নারী নেতৃত্বে অনুসরণীয় সুরাইয়া আক্তার শিউলী

সুরাইয়া আক্তার শিউলী

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

নারী নেতৃত্বে অনুসরণীয় সুরাইয়া আক্তার শিউলী

  • প্রকাশিত ৪ নভেম্বর, ২০১৮

মো. রহমত উল্লাহ পাটোয়ারী, রামগঞ্জ প্রতিনিধি

 

বাংলাদেশ। বিশ্বের মানচিত্রে একটি বিরল দেশ, যেখানে দেশের প্রধান মহিলা, বিরোধী দলের নেতা মহিলা এবং সংসদের স্পিকারও মহিলা। এভাবে সমাজ, দেশ, রাজনীতি, উন্নয়ন সব ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে নারীরা সব প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। নারীদের এ অগ্রযাত্রায় মফস্বল পর্যায়ে যারা নিজের কর্মসাধনায় অসামান্য অবদান রাখছেন তাদের একজন লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সুরাইয়া আক্তার শিউলী। তিনি নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও জাগরণে অগ্রদূত হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছেন। রামগঞ্জে নারীদের উন্নয়নে ‘কান্তা নারী উন্নয়ন সংস্থা’ ও ‘রামগঞ্জ নারী উন্নয়ন ফোরাম’-এ দুটি সামাজিক সংগঠন রয়েছে। আর তিনিই একান্ত প্রচেষ্টায় সংগঠন দুটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নারী নির্যাতন, যৌতুক ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে এবং নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্যোক্তা তৈরি করা, বিভিন্ন কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্প প্রশিক্ষণসহ নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলে সামাজিক উন্নয়নে এ সংগঠনগুলোর ব্যাপক ভূমিকা ও সুখ্যাতি রয়েছে। শুধু তাই নয়, অধ্যক্ষ সুরাইয়া আক্তার শিউলী একাধারে একজন রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষিকা ও সুবক্তা। সংগ্রামী এ নারী রাজনৈতিক জীবনেও সফল। বর্তমানে তিনি রামগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকে নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করেন। ফলে ভাটরা উচ্চ বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মহিলা সম্পাদক ও রামগঞ্জ সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের মহিলা সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি রামগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির সদস্য, মানবাধিকার সংস্থা রামগঞ্জ শাখার সভাপতি, জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি, লক্ষ্মীপুর জেলা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকার বনায়ন প্রকল্পের উপদেষ্টা সভাপতি, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন রামগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি, রামগঞ্জ উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং সেলের উপদেষ্টা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সদস্য, রামগঞ্জ উপজেলা সমাজ কল্যাণ পরিষদের অর্থ কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন নিবেদিতপ্রাণ।

সুরাইয়া আক্তার শিউলীর জন্ম রামগঞ্জ উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের নান্দিয়রা গ্রামে ১৯৭৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। পিতা সাখাওয়াত হোসেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, মাতা রহিমা বেগম। স্বামী আবুল কাশেম মাস্টার উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি। সংসার জীবনে তিনি এক মেয়ে ও দুই ছেলের জননী। বড় ছেলে স্নাতক পাস করে ব্যবসা করছেন, ছোট ছেলে বিএফ শাহীন কলেজে এইচএসসিতে ও মেয়ে মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত। তিনি রামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সুরাইয়া আক্তার শিউলীকে রাজনীতি করতে গিয়ে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, কিন্তু সব বাধা উপেক্ষা করে তিনি অর্জন করেছেন জনসাধারণের আস্থা ও ভালোবাসা। তাই তিনি ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন। তার এসব কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য মাদার তেরেসা পদক, উদীয়মান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত সন্মাননা পদক, কবি নজরুল গোল্ড অ্যাডওয়ার্ডসহ বহু সম্মাননা পদক লাভ করেন।

নারী শিক্ষা ও দেশের উন্নয়নে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে অধ্যক্ষ সুরাইয়া আক্তার শিউলী বলেন, আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব। আজ আমাদের দেশে নারীরা শিক্ষায়, রাজনীতিতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, ফলে দেশও উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে চলছে। কিন্তু আজো ক্ষেত্র বিশেষে নারীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। আজো নারীকে যৌতুকের বলি হিসেবে জীবন দিতে হয়, নারীকেই সংবাদপত্রের পাতায় ঠাঁই পেতে হয় ধর্ষিতা হিসেবে। বাংলাদেশের অর্ধেক নারী, তাদের রাজনৈতিক সচেতন, নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন, কর্মক্ষেত্র তৈরি, চাকরি ইত্যাদি এসব ক্ষেত্রে নিয়মিত কাউন্সেলিং ও কর্মশালার আয়োজন করতে হবে। তাদের সব ক্ষেত্রে সমান সুযোগ দিতে হবে। তাহলে দেশকে দ্রুত উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads