জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী কোনো পুকুর, জলাশয়, খাল, লেক ভরাট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও পুকুর-জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ। অভিযোগ উঠেছে, নাটোর শহরের সরকারি রানীভবানী মহিলা কলেজের পেছনে এ আইন মানা হচ্ছে না। শহরের কাপুড়িয়াপুট্টির গোলাম আজম নামে এক ব্যক্তি জলাশয় ভরাট করে চারতলা ভবন নির্মাণ করছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শহরের বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ। জলাশয়টি ভরাট না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সমপ্রতি জেলা প্রশাসক এবং নাটোর পৌর কতৃপক্ষের প্রতি দাবি তোলেন তারা। এদিকে নাটোর জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় গত সোমবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ওই জায়গার ওপর ভরাট কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। কিন্ত গতকাল মঙ্গলবার সকালে আবারো জলাশয় ভরাট কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে এ রিপোর্ট সংগ্রহ করতে গেলে দৈনিক বাংলাদেশের খবরের নাটোর প্রতিনিধি মোহাম্মদ সুফি সান্টুর ওপর চড়াও হয় এবং মামলা করারও হুমকি দেয় শহরের কাপুড়িয়াপুট্টির গোলাম আজম ও তার ছেলে।
জানা গেছে, শহরের কাপুড়িয়াপট্টির বাসিন্দা গোলাম আজম ০.৯১২ একর ডোবা জমি সরকারি রানীভবানী মহিলা কলেজের পেছনে অবস্থিত। জলাশয়টি সারা বছর পানিভর্তি থাকে এবং এটি শহরের নীচা বাজার, চৌধুরী বাড়ি থেকে শুরু করে ছায়াবানী সিনেমা হলের দিক দিয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশ দিয়ে এসে ভূষিখালি জোলার সঙ্গে মিলিত হয়ে নারদ নদে সারা বছর পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। এড়ারা জলাধার দিয়ে আশপাশে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস ওইখান থেকে পানি ব্যবহার করে আগুন নেভাতে সহায়তা পেত। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, ডোবাটি ভরাট করে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নির্মাণ কাজের জন্য শুরু করা হয়েছে জলাশয়টি ভরাটকরণ।
অনুসন্ধান জানা গেছে, জমিদারি প্রথা চলাকালে শহরের চৌধুরী বাড়ির আব্দুস ছালাম খাঁন চৌধুরী ১৪ শতক ১২ লিংক পুকুর জমিদার আনান্দ রায় নারায়ণের কাছ থেকে কুড়ি টাকায় পত্তন নেন। পরে ২০০২ সালে আব্দুস ছালাম খাঁন চৌধুরীর ওয়ারিশগণের কাছ থেকে ক্রয় করেন দাবিকৃত ভূমির মালিক গোলাম আজম। এরপরে ২০০৪ সালে ০.৯১২ একর জমি খাজনা খারিজ করেও ফেলেন তিনি। এদিকে শহরের পানি নিষ্কাশনের চার ফিট ট্রেনেজ ব্যবস্থা রেখে ওই জলাশয়ে ওপর চারতলা আবাসিক ভবন করার লক্ষ্যে পূর্ব-পশ্চিম বাহু বরাবর উত্তর বাহু ২৭২.৫০ বর্গ ফুট জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে গত ১৬ মার্চ নাটোর পৌরসভার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় গোলাম আজম ও রুজিনা খাতুন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা এক আদেশে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জনগণের আশ্রয়স্থল রক্ষা ও অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করতে কোনো অবস্থায় খাল-বিল, পুকুর-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করা যাবে না এবং এর গতিপথ পরিবর্তন করা যাবে না। তবে কোনো দপ্তর যদি সরকারি কাজে নিজস্ব পুকুর ভরাট করতে চায়, সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পুকুর ভরাটের একটি প্রস্তাব পাঠাতে হবে।
এদিকে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যে কোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। এছাড়া জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারামতে, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।
গোলাম আজম বলেন, এটি আমার সম্পত্তি। নিয়ম মেনেই ভরাট করছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌরসভার নামে পাঁচ ফুট জায়গা দেওয়া হয়েছে। যেখান দিয়ে পানি চলাচল করতে পারবে।
এবিষয়ে নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে এবং ভূমির শ্রেণির তথ্য গোপন করে একটা প্ল্যান করে নেন এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে বিষয়টি জানার পর ওই প্ল্যান নোটিশের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ বলেন, ইতোপূর্বে জলাশয় ভরাট কাজ বন্ধ করার র্নিদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা অমান্য করে আবারো ভরাট শুরু করা হয়েছে বলে শুনেছি। ভূমিব্যবস্থপনা আইন ও জলাধার আইনের আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।