ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের ইন্ধনদাতা হিসেবে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রয়েছেন আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ। যে-কোনো মুহূর্তেই তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র থেকে জানা গেছে।
দেশের সব জায়গায় যখন বিএনপি নেতাকর্মীরা কোণঠাসা, ঠিক আশুগঞ্জে তার উল্টো। এক আসিফের দাপটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অসহায়। বর্তমানে হেফাজতকাণ্ডে আসিফের সম্পৃক্ততা ও তার গ্রেপ্তারের গুঞ্জনে যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় চারটি ও সরাইল থানায় দুটিসহ সর্বমোট ৫৫টি মামলা রুজু হয়েছে। এসব মামলায় ৪১৪ জন এজাহারনামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ৩০/৩৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। আর এসব মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৮৭ জন।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করলেও এখন ঘটনার পেছনের ইন্ধনদাতাদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হচ্ছে। ইন্ধনদাতাদের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হবে অর্থদাতাদেরও।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের ইন্ধনদাতা যে কয়েকজন চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে আসিফ আহমেদ অন্যতম। বর্তমান সময়ের যে গ্রেপ্তার অভিযান তা অব্যাহত রয়েছে। এই অভিযানের মধ্যেই ইন্ধনদাতাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শুধুই কোণঠাসা নয়, সরকারি টেন্ডারসহ নানা ধরনের ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ বিএনপি নেতা আসিফ আহমেদের হাতে। এ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদের দাপটে অনেকটা অসহায় আওয়ামী লীগের নেতারা। সাবেক এমপি ডা. এইচ বি এম ইকবালের আপন ভাগনে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু নাসেরের ভাতিজা হওয়ার সুবাদে তিনিই যেন সরকারি দলের হর্তাকর্তা। জানা যায়, আবু আসিফ আহমেদ অবৈধভাবে সরকারী খাল-বিল দখল ও সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে নামমাত্র মূল্যে অন্যের জমি নিজের নামে লিখে নেন। জনস্বার্থে ব্যবহূত পুকুর ভরাট করে দখলে নেন আসিফ আহমেদ। আরিয়ান বিল্ডার্স ইইকুইপমেন্ট সাপ্লায়ার অ্যান্ড ক্যারিং কন্ট্রাক্টর নামে তার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই তিনি বিভিন্ন টেন্ডারবাজি করে থাকেন।
সূত্র জানায়, পাওয়ার গ্রিডের মতো বৃহৎ কাজটি আসিফ চেয়ারম্যান পেয়েছে। সেখান থেকে কোনো অফিসার পাওয়ার গ্রিডে ভিজিটে আসলে তাদের অতিরিক্ত ভাড়ায় হোটেলে থাকতে বাধ্য করেন। উজান ভাটি নামে একটি হোটেল রয়েছে তার। নিচে খাবার ব্যবস্থা থাকলেও টপ ফ্লরে রয়েছে আসিফের একটি টর্চার সেল। সেখানে নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে মারধরসহ বিভিন্ন স্বার্থ হাসিল করেন। ওই টর্চার সেল মাদক সেবনেরও নিরাপদ স্থল। প্রতিনিয়ত সেই রুমে মাদক সেবন ও অসামাজিক কাজ করেন তার লোকেরা। আসিফ চেয়ারম্যানের রয়েছে বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী। আশুগঞ্জের কোনো ব্যক্তি আসিফের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খোলে না। এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হাজি মোহাম্মদ সফিউল্লাহ বলেন, আসিফ মূলত নাসের এবং ডাক্তার ইকবালের প্রভাব দেখায়। এ জন্য তার কোনো কাজ উপজেলা প্রশাসন আটকায় না। এ ছাড়া অন্য বালু ব্যবসা থেকে অন্যান্য ব্যবসাও তার নিয়ন্ত্রণে। এখানে আওয়ামী লীগের লোকের কোনো প্রকার মূল্য নেই। তিনি বলেন, এগুলো আমরা দেখেও দেখি না। কারণ দেখে যদি প্রতিকার না হয় তবে ওই দেখে তো লাভ নেই। তিনি অভিযোগ করেন, হেফাজতের যে তাণ্ডব এলাকায়। মানুষ দেখেছে জেনেছে কাদের ইন্ধনে হয়েছে। হেফাজতের কর্মীদের পাশাপাশি ইন্ধনদাতাদের গ্রেপ্তার দাবি করেন তিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ মুন্সি বলেন, আমি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আর তিনি সাবেক। তার কর্মকাণ্ড দলের লোকজন দেখেছে। তারাই ভালো বলতে পারবে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যে অঘটন তাতে তাদের ইন্ধন প্রকাশ্যই। এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা আবু আসিফ বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত এসব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি বলেন, হেফাজতের ঘটনায় আমি সম্পৃক্ত নই। মদতও দেয়নি। এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ বলেন, হেফাজতের তাণ্ডবের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে ইন্ধনদাতা আর মাঠে থেকে সংঘর্ষে জড়ানো সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।