নিজের জন্য বাঁচুন, নিজেকে ভালোবাসুন

প্রতীকী ছবি

মুক্তমত

নিজের জন্য বাঁচুন, নিজেকে ভালোবাসুন

  • সাঈদ চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯

প্রতিটি মানুষেরই জীবন-সংসারে কিছু না কিছু অশান্তি ও দুঃখবোধ থাকে। নিজে প্রতিষ্ঠা না পাওয়ায় যন্ত্রণার হার বাড়ে হূদয়ে অনেক বেশি। ব্যবসায় সফলতার চেয়ে লোকসানের হার ভাবনার কারণ! হতে পারে এমন যে, আপনাকে ছেড়ে প্রিয় মানুষগুলো চলে যাচ্ছে বা অবহেলা করছে! ভেবে থাকতে পারেন আপনিই চিরদুঃখী কোনো মানুষ! উপরের প্রতিটি কারণ আপনাকে এমন চিন্তায় মগ্ন করে দিতে পারে অথবা এই চিন্তাগুলো আপনাকে জীবন সম্পর্কে হতাশ করে দিতে পারে!

সামান্য কারণগুলোতেও কেউ কেউ খুব বেশি অসহায় মনে করে নিজেদের। নারীদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি আরো বেশি। বর্তমানে এমনও দেখা যায় স্বামীদের সামান্য সময় না দেওয়ার বিষয়গুলো নিয়েও ডিভোর্স হচ্ছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে মানিয়ে চলতে অপারগতার দোহাই দিয়ে ডিভোর্স হচ্ছে! অবাক করার বিষয় হলো, আমাদের হাতের নাগালে যত দ্রুত বিনোদন এসে পৌঁছে যাচ্ছে, যতই আমরা তথাকথিত সভ্যতার দিকে যাচ্ছি, ততই আমরা এত বেশি অস্থির হয়ে পড়ছি যে অল্প সামান্য কোনো ব্যথাও আমাদের তুলনা করতে শিক্ষা দিচ্ছে! আরো বিস্ময়কর বিষয় হলো, প্রতিটি মানুষই নিজেদের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠিত অবস্থায় দেখার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে। একদিকে আশা ও স্বপ্নকে বড় করে দেখার কাজে আমরা যেমন সফল হয়েছি, তেমনি আবার বিস্ময়করভাবে হতাশার দিকে গমন করেছি। দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবন ও জীবিকার তাগিদ নিতে গিয়ে আত্মহত্যা করছে। এমন মানসিক রোগ ঘিরে ধরছে অনেক মানুষকেই। আক্ষরিক অর্থে হয়তো সামাজিক এই হতাশার প্রভাবগুলো এতটা পড়ে না কিন্তু সবচেয়ে বড় সত্য হলো মানুষ যখন একাকী, হতাশ হতে থাকে- তখন এর প্রভাব পড়ে তার আশপাশের মানুষগুলোর ওপর ।

সেদিন একজন গৃহিণীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি সবসময় খুব মন খারাপ করে থাকেন। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম- আচ্ছা, আপনার তো সবই আছে তবে কেন এমন বিষণ্নতা? জবাবে তিনি বললেন, তার সন্তানের পড়াশোনায় তিনি সন্তুষ্ট নন। আরো অনেক বেশি পড়াশোনা চান তিনি তার সন্তানের কাছে। এমনকি ক্লাসে ফার্স্ট হতেই হবে, না হলেই মনে হচ্ছে তিনি জীবনে ব্যর্থ! বিষয়টি আমি তাকে চিন্তা করতে বলি। বললাম, আপনার সন্তান ক্লাসে প্রথম হলে আপনার কী কী লাভ আগে চিন্তা করুন। আরেকটা চিন্তা করুন, আপনার সন্তানকে আপনি সফলভাবে শিক্ষাজীবন শেষ করাতে পারলে কী লাভ। তিনি বললেন, ভালো না করলে শেষ করে লাভ কী? আমি বললাম, হ্যাঁ, এখানেই মূল সমস্যা। আমরা যতটা নিজেদের নিয়ে একসময় ভাবতে পারিনি, এখন সন্তানদের নিয়ে তা-ই ভাবি। তাতে আবার হতাশ হই। দেখুন, একজন নারী একেবারে সম্পূর্ণ মর্মাহত হয়ে আছে শুধু এই কারণে। তার মানে তিনি পজিটিভভাবে কিছুই নিতে পারছেন না। তিনি একদিন এই হতাশা থেকে আত্মহত্যাও করে ফেলতে পারেন অথবা হার্টফেল সমস্যায়ও পড়তে পারেন!

মানুষের মাঝে হতাশা বাড়ছে। কারণ দিনশেষে জীবনবোধ নিয়ে কেউ তৃপ্ত নন। এভাবে চললে মানসিক অসুস্থতা বাড়বে, তৈরি হবে অক্ষমতা, অদক্ষতা। ঘরে ঘরে গিয়ে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। নিজেদের মধ্যে নিজেদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনা এবং সৃজনশীলতা বিষয়ক আচরণ বাড়াতে হবে। পৃথিবীতে আপনি বেঁচে আছেন এটাই বড় সত্য। নিজের জন্য বাঁচুন, নিজেকে ভালোবাসুন। উপভোগ করুন প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান। উদযাপন করুন নিজের শরীর ও মনের প্রতিটি আক্ষরিক এবং ব্যবহারিক ছন্দ ও তালকে। নিজেকে হাসির মানুষ হিসেবে ছড়িয়ে দিন প্রতিটি ক্ষণে। ভাবতে শিখুন হতাশ হলে বা দুঃখ পেলে তা উতরে ওঠার পরিকল্পনা নিয়ে। প্রকৃতি আপনাকে বোধের দেয়ালে ঝরনাধারার আনন্দ দেবে।

 

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads