সরকার যেকোনো শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্বাগত জানায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বলেছেন, তারা অযৌক্তিক দাবিতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বরদাশত করবে না।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের শাসনে বিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের রায়ই হচ্ছে ক্ষমতার পালাবদলের একমাত্র উপায়। যেকোনো শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে, অযৌক্তিক দাবিতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে আমরা বরদাশত করব না।’
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে এ ভাষণ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সম্প্রচার করা হয়। সেই সাথে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলোও তা প্রচার করে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ব্যবধানে জয়ী হওয়ার পর টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। তার নতুন মন্ত্রিসভা ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গঠন করা হয়।
ভাষণে তিনি বলেন, দেশবাসী অতীতে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস এবং মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা দেখেছে। ‘বাংলাদেশের মাটিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি আর হতে দেয়া হবে না।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা তার প্রায় ৩০ মিনিটের ভাষণে দুর্নীতির সাথে জড়িতদের শোধরানোর আহ্বান জানান। ‘আমি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের কল্যাণের জন্য আমি যেকোনো পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করব না।’
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকার গঠন করার পর প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। ‘আমি আবারো সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই- দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না।’
যে-ই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সাথে জড়িত থাকুক তাকে আইনের আওতায় আনতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের হক যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।’
তার মতে, দুর্নীতি বন্ধে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি। মানুষ সচেতন হলে দুর্নীতি আপনা-আপনি কমে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। ‘একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ হানাহানি থাকবে না। সকল ধর্ম-বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। সকলে নিজ নিজ ধর্ম যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করতে সক্ষম হচ্ছেন।’
শেখ হাসিনা জানান, সরকার সংসদকে কার্যকর করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই সাথে সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ সংসদকে প্রাণবন্ত করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে একটানা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। ‘আমরা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সরকার পরিচালনা করছি। আর সে লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়নসহ সকলের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশ ও জনগণের জন্য কী করতে চেয়েছিল আর কী করতে পেরেছে তা নিয়ে তারা সব সময়ই সচেতন। ‘আপনারাও নিশ্চয়ই মূল্যায়ন করবেন। তবে আমরা মুখরোচক প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা তা-ই বলি, যা আমাদের বাস্তবায়নের সামর্থ রয়েছে।’