নাম তার নুর মোহাম্মদ মুন্সী। বাস করেন ঢাকার জুরাইন কমিশনার রোড বাগানবাড়িতে। গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ, বিক্রমপুরে। তার বাবার নাম কুদ্দুস মুন্সী। মার নাম নুরুন নাহার। বাবা গুলিস্তানে ব্যবসা করেন। নূররা চার ভাই এক বোন।
ছোটবেলা থেকেই নুর মোহাম্মদের দুই পায়ে সমস্যা। তার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন ডাক্তাদের ভুল চিকিৎসা করার কারণে পা অচল হয়ে যায়। তারপর থেকেই হুইলচেয়ার চলাফেরা করেন নূর। ছোটবেলায় যখন খেলা দেখতেন তার নিজেরও খেলতে ইচ্ছে হতো। তখন নূর মোহাম্মদ এলাকার বড় ভাইদের সাথে ক্রিকেট খেলতেন। ছোটবেলায় অবশ্য নূরের হুইলচেয়ার না থাকায় ব্যাটিং করতে পারতেন না। শুধু বোলিং আর ফিল্ডিং করতেন। নূর ফুটবলও খেলতেন। এছাড়া দাবা খেলেন। ছোটবেলায় যখন টিভিতে খেলা দেখতেন আর ভাবতেন যদি তাকে টিভিতে দেখাত। ১৯৯৭ সালে আইসিসি টুর্নামেন্টের কোনো খেলা মিস করতেন না নূর। পরে যখন তাকে বিভিন্ন টিভিতে দেখাল। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয় তার।
নূর বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট টিমের প্লেয়ার। পাশাপাশি তিনি চাকরি করতেন। করোনার জন্য আপাতত চাকরিটা করছেন না নূর। বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেটের সাথে যুক্ত আছেন শুরু থেকে। ২০২০ সালে মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে তিনটি দল নিয়ে বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি টুর্নান্টের আয়োজন করা হয়। টিম তিনটি হলো রেড, গ্রিন, ব্লু। সে টুর্নামেন্টর নূরদের টিম জয়ী হয়।
ছোটবেলা থেকেই যে কোনো কাজে পরিবারের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন নূর। যেহেতু জুরাইন এলাকায় দীর্ঘদিন থাকেন সেহেতু সবার ভালোবাসা, সহযোগিতা পেয়েছেন। পরিবারের পাশাপাশি এলাকাবাসীও তাকে সাহায্য করেছে। নূর বলেন, ‘অনেক প্রতিবন্ধীদের কাছে শুনেছি তারা বিভিন্নভাবে অবহেলিত হন। আমার ক্ষেত্রে অবশ্য এরকম ঘটেনি। আমি পরিবার ও এলাকার মানুষ থেকে পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। আমার বাবা মা কখনই আমাদের কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়নি। তবে এলাকার বাইরে গেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই। বিশেষ করে রাস্তা পার হওয়ার সময়। দেখা গেছে এলকায় কোনো খানে জলাবদ্ধতা। আমার বন্ধুরা আমাকে সাহায্য করে। ’
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার নিজের সংসার নিজেই চালাই। আমার একটা মেয়ে আছে।’
ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করেন নূর। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন অনেকেই। কোরবানির ঈদে ৫০ জন প্রতিবন্ধী ব্যাক্তির মাঝে ঈদ উপহার দেন। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের করোনাকালীন সুরক্ষার জন্য মাস্ক, সেনিটাইজার দেন নুর মোহাম্মদ। বলেন, ‘এভাবেই প্রতিবন্ধী, অসহায় মানুষদের সাহায্য করে যেতে চাই। দোয়া করবেন এই প্রচেষ্টা যাতে অব্যাহত থাকে।’





