নারীর শান্তির ঠিকানা ইসলাম

নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার দিয়ে সম্মানের সিংহাসনে বসিয়েছে ইসলাম

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

নারীর শান্তির ঠিকানা ইসলাম

  • প্রকাশিত ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মরিয়ম আক্তার

নারীকে তার অধিকার, মর্যাদা ও প্রাপ্য সম্পর্কে সচেতন করে  তোলার জন্য ১৯১৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’। তার পরেও বাস্তবায়ন হয়নি পূর্ণ অধিকার। অধিকারের নামে আজো সর্বত্র  শোনা যায় নারী অধিকারের কথা। অথচ ইসলাম আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে নারী অধিকারের সুন্দর রূপরেখা প্রণয়ন করে দিয়েছে। কখনো মমতাময়ী মা, বিশ্বস্ত স্ত্রী, স্নেহময়ী বোন বা চক্ষুশীতলকারী কন্যার ভূমিকায়। ইসলাম নারীকে দিয়েছে তার প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার। দিয়েছে সব ভালো কাজের অনুপ্রেরণা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনদের মধ্য থেকে যে ভালো কাজ করবে- হোক সে পুরুষ কিংবা নারী, আমি তাকে অবশ্যই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করব।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৭) অগ্রসরমাণ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারী এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে। আজ নারীর পদচারণা মহাকাশ থেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, প্রশাসন সব ক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ নজরকাড়ার মতো। কিন্তু যে নারীর চরণতলে সন্তানের বেহেশত, যে নারীর কোল শিশুর  শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান, যাদের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছে পৃথিবীর সব নবী, রসুল, মহান ব্যক্তি এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা, আজ সেই নারী হচ্ছে সমাজে নির্যাতিত, সার্বিক মর্যাদা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত।

নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার দিয়ে সম্মানের সিংহাসনে বসিয়েছে ইসলাম। জাহিলিয়াতের ঘোর অন্ধকার অমানিশায় নারীরা যখন অধিকার হারিয়ে চরম অবহেলা আর নির্যাতন নিপীড়নের  শিকার হচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে ইসলাম তাদের রক্ষা করল যাবতীয় অত্যাচার থেকে। শুধু তা-ই নয়, বরং তৎকালীন আরবে যখন কন্যাশিশুকে জীবিত কবর দেওয়া হতো, তখন পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা দিলেন, ‘জীবিত কবর দেওয়া মেয়েকে জিজ্ঞেস করা হবে কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। (সুরা : তাকভির, আয়াত : ৮-৯)

বিভিন্ন ধর্মে নারীকে পাপমূর্তি, মোক্ষলাভের অন্তরায়, মানবজাতির বাইরে প্রভৃতি আখ্যায় আখ্যায়িত করা হয়েছে; কিন্তু ইসলাম নারীকে কতটা মর্যাদা দিয়েছে তা আল-কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়, ‘নারীদের জন্যও ঠিক তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন পুরুষদের অধিকার আছে তাদের ওপর।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২৮) হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘পৃথিবীর সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী সম্পদ। এ সম্পদের মধ্যে সতী-সাধ্বী নারী সর্বোত্তম সম্পদ (মেশকাত)। আর কন্যাসন্তানের মর্যাদা সম্পর্কে রসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘সন্তানের মধ্য থেকে উত্তম হলো কন্যাসন্তান।’ (আল-হাদিস)

বলা হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন হলে নারী নির্যাতন বন্ধ হবে। আসলে কি তা-ই? বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার সবাই নারী। এ ছাড়া রয়েছে একাধিক নারী প্রতিমন্ত্রী। ক্ষমতায়নের এ স্বর্ণযুগেও নারী পেয়েছে কি তার অধিকার, কমেছে কি নারী নির্যাতন? শুধু নারী ক্ষমতায়ন হলেই যদি নারী নিরাপত্তা পাবে, তাহলে তো এখন বাংলাদেশে নারী নির্যাতন শূন্যের কোটায় থাকার কথা ছিল। অথচ বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নারী নির্যাতনের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮২৫টি; যা ২০১৭ সালের অক্টোবরে ৫৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ১৯৬টি। এর মধ্যে ৬৮ ভাগ ঘটনা নথিভুক্তই হয়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মোট ৩০৫টি পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২০৭ জন নারীকে স্বামী হত্যা করে। নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে ৩৯ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে শুধু নারী নির্যাতনের কারণে প্রতি বছর ১৪ হাজার ৩৫৮ কোটি  টাকা খরচ হয়, যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। তথ্য : বাংলাদেশ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সব ধরনের নির্যাতনকে ছাড়িয়ে গেছে ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী নিষ্ঠুরতার ঘটনাগুলো। শুধু রিপোর্টেড ধর্ষণের সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৭-এরও বেশি। শুধু তা-ই নয়, শিশু ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পরে হত্যার ঘটনাও ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি  থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩৯৯ শিশুকে ধর্ষণ করা হয়, যাদের মধ্যে ৫৮ শিশু হয়েছে গণধর্ষণের শিকার। এদের মধ্যে ৩৭ জন প্রতিবন্ধী নারী।

কিন্তু আজ অধিকারের নামে অপশক্তির অপপ্রচারে নারীসমাজ ধাবিত হচ্ছে উচ্ছৃঙ্খল প্রাক-ইসলামী যুগের দিকে। অথচ  ইসলাম নারীকে যে অধিকার দিয়েছে কন্যা-স্ত্রী-মা হিসেবে, সে সম্পর্কে অধিকাংশ নারীই জানে না। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই আজ নারীসমাজ অত্যাচারিত নির্যাতিত নিষ্পেষিত হচ্ছে এবং তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একমাত্র ইসলামী জীবনাদর্শের যথাযথ অনুশীলন ও অনুকরণই পারে নারীকে পৌঁছে দিতে তার প্রকৃত শান্তির ঠিকানায়।

লেখিকা : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা   বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads