ঘুষের বিনিময়ে সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দালালচক্র। এসব চক্রের মধ্যে চলছে লাখ লাখ টাকার ঘুষবাণিজ্য। সাম্প্রতিক সময়ে এসব চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন একাধিক পুলিশ সদস্য এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারী।
জানা গেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কর্তৃপক্ষ শিক্ষক পদপ্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। শিক্ষক এবং প্রার্থীর কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইবি। অভিযুক্ত ওই দুই শিক্ষক হলেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিন ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুর রহিম।
ইবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আবদুল লতিফ জানান, ইবি ভিসি অধ্যাপক এম হারুন-উর-রশিদ আসকারী বরখাস্তের আদেশ জারি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য ১১ মার্চ সার্কুলার দেয় ইবি। রুহুল আমিন ও আবদুর রহিম এক প্রার্থীকে চাকরি দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন। এজন্য ১০ থেকে ১৮ লাখ টাকা লেনদেনের কথা বলেন তারা।
ফাঁস হওয়া অডিও ও নিয়োগবাণিজ্য বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. রশিদ আসকারী বলেন, এ বিষয়ে কোনো কথা নেই, যারা জড়িত তাদের চাকরি থাকবে না। ডকুমেন্ট পেলে যেই জড়িত থাক না কেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এদিকে মাদারীপুরে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগে প্রায় কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা পুলিশের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে প্রতারণার অভিযোগে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদারের দেহরক্ষীসহ ২ কনস্টেবলকে আটকের পর নেওয়া হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে। এছাড়া একই অভিযোগে আরো দুই কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক জেলা থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে পুলিশ সুপার তার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেই এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন।
স্থানীয় ও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুরে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় ২৪ জুন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে অপরাধীদের ধরার জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদারের দেহরক্ষী পুলিশ সদস্য নুরুজ্জামান সুমনকে ঘুষের টাকাসহ আটক করা হয়। এছাড়া পুলিশ সদস্য ও পুলিশ লাইনসের মেস ম্যানেজার জাহিদ হোসেন, টিএসআই গোলাম রহমান এবং পুলিশ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী পিয়াস বালার কাছ থেকেও ঘুষের টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে নুরুজ্জামান সুমন ও জাহিদ হোসেনকে পুলিশ সদর দপ্তরে নজরদারিতে রাখা হয়। টিএসআই গোলাম রহমান এবং পুলিশ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী পিয়াস বালাকে মাদারীপুর জেলা থেকে অন্যত্র শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। ঘটনাটি গত সোমবার রাতে হলেও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। কয়েক দফায় মাদারীপুর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয় কথা বলতে রাজি হননি তারা।
পুলিশ আটকের বিষয়ে মাদারীপুর সদর থানার ওসি সওগাতুল আলম জানান, পুলিশ নিয়োগের ব্যাপারে কাউকে আটক, গ্রেপ্তার বা অন্য কোনো বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কিছু বলতে পারব না।