নীলফামারী প্রতিনিধি:
স্থানীয় একটি ক্লিনিকে সিজারের পর শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে এক নবজাতককে নেয়া হয় নীলফামারী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ম্পেশাল কেয়ার অব নিউনেটাল ইউনিটে। রাতে শিশুটিকে ভর্তি নেওয়ার পর অক্সিজেন সংকটের কারণে শিশুটিকে পর্যাপ্ত চিাকৎসা দিতে ব্যর্থ হোন হাসপাতালটি। ফলে শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে বুধবার (২৩ আগষ্ট) রাত ১০টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হস্তান্তর করেন। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
নীলফামারী হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স জোশনা বর্মণ বলেন,‘মঙ্গলবার রাতে শিশুটিকে ভর্তি নেওয়ার পর অক্সিজেন সংকটের কারণে শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে বুধবার (২৩ আগষ্ট) রাত ১০টার দিকে রংপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে, সিনিয়র ষ্ট্যাফ নার্স কহিনুর আকতার কণা বলেন, এই ইউনিটে চাহিদার তুলনায় অক্সিজেন ও চিকিৎসক না থাকায় বাদ্য হয়ে রংপুরে পাঠানো হয়েছে।
জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ভুক্তভোগি আয়শা সিদ্দিকার (২৪) বাবা আশরাফ আলী অভিযোগ করে বলেন, ”মঙ্গলবার (২২ আগষ্ট) রাত সাড়ে ৯টায় স্থানীয় একটি ক্লিনিকে আমার মেয়েকে সিজারের পর শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে নবজাতকে (নাতি) ওই রাতেই নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ভর্তি করেন।”
নীলফামারী হাসপাতালের ওই ইউনিটে প্রতিনিয়ত এ ঘটনা ঘটছে। এই হাসপাতালের নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নার্সদের ব্যবহারে অতিষ্ট রোগি ও স্বজনরা। এছাড়াও, অক্সিজেন, ওষুধ ও বেড সংকটের কারণে এক থেকে ২৮ দিনের নবজাতককেও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের শাহপাড়ার বাসিন্দা ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ফুলবালা (২৪) বলেন, তার একদিন বয়সের সন্তান জন্মের পর থেকে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে নিবির পরিচর্যা কেন্দ্রে (নিউনেটালে) ভর্তি করা হয়। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে বিছানা না পেয়ে বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আর নার্সদের যে ব্যবহার তা বলাই যায় না।’
একই ইউনিয়নের সুটিপাড়া গ্রামের পাঁচদিনের নবজাতক নিয়ে আসা সাদিয়া বেগম বলেন, ‘এক বিছানায় দুইটি রোগী নিয়ে থাকা খুবই কষ্ট। এটি শিশুদের জন্য বড় যন্ত্রণার। এতে উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি।
হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার অব নিউবর্ন ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে চালু হয়। সেখানে অক্সিজেন থাকার কথা প্রতিটি নবজাতকের জন্য ১০ থেকে ১২ লিটার। কিন্ত সেখানে এর বিপরীতে একজনের জন্য রয়েছে মাত্র ২ লিটার অক্সিজেন। ফলে শ্বাসকষ্ট জনিত সিভিয়ার (মরনাপন্ন) নবজাতকদের হরহামেশায় পাঠানো হচ্ছে রংপুরে। সেখানে প্রতিদিন ২০-২৫টি নবজাতক চিকিৎসা নিতে আসে। রেডিও থেরাপি বা অপরিপক্ব শিশুর চিকিৎসার একমাত্র নির্ভরযোগ্য সেবা কেন্দ্র এটি।
নীলফামারীর হাসপতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু আল হাজ্জাজ বলেন, ‘নবজাতকদের অক্সিজেন ও চিকিৎসক সংকটের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি, পাশেই সাততলা নতুন ভবনটি চালু হলে চিকিৎসকসহ এসব সমস্যা থাকবে না।’
অক্সিজেনের অভাবে শুধু রোগীরাই বিরক্ত নয় হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মকর্তারাও বিরক্ত প্রকাশ করেছেন। বলছেন প্রত্যেকটি হাসপাতালে শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (নিউনেটাল)একজন চিকিৎসক থাকা একান্ত প্রয়োজন।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. গোলাম রসুল রাখি বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই এ সমস্যা বিরাজ করছে। জনবল সংকট, শয্যা সংখ্যা, শৌচাগার, ফিডিং কর্নার, বসার জায়গা ও ইনডোরে ডাক্তার নেই, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরেও কাজ হয় না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চিকিৎসক বলেন, ‘নিবির পরিচর্যা কেন্দ্রে সিজারিয়ান নবজাতক ও স্বাভাবিক (নরমাল) প্রসবের শিশুদেরও বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। তবে আয়শার সিদ্দিকার শিশুটি ছিল (সিভিয়ার) গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্রত্যেকটি হাসপাতালে শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (নিউনেটাল)একজন চিকিৎসক থাকা একান্ত প্রয়োজন।’
উল্লেখ্য, তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী ও সদর আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর ‘নিউনেটাল’ ইউনিটটি চালু করেন ২০১৩ সালে। এটি এই হাসপাতালে আগে ছিল না। তাই রোগীদের সাময়িক কষ্ট হচ্ছে। রংপুরে যাওয়ার ঝামেলা পোহাতে হয় না।’