নিহত ১৩ শ্রমিকের সাতজনই স্কুলছাত্র

কুমিল্লায় ট্রাক উল্টে নিহত ১৩

ছবি : সংগৃহীত

দুর্ঘটনা

চৌদ্দগ্রাম ট্র্যাজেডি

নিহত ১৩ শ্রমিকের সাতজনই স্কুলছাত্র

  • নীলফামারী ও চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ইটভাঁটায় কয়লাবাহী ট্রাক উল্টে নিহত ১৩ ঘুমন্ত শ্রমিকের মধ্যে সাতজনই নীলফামারীর দুটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী; যারা পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে দিনমজুরি করে পরিবারকে সহযোগিতা করত। গত শুক্রবার নিহত সবার বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ী ও তার পাশের নিজপাড়া গ্রামে।

জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিহতদের মধ্যে পাঁচজন তার বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। তারা হলো- নিজপাড়া গ্রামের মানিক চন্দ্র রায়ের ছেলে তরুণ চন্দ্র রায় (১৫), রাম প্রসাদ চন্দ্রের ছেলে বিপ্লব কুমার রায় (১৫), অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে প্রশান্ত রায় দীপু (১৫), জগদীশ চন্দ্র রায়ের ছেলে মৃণাল চন্দ্র রায় (১৬) ও জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. সেলিম (১৫)। অন্য দুজন শিমুলবাড়ী এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক জ্যোতিশ চন্দ্র রায়। তারা হলো শিমুলবাড়ী গ্রামের খোকারাম রায়ের ছেলে বিকাশ রায় ও শিমুলবাড়ী গ্রামের অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে মনোরঞ্জন রায়।

তারা লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ও পরিবারকে সহযোগিতার জন্য মাঝেমধ্যে দিনমজুরি করত বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। সেলিমের মেজো ভাই শাহাজাদ বলেন, তাদের বাবা রিকশা চালান। তার আয়ে কোনোমতে চলে সংসার। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়জন বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা। আমি আর ছোট ভাই সেলিম বাবা-মায়ের সংসারে। পরিবারে অভাব-অনটনের মধ্যে আমরা দুই ভাই লেখাপড়া করি। বাবা সংসারের খরচ জোগালেও আমরা নিজেদের পড়ালেখার খরচ নিজেরাই জোগাই। কখনো আমি কখনো সেলিম কাজ করে টাকার দরকার হলে। ‘জ্ঞানের আলো বাড়াতে গেলেও তার জীবনের আলো নিভে গেল’ বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এদিকে ওই ১৩ শ্রমিকের নিহতের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায়  দায়ের করা এই মামলায় ট্রাকচালক ও তার হেলপারকে আসামি করা হয়েছে। ১৩ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় গত শুক্রবারই দুটি তদন্ত কমটি গঠন করা হয়েছে। একটি জেলা প্রশাসন ও অপরটি পুলিশ প্রশাসনের। জেলা প্রশাসনের চার সদস্যের কমিটিকে ৭ দিনের এবং পুলিশের ৩ সদস্যের কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটিতে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কায়জার মাহমুদ ফারাবীকে প্রধান করা হয়েছে। আর পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুনকে।

অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩ শ্রমিকের প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়। গতকাল শনিবার সকালে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এ ঘোষণা দেন। 

মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কয়লাবাহী ট্রাক উল্টে নিহত শ্রমিকদের জন্য এক লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।’

নিহতদের পরিবারকে নীলফামারী প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। নীলফামারীর জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, নিহত ১৩ শ্রমিকের পরিবারের জন্য কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ২০ হাজার টাকা করে পাঠিয়েছেন। নীলফামারী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একটি ইটভাঁটার মেসে কয়লাবাহী ট্রাক উল্টে পড়ে ঘুমন্ত ১৩ জন শ্রমিক নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় আরো দুজন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার গোলপাশা ইউনিয়নের করিমপুরের (দোসরী) কাজী অ্যান্ড কোং ইটভাঁটায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, কয়লা আনলোড করার সময় ট্রাকটি পেছনের দিকে যেতেই হঠাৎ উল্টে গিয়ে ভাঁটার লেবার শেডের ঘুমন্ত শ্রমিকদের ওপর পড়ে। এতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই ১২ শ্রমিক নিহত হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় আরো একজন। ওই শেডে ১৫ জন ঘুমাত বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads