পণ্যবাজার

দিশেহারা নিম্নআয়ের মানুষ

নিয়ন্ত্রণহীন নিত্যপণ্যের দাম

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ২৮ অগাস্ট, ২০২১

চাল তেলের পর এবার বাড়লো চিনি, ডাল, আটা-ময়দার দামও। বাজারে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও প্রতিকেজি চিনিতে ৮ থেকে ১০ টাকা, ডাল ৫  থেকে ৭ টাকা এবং আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা। জিনিসপত্রের অব্যাহত দাম বৃদ্ধিতে মহামারিতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নআয়ের মানুষেরা উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। তাদের অভিযোগ, নানা অজুহাতে কোনো জিনিসের দাম বাড়লেও পরবর্তী সময়ে দাম কমলেও আগের দামে ফিরে আসার নজির খুব কম।

রাজধানীর মধ্যবাড্ডা এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘কোনো না কোনো কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু একবার দাম বাড়ার পরবর্তীতে কমে গেলে তার প্রভাব খুচরা বাজারে দেখা যায় না। কারণ, আমাদের দেশে যথাযথভাবে বাজার মনিটরিং করা হয় না। আর এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম হাঁকে।’

চিনির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে একই এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, ‘পাইকারদের কাছ থেকে শুনেছি আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেশি, তাই দাম বেড়েছে।’ তবে হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে চিনির দাম বৃদ্ধির এমন দাবিকে নাকচ করে দিয়ে ক্রেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না। রবিউল ইসলাম নামের একজনের অভিযোগ, ‘বাজারে কোনো জিনিসের দাম এক টাকা বাড়লে বিক্রেতারা তিন টাকা বাড়িয়ে দেয়। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি মানেই ব্যবসায়ীদের বাড়তি  মুনাফালাভের সুযোগ তৈরি হওয়া। কিন্তু বিপাকে পড়তে হয় আমাদের মতো মধ্য এবং নিম্নবিত্তের মানুষদের।’   

রাজধানীর বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ৭০ টাকার চিনি গত এক মাসে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, মানভেদে বিভিন্ন রকম মসুর ডালের দামও বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা। আর আটা-ময়দার দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের পর ময়দার দাম ছিল বস্তা (৫০ কেজি) ১৫০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা। এখন সেটা ১৮৮০ টাকা থেকে ১৯৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। খুচরায় ৩৯ টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে ময়দা। একইভাবে আটার বস্তা ছিল ১৩৩০ টাকা। এখন তা ১৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতিকেজি ২৬ টাকায়।

দেশে চিনি, আটা, ময়দা ও ডালের সবচেয়ে বড় উৎপাদক ও আমদানিকারক সিটি গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে পাইকারি পণ্যের আড়ত পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা জানান, ব্রাজিলে শ্রমিক সংকট ও বিশ্বাবাজারে চিনির কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারে দাম বেড়েছে। তিনি মিল মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, ‘প্রতি টন চিনির কাঁচামালে প্রায় ১৫০ ডলার পর্যন্ত বেড়েছে। একারণে মিল মালিকরা দাম বাড়িয়েছে। তারাই এখন প্রতিকেজি চিনি ৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে চাচ্ছে। বর্তমানে মিলগেটে ৭২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’

তবে চিনির দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কারসাজিকে দায়ী করেছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন-বিএইচএফআইসি। সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ব্যবসায়ীরা বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দেখাচ্ছে। বিশ্ববাজারে কিছুটা দাম বেড়েছে। এর প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে সময় লাগবে। বেসরকারি পর্যায়ে সিন্ডিকেট করে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। এই সিন্ডিকেটই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে।

এমন পরিস্থিতিতে গত ২৫ আগস্ট (বুধবার) নিত্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, অনেক পণ্য আমদানিনির্ভর, তাই আমদানি মূল্যবৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে যাতে স্থানীয়ভাবে মূল্যবৃদ্ধি ও মজুত করা না হয় সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবে আমরা টিসিবির অপারেশন গত বছরের তুলনায় আড়াইগুণ বাড়িয়েছি। টিসিবি আরো কয়েকটি পণ্য বিক্রি করছে।

তিনি জানান, আগামী মাস থেকে পেঁয়াজসহ আরো পণ্য বিক্রি শুরু হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাতে দেশের বাজারে আমদানি পণ্য বেচাকেনা হয়, সেজন্য মনিটরিং জোরদার করা হবে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি কেউ অন্যায়ভাবে বেশি দাম নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে চিনির খুচরা মূল্য ৮০ টাকা। সরকার ৭৫-৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। টিসিবিতে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ। অন্যদিকে, মসুর ডালের দাম ৩ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এদিকে, বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকা। যা আগের সপ্তাহে ছিল ১৩৩ থেকে ১৩৫ টাকা। একই সঙ্গে বেড়েছে পাম তেলের দামও। ১১৮-১২০ টাকা কেজির পাম তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৩-১২৫ টাকায়। অন্যদিকে, চালের দামে লাগাম টেনে ধরা যায়নি এখনো।  খুচরা বাজারে মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৫, আটাশ ৫০ থেকে ৫৫, স্বর্ণা ৪৭ থেকে ৫০ ও নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

তবে গত সপ্তাহে কাঁচামরিচে যে অস্বস্তি ছিল তাই এখন কেটে গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি কাঁচামরিচের খুচরা দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। এছাড়া, বাজারে অধিকাংশ সবজির দামে কিছুটা স্থিতিশীল লক্ষ্য করা গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads