নবীগঞ্জে পাহাড়ের পাদদেশে বিদেশি ফল ড্রাগন চাষ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

নবীগঞ্জে পাহাড়ের পাদদেশে বিদেশি ফল ড্রাগন চাষ

  • হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৩ নভেম্বর, ২০১৯

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় সম্প্রতি বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে বহুগুণ সমৃদ্ধ বিদেশি ফল ড্রাগন ফল চাষ। এরই মাঝে ড্রাগন চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন মশিউর রহমান নামের এক চাষী। বাজারে ফলের ভালো দাম ও চাহিদা থাকায় দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ড্রাগন ফলের চাষ। আর অল্প সময়েই অল্প পুঁজিতে ড্রাগন ফল চাষ করে বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার বিশাল সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে কৃষি অধিদপ্তর।

সম্প্রতি ববানি বাগান পরির্দশন করে গেছেন কৃষি অধিদপ্তর, সিলেট কৃষি তথ্য সার্ভিস ও নবীগঞ্জ কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে খ্যাত দিনারপুর পরগনার পানিউমদা গ্রামের ভিতরে অনেক উঁচু-নিচু পথ ফেরিয়ে ববানি চা বাগানের অবস্থান। আর পাহাড়ের পাদদেশে এই চা বাগানে একাংশেই প্রায় ১ একর জমিতে বিদেশি ফল ড্রাগন চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাগানের মালিক মশিউর রহমান। এখন এলাকার অনেকেই এ ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

নবীগঞ্জের ববান ড্রাগন বাগানের ম্যানাজার বিনয় চন্দ্র বর্মন জানান, বাগানের মালিক মশিউর রহমানের উদ্যোগে প্রায় ১ বছর আগে চা বাগানের ১ একর জমিতে শুরু করেন ড্রাগন চাষের কর্মপরিকল্পনা। প্রথমে সিমেন্ট দিয়ে প্রায় ৫০০টি পিলার তৈরি করেন। পরে গর্ত করে ওই স্থানে পিলারগুলোকে দাঁড় করিয়ে ১টি পিলারের চারপাশে চারটি করে ড্রাগনের চারা রোপন করেন। এভাবে প্রায় ২ হাজার চারা রোপন করেন। এতে পরিচর্যাসহ সব মিলিয়ে ব্যয় হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা। প্রথম মৌসুমেই দেড় লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। এখন পরিচর্যা ছাড়া কোনো ব্যয় নেই, শুধু আয়ের পালা। কোনো ব্যয় ছাড়া সামনে আরো ৩ গুণ বেশি ফল বিক্রি করে টাকা আয়ের আশা করছেন বাগান কর্তৃপক্ষ।

নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম মাকসুদুল আলম জানান, রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় ড্রাগন ফল চাষে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। নবীগঞ্জ উপজেলায় বেশ কয়েকটি ড্রাগনের বাগান তৈরী হয়েছে। এই ড্রাগন বাগানগুলো দেখে কৃষকরা ফলটি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন প্রায়ই চারার জন্য যোগাযোগ করছেন। এই চারা রোপন করলে সহজে মারা যায় না। কেউ বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ করতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসের পরার্মশ নিতে বলেন তিনি।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তমিজ উদ্দিন খাঁন বলেন, আমাদের দেশে ড্রাগন ফল সম্ভাবনাময় একটি ফল। ফলের পুষ্টিগুন অনেক বেশি। ফলটিতে প্রচুর পরিমানের ভিটামিন-সি আছে। ক্যান্সারসহ অনেক জটিল রোগের প্রতিরোধক হিসেবে ড্রাগন ফলটি কাজ করে। ফলটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজন।

তিনি বলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে দারুণ ভূমিকা রাখবে ড্রাগন এবং অনেক কম শ্রমে বিদেশি ফলটি চাষ করা যায়। অন্য ফসলের তুলনায় এই ফল চাষে ব্যায় কম আয় বেশি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, শিক্ষিত বেকাররা চাকরির পেছনে না ছুটে বসতবাড়ির আশপাশে ড্রাগন ফল চাষ করে নিজেদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারেন। অন্যদিকে ব্যক্তিগত আয়ের পথ সুগম হবে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ড্রাগন ফল সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষ আগে তেমন পরিচিত ছিলেন না। বেশ কয়েক বছর আগেও বিদেশ থেকে ড্রাগন ফল আমদানি করা হতো। দেশের বড়ো বড়ো সুপারশপগুলোতে উচ্চদামে ড্রাগন ফল বিক্রি হতো। দেশের বেশ কিছু উৎসাহী ব্যক্তি থাইল্যান্ড থেকে ড্রাগন ফলের চারা এনে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেন। এতে তারা সফল হয়। ২০১০ সালের দিকে এদেশে সর্বপ্রথম ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়। ২০১৫ সাল থেকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে ড্রাগন ফলের চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ফলের চাষ হচ্ছে। যেসব জমিপূর্ণ সূর্যলোক পায়। বর্ষায় পানি উঠে না বা স্যাঁতস্যাঁতে থাকে না- এমন স্থানে ড্রাগন ফলের চাষ করা সহজ। বাগান করার মাত্র নয় মাসের মধ্যে গাছে ফল ধরতে শুরু করে। এক একটি ফলের ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। তবে ৪/৫ বছরের একটির পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে এক কেজি পর্যন্ত ওজনের ড্রাগন ফল পাওয়া সম্ভব হবে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে বছরে ৮০ কেজি পর্যন্ত ফলন হতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads