নায়িকা সংবাদ

সানাই মাহবুব

ছবি : ইন্টারনেট

ঢালিউড

নায়িকা সংবাদ

  • সোহেল অটল
  • প্রকাশিত ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট কী? সহজ করে বললে- স্তনের আকার বাড়ানোর জন্য যে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়, সেটাই ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট। চিকিৎসাবিদ্যায় এটা একটা রোগ। কোনো নারী যখন স্তনের আকার নিয়ে অস্বস্তিতে থাকেন, তখন ব্রেস্ট ইমপ্লান্টের কথা চিন্তা করা হয়। গত শতাব্দীর শেষের দিকে ব্রেস্ট ইমপ্লান্টের চল শুরু হয় পশ্চিমা দেশে। ক্রমে এটা বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পশ্চিমা দেশে ফোঁড়া কাটার মতোই সহজভাবে দেখা হয় ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট সার্জারিকে।

আমাদের মতো দেশে ঘটা করে ব্রেস্ট ইমপ্লান্টের ব্যাপারটা সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে বেমানান। চুপে চুপে কেউ কেউ করে থাকতে পারেন। যেহেতু এটাকে রোগ হিসেবে দেখা হয়, তার জন্য চিকিৎসাও প্রয়োজন। সে চিকিৎসা করার অধিকার যেকোনো নারীরই রয়েছে। তবে, ওই যে ঘটা করে ঘোষণা দেওয়ার মতো ঘটনা এদেশে নেই।

ভুল বলা হলো। এতদিন ছিল না, এখন অন্তত একটা উদাহরণ আছে। মডেল-অভিনেত্রী সানাই মাহবুব। নিজের ব্রেস্ট ইমপ্লান্টের খবরটি তিনি অন্যকে জানাতে এতটাই আগ্রহী হয়ে ওঠেন যে তা রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে পড়ে। নিজের স্তনের আকার বাড়ানোর খবর ভিডিওসহ নিজেই দেশবাসীকে জানাতে শুরু করেন এই সাহসী নারী। ফলে তার সদ্য প্রসারিত বিশাল ব্যাপ্তির স্তনের নিচে চাপা পড়ে যায় মডেল কিংবা অভিনেত্রী পরিচয়টি। সানাই পরিচিতি পেয়ে যান স্তনসর্বস্ব নারী হিসেবে।

এই নতুন পরিচয়টি নিয়েও সানাই বিব্রত হননি কখনো। ফেসবুক লাইভে এসে তার অস্বাভাবিক আকৃতির স্তন প্রদর্শনী শুরু করেন ফলোয়ারদের। ফলোয়ার? তাও বা কীভাবে বলি? যারা সানাইয়ের ফেসবুক লাইভের নিয়মিত দর্শক তাদের বেশিরভাগই বিকৃত যৌনতা মাথায় নিয়ে ঘোরে। অন্তত সানাইয়ের লাইভে দর্শকের মন্তব্য দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার বোঝা যায়।

বিকৃত যৌনতা মাথায় নিয়ে ঘোরে, এমন লোকের সংখ্যা এ দেশে কত? এর সঠিক কোনো জরিপ নেই। তবে নানান বাস্তবতায় এর একটা পরিসংখ্যান অনুমান করা যায়। এই দেশের বেশিরভাগ মানুষই বিকৃত যৌনতার রোগ মাথায় নিয়ে ঘোরে। পুরুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সহজে প্রকাশ হয়ে পড়ে। নারীর ক্ষেত্রে প্রকাশ হয় না সহজে।

ঠিক এ কারণেই ব্রেস্ট ইমপ্লান্টের মতো সাধারণ সার্জারি করলে দেশজুড়ে হই হই পড়ে যায়। যিনি সার্জারি করেন, তিনিও নিজেকে অনন্য ভাবতে শুরু করেন। যেটা ভাবছেন সানাই মাহবুব।

সানাই মাহবুব মডেল ও অভিনেত্রী। তিনি কোথায় অভিনয় করেছেন? মডেল হিসেবে তার কাজ কী? কেউ জানে না। হয়তো তিনি সত্যিই অভিনয় করেছেন। কিংবা মডেলিংও করে থাকেন। কিন্তু এক ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট নিয়ে তিনি এতটাই আলোচিত যে, বাকি সব চাপা পড়ে আছে। অথচ একজন অভিনেত্রীর উচিত তার অভিনয়ে মনোনিবেশ করা।

আলোচিত সানাই নতুন করে আলোচনায় এসেছেন বিয়ের খবরে। যেকোনো মানুষের জীবনেই বিয়ে অতি স্বাভাবিক এবং আনন্দের খবর। সানাইয়ের সেই আনন্দের খবরেও দেশজুড়ে বিতর্ক। সেই বিতর্কের সূত্রপাত তিনি নিজেই করেছেন। বিয়ের খবরটি জানাতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন লুকোচুরির। কার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। বরের নামটি না জানিয়ে বলেছেন- তিনি আওয়ামী লীগ নেতা। গত সংসদে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব তথ্য পেয়ে সাধারণেরা ‘যার-তার’ সঙ্গে সানাইয়ের নাম জুড়ে দিচ্ছেন। নতুন করে বিব্রত হচ্ছেন গুণিজনেরা।

বিয়ের খবর প্রকাশ করার অধিকার যেমন সবার আছে, তেমনি নিজের হবু বরের নাম গোপন রাখার অধিকারও সবার আছে। কিন্তু তাতেও মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। মানুষ জানতে চায়- এই বিশালবক্ষা রমণীর পাশাপাশি চলার জন্য কোন পুরুষটি ভালোবাসা নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছেন?

যাই হোক, সানাইকে নিয়ে আলোচনা আপাতত শেষ হবে না। সানাইদের নিয়ে এই দেশে আলোচনা এর আগেও হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বল্পবসনা হয়ে যে-ই উপস্থিত হয়েছে, তরুণ তথা পুরুষেরা তার ওপরই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। তারা কখনো নিজেদের সামাজিক, ধর্মীয় রীতিকে তোয়াক্কা করেনি। অথচ এই তোয়াক্কাটুকু করা বড় প্রয়োজন। সানাইদের ভাইরাল করে দেশের সংস্কৃতির খুব বড় কোনো উপকার হয়নি, হবেও না। বরং এটাকে অপসংস্কৃতি মনে করে পাশ কাটিয়ে যেতে পারলেই আখেরে লাভ হবে।

অন্যদিকে সানাইদের মতো ‘ভাইরালদের’ মনে করার সময় হয়েছে, এসব করে খুব বেশি এগোনো যায় না। সাময়িক আলোচনা তৈরি করা যায়। যতটা ভালোবাসা পাওয়ার সুযোগ থাকে, তাও হারাতে হয়। নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার নামে উল্টো পেছনেই ফেলে রাখতে হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads