মুন্সী মুহাম্মদ জুয়েল
একবার এক বাবা তার ছেলেকে তাদের পারিবারিক লাইব্রেরিতে নিয়ে (আঙুল দিয়ে দেখিয়ে) বললেন, এখানে যত বই আছে সব তুমি পড়বে শুধু এই ড্রয়ারের বইগুলো বাদে। কিছুদিন পর ছেলেটি বাবার কাছে গিয়ে বলল, বাবা তুমি আমাকে ড্রয়ারের সেই বই পড়তে নিষেধ করলে কেন? আমি লাইব্রেরির সব বই পড়েছি, সাথে ড্রয়ারের বইগুলোও। আমার কাছে মনে হলো, পুরো লাইব্রেরির মধ্যে কেবল সেই ড্রয়ারের বইগুলোই আমার জীবনে কাজে আসবে। তখন বাবা একটি হাসি দিয়ে বললেন, আমি চেয়েছিলাম যাতে তুমি অবশ্যই সেই বইগুলো পড়ো। আমি যদি সরাসরি বলতাম যে, তুমি এই বইগুলো পড়ো তাহলে তুমি আমার কথার ততটা গুরুত্ব দিতে না। বরঞ্চ উপহাস করে উড়িয়ে দিতে। কিন্তু আমি যখন তোমাকে বইগুলো পড়তে নিষেধ করেছি তখন এই বইগুলোর প্রতি তোমার কৌতূহলটা আরো বেড়ে গেছে এবং আমিই এটাই চাচ্ছিলাম।
হিউম্যান সাইকোলজি বলে, মানুষকে যে কাজগুলো করতে নিষেধ করা হয় তার সেই কাজের প্রতি আগ্রহ এবং কৌতূহল আরো বেড়ে যায়। মানুষ তখন নিষিদ্ধ কাজগুলোই বেশি করতে পছন্দ করে। বলা যেতে পারে, তারা ‘না’ বোধককে ‘হ্যাঁ’ বোধক মনে করে। আমরা প্রায় সময়ই বলে থাকি, মাদককে না বলুন, পর্নোগ্রাফিকে না বলুন, জঙ্গিবাদকে না বলুন ইত্যাদি। আপেক্ষিক দিক থেকে আমরা ‘না’ বলতে ‘না’কেই বোঝাই। কিন্তু সমাজে কিছু লোক আছে যাদের কিছু করতে নিষেধ করলে তারা সেই কাজটি আরো বেশি করে থাকে। কারণ সেই ‘না’ বলার মধ্যে তারা কৌতূহল খুঁজে পায়। সেই কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। যার ফলে তারা সেই কাজের দিকে আরো বেশি করে ধাবিত হয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বা অগোচরেই তারা বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে লিপ্ত হয়। বলা যায়, সামাজিক কিছু অপরাধ আমাদের বহুল প্রচলিত ‘না’ বোধক শব্দের কারণেও হয়ে থাকে।
আমরা সেই ‘না’ বোধক শব্দের বদৌলতে ‘হ্যাঁ’ বোধক শব্দের প্রচলন করতে পারি। যেমন— ‘মাদককে না বলুন’, এর বদৌলতে বলতে পারি ‘মাদক মৃত্যু ঘটায়’; ‘পর্নোগ্রাফিকে না বলুন’, এর বদলে বলতে পারি ‘পর্নোগ্রাফি মানবতার জন্য হুমকিস্বরূপ’ ইত্যাদি। হিউম্যান সাইকোলজির এই অংশটাকে বলা হয়, ‘লস এভারশন’ অর্থাৎ আমাদের ব্রেইন ‘লস বা ক্ষতি’কে কখনো গ্রহণ করতে চায় না। যদি বলা হয় যে, ‘মাদক মৃত্যু ঘটায়’, এখানে ব্রেইন যখন দেখছে তার লস হচ্ছে তখন সে ঐ কাজ করতে আর উৎসাহিত বা কৌতূহলী হবে না। হিউম্যান ব্রেইন লস বা ক্ষতিকে সহজে মেনে নিতে পারে না। তাই ব্রেইন যেদিকে লস বা ক্ষতির আভাস দেখে, সেদিকে আর এগোতে চায় না। এটাই হচ্ছে হিউম্যান ব্রেইনের খেলা।
এর ফলে হয়তো পুরোপুরিভাবে অপরাধকে ক্ষান্ত করা যাবে না। তবে কিছুটা হলেও শমন করা যাবে। আর মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের নেগেটিভও কাজ করবে না। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ‘না’ বোধক শব্দের ব্যবহার না করাই উত্তম এবং মনোবিজ্ঞানীরাও তাই বলেন।
লেখক : শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট অব ফিলোসফি, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম