পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগের মুখে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটের ফলাফল নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় যে শিক্ষার্থী ফেল করেছিলেন তিনি রেকর্ড নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন ‘ঘ’ ইউনিটে। এতে সেই শিক্ষার্থীর প্রথম হওয়ার যৌক্তিকতা এবং ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা পড়েছে সমালোচনার মুখে। এই অবস্থায় ওই পরীক্ষার্থীর ফলাফল যাচাই করে দেখার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রশ্ন ফাঁস ও ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত মঙ্গলবার ফল প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই ইউনিটের বাণিজ্য ও বিজ্ঞান শাখায় প্রথম হওয়া শিক্ষার্থী নিজ নিজ ইউনিটের পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। ফলাফলে দেখা গেছে, বাণিজ্য শাখার এক শিক্ষার্থী ‘ঘ’ ইউনিটে ১২০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ১১৪ দশমিক ৩০। যেখানে বাংলায় ৩০ এর মধ্যে ৩০, ইংরেজিতে ৩০ এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৩০, সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ২৮ দশমিক ৩০ এবং আন্তর্জাতিকে ২৫ দশমিক ৫০ পেয়েছেন। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী নিজের ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষায় সব মিলিয়ে পেয়েছিলেন ৩৪ দশমিক ৩২ নম্বর। যার মধ্যে বাংলায় ১০ দশমিক ৮, ইংরেজিতে ২ দশমিক ৪০, হিসাববিজ্ঞানে ৫ দশমিক ২৮, ব্যবসায় নীতিতে ৬ দশমিক ৭২ এব ফিন্যান্স বিষয়ে ৯ দশমিক ৮৪ নম্বর পেয়েছিলেন। একই অবস্থা ইউনিটটির বিজ্ঞান শাখায় প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীরও। ওই শিক্ষার্থী ‘ঘ’ ইউনিটে ১১০ নম্বর পেয়ে প্রথম হলেও নিজের ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায় পাসই করতে পারেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, কেবল সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ওই দুই শিক্ষার্থীই নন, ক, খ এবং গ ইউনিটে ফেল করেছেন এমন অন্তত ৮০ শিক্ষার্থী ‘ঘ’ ইউনিটের মেধাতালিকার প্রথম ১০০ জনের মধ্যে আছেন।
ফলাফল বিশ্লেষণে আরো দেখা গেছে, ইউনিটটিতে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাসের হার প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৬ সালে যেখানে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮৩ এবং ২০১৭ সালে ১৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ সেখানে চলতি বছর তা একলাফে ২৬ দশমিক ২১ শতাংশে উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে ফল প্রকাশের দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কারো মেধা নিয়ে আমরা প্রশ্ন করতে পারি না। তবে কাউকে সন্দেহ হলে ডিন তাদের ব্যাপারে পুনরায় যাচাই করতে পারেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, আমরা তাকে (প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীকে) ভর্তি করাইনি। ফল প্রকাশ হয়েছে মাত্র। তার বিষয়ে তদন্ত ও যাচাই শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এ ঘটনা পুরো ফলে কোনো প্রভাব রাখবে না বলেও ইঙ্গিত দেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন। তিনি বলেন, এবার যেটা হয়েছে সেটা প্রশ্নফাঁস নয়, ডিজিটাল জালিয়াতি। যারাই অভিযুক্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান হবে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।