রেজাউল করিম হীরা :
দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থ জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করেছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী দলটি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে গতকাল।
এর মধ্যদিয়ে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হলো। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই সরকারের কাছে এখন জন-আকাক্সক্ষা সবচেয়ে বেশি। কারণ, ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। দিন বদলের সনদ নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে গত ১৫ বছরে বদলে দিয়েছেন দেশ। স্বাধীনতার পর আর কোনো সরকারের আমলেই দেশে এত উন্নয়ন হয়নি। শুধু উন্নয়নই নয়, দেশকে ডিজিটালাইজড করা থেকে শুরু করে অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে নানা ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরাট সাফল্য। এই সেতু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চবাসীর দুঃখ ঘুচেছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে দিয়েছে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির আরেক দুয়ার। ঢাকাবাসীর নিত্য দুর্ভোগ যানজট থেকে মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। দেশ জুড়ে সড়ক প্রশস্তকরণের মধ্যদিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
শেখ হাসিনা সরকারের আরেক সাফল্য রেলে। পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো রেল সেবার আওতায় আনা, কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করে দেশজুড়ে যোগাযোগের নতুন দ্বার উম্মোচন হয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতের বিস্ময়কর উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। স্থাপন করা হয়েছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়া নতুন সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণসহ বহু উন্নয়ন ঘটেছে গত ১৫ বছরে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়ন দেশ-বিদেশে বহু প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ^ দরবারে বাঙালি জাতিকে দিয়েছে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শক্তি।
কৃষিতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করা আওয়ামী লীগ সরকারের আওেশ একটি বড় সাফল্য। ভ‚মিহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধা নিবাস নির্মাণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তার আওতায় নিয়ে আসাসহ রয়েছে আরও নানামুখী জনবান্ধব কর্মকান্ড।
তবে এত উন্নয়ন এবং জনবান্ধব কর্মকান্ডের পরও জনআকাক্সক্ষা পূরণে একটা বড় ঘাটতি রয়েই গেছে। এখন সবার চাওয়া হলো ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রæতির সফল বাস্তবায়ন। জোর দিতে হবে সুশাসনের ওপর। কঠোর হস্তে দমন করতে হবে সন্ত্রাস, রাহাজানি আর মাদকের আগ্রাসন। প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
২০১৪ ও ২০১৮ সালে সাধারণ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছিল দেশকে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত করা হবে। ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন।
তার পরও দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল হওয়া তো দূরের কথা, তার লাগাম পর্যন্ত টেনে ধরা যায়নি। সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি একটা ব্যধির মতো রূপ ধারণ করেছে। এই দুর্নীতির লাগাম টেনে না ধরলে ভবিষ্যতে দেশকে চড়া মূল্য দিতে হবে। তাই এই মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকারের কাছে মানুষের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা হচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
শেখ হাসিনার সরকারের টানা ১৫ বছরের মেয়াদে বাজার ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে খারাপ সময় গেছে গত প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময়। এই সময়ে মানুষ অভাবনীয় সংকটে পড়েছে নিত্যপণ্যের মূল্যের অস্বাভাবিক দামের কারণে। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল থেকে শুরু করে শেষ বেলায় পেঁয়াজ, আলুর মতো পণ্যের দামও ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এতে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের মানুষের অবস্থা ছিল নাজুক। এসব মানুষেরর একটাই বক্তব্য ছিল- উন্নয়ন করেন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সবার আগে মানুষকে খেয়ে-পরে বাঁচতে দেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করেন। বাজারের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরেন। কিন্তু মানুষের এই আর্তনাদ সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে ঠিকমত পৌঁছায়নি। সবার একটাই চাওয়া নিত্যপণ্যেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন।
এ অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার গঠন হয়েছে। এই সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জটা সবচেয়ে বড়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা, মানুষকে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া, সুশাসন নিশ্চিত করা অন্যতম। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে স্বস্তি দেওয়াটা হচ্ছে সব চেয়ে বড় কাজ। আর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বাজারের কন্ট্রোল যাদের হাতে। যেসব সিন্ডিকেটের কোমর ভেঙে দিতে হবে। এতেই বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে সাধারণ মানুষ মনে করে।
এ জন্য সরকার সংশ্লিষ্টদের সুনজরই যথেষ্ট। এই সিন্ডিকেট, দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের কঠোর হস্তে দমনের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার জনগণের পুরোনো প্রত্যাশা পূরণে সফল হবে। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক, দৈনিক বাংলাদেশের খবর