত্রী দৌলতদিয়া ট্রাক টার্মিনালে আয়োজিত নির্বাচনী পথসভায় অংশ নেবেন। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads