আসছে রোজা। এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে চলছে দেশজুড়ে লকডাউন। এই লকডাউন আরো কঠোর হচ্ছে ১৪ এপ্রিল থেকে। আর এই সুযোগটি নিয়েছেন এক শ্রেণির নিত্যপণ্য ও সবজি ব্যবসায়ী। তারা আরো বেশি দামে বিক্রির আশায় অতিরিক্ত পণ্য মজুত করায় অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর কাঁচাবাজার। ফলে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে চাল, খেজুর, আদা, রসুনসহ সব ধরনের সবজির। তবে আগে থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। এভাবে দাম বেড়ে চললেও দেখার কেউ নেই বলে অভিযোগ করলেন নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, পরিবহন বন্ধ না থাকলেও লকডাউনের কিছুটা প্রভাব পড়েছে বাজারে। তাদের মতে স্বাভাবিক সময় ক্রেতারা সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের বাজার করে। কিন্তু রোজা আর লকডাউনের পাশাপাশি গতকাল ছুটির দিন থাকায় অনেকেই পুরো মাসের বাজার করেছেন। চাহিদা বেশি থাকায় তাই দাম বেড়েছে। তবে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তরা পণ্য কিনতে পারলেও বিপাকে পড়েছেন নিন্মমধ্যবিত্ত থেকে নিন্মবিত্তরা। তাদের পক্ষে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাই সম্ভব হচ্ছে না।
মিরপুর-১ নম্বর বাজারে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী নেওয়াজ বিন সাদেকের সাথে। তিনি বলেন, করোনার কারণে গত বছর থেকেই বেতন ৩০ ভাগ কমে গেছে। ঢাকা শহরে ৫ জনের পরিবার নিয়ে বাসাভাড়া মিটিয়ে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি। সংসারের অনেক প্রয়োজন সংকুচিত করে ফেলেছি। তারপরও ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার ওপর আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে রোজা এবং কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে। কিন্তু সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় বাজার করার সামর্থ্যও নেই। গৃহপরিচারিকার কাজ করেন নাজমা বেগম। ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ৪ জনের সংসার। জানালেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে ঢাকায় টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু গ্রামে কাজ না থাকায় সেখানেও ফিরে যাওযার উপায় নেই। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বড়লোকেরা বেশি বেশি জিনিসপত্র কিনে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে তো অতিরিক্ত জিনিস কেনা সম্ভব না। আমরা কী করব!’ গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মিরপুর, যাত্রাবাড়ীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। বেগুনের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। খুচরার পাশাপাশি পাইাকারিতেও বেগুনের দাম ছিল চড়া। মানভেদে লম্বা বেগুনের পাল্লা (৫ কেজি) ১১০ থেকে ১২০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায়। গোল বেগুন পাল্লায় ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে শিম হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। ৫ টাকা বেড়ে পাকা টমেটো ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা। পটোল, বরবটি, বেগুন, ঢ্যাঁড়সের দামও কেজিতে ১০/১৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬০-৭০ টাকা।
কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা সোলায়মান হোসেন বলেন, রোজায় চাহিদা অনুযায়ী কিছু সবজির দাম বেড়েছে, কিন্তু তা খুব বেশি নয়। বাজারে খুচরা সবজির ব্যবসায়ীর পাশাপাশি অনেক খুচরা ক্রেতাও এসেছেন। বেশি দিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়, এমন সবজি পাল্লায় কিনে নিচ্ছেন অনেকে। এখনো সবজির সরবরাহ ভালো রয়েছে। তবে লকডাউন বাড়লে দাম আরো বাড়তে পারে। এই বাজারে কথা হয় তোফাজ্জল হোসেন নামে এক সরকারি কর্মকর্তার সাথে। তিনি জানান, খুচরা বাজারে সব্জিসহ সব পণ্যের দামই বেশি। তাই পাইকারি বাজার থেকে এমন সব পণ্য কিনছেন যা দীর্ঘ সময় রেখে খাওয়া যায়। এতে দামও কম পাওয়া যায়।
এদিকে রোজার প্রয়োজীয় পণ্য ছোলার দাম অপরিবর্তিত থাকলেও খেজুরসহ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। গতকাল ছোলা বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। আমদানি করা মাঝারি আকারের মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। দেশি মসুর ডাল আগের মতোই ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে দেশি রসুনের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা হয়েছে, তবে আমদানি করা রসুন আগের মতোই ১১৫ থেকে ১২০ টাকাতেই রয়েছে। দাম বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকার দেশি আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং ৭০ থেকে ১১০ টাকার আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। প্যাকেট আটার কেজি ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। চিনি ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। ভোজ্যতেলের দাম না বাড়লেও তা আগে থেকেই বেশ চড়া। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১২৫ থেকে ১৩০, খোলা পাম অয়েল ১১০ থেকে ১১৫, সয়াবিনের এক লিটারের বোতল ১৪০, পাঁচ লিটারের বোতল ৬৪০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সব ধরনের খেজুরের দাম কেজিতে ২০ টাকা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবমতে, গত সপ্তাহে সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
এদিকে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে লেবুর। ছোট লেবু প্রতি হালি ৪০ টাকা, মাঝরিগুলো ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং বড় লেবু ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
তবে আগের চেয়ে কমেছে পেঁয়াজের দাম। পাইকারিতে প্রতি পাল্লায় ১০ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ ১৫৫ থেকে ১৬০, ভারত থেকে আমদানির পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুরচায় ৩ থেকে ৪ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং ভারতের পেঁয়াজ ৩২ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর পাল্লা পাইককারিতে ৯০ থেকে ৯৫ এবং খুচরায় ২০ থেকে ২২ টাকা।
মুরগির দামের বিষয়ে মিরপুরের ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫০ টাকা থাকলেও শুক্রবার পাইকারিতে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৬০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। লেয়ার মুরগির ডিম ডজন বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়, হালি ৩২ থেকে ৩৩ টাকা।





