আরবি ইখলাস বলতে যা বোঝায় তা হলো, ইচ্ছার স্বচ্ছতা বা একনিষ্ঠতা। পৃথিবীর যে কোনো আদর্শে, যে কোনো কাজে চাই তা ভালো হোক কিংবা মন্দ— ইখলাসই পৌঁছে দিতে পারে সাফল্যের দোরগোড়ায়। সৎ কাজ আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার প্রধান শর্তই হলো নিয়তের বিশুদ্ধতা। উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, সব কাজের প্রতিফল কেবল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তিই নিয়ত অনুসারে তার কাজের প্রতিফল পাবে।
কর্মের সঙ্গে ইখলাসের সংযোজন যে কত বড় মহাসাফল্য এনে দিতে পারে মুমিনের ইহ ও পরজীবনে, তা এই হাদিস থেকেই অনুধাবনযোগ্য। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ ভালো এবং মন্দ লিখে দিয়েছেন, তারপর তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। অতএব, যে কেউ কোনো সৎ কাজের ইচ্ছা করে তা না করলেও আল্লাহ তাকে পূর্ণ কাজের সওয়াব দেবেন। আর যদি সে সৎ কাজের ইচ্ছা করে এবং বাস্তবে তা করেও ফেলে, আল্লাহ তার জন্য দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত, এমনকি এর চেয়েও অধিক সওয়াব লিখে দেন। আর যে কেউ কোনো মন্দ কাজের ইচ্ছা করার পর যদি তা না করে, তবে আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে পূর্ণ কাজের সওয়াব দেন। পক্ষান্তরে যদি সে মন্দ কাজের ইচ্ছা করে এবং কাজটা করেই ফেলে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য একটি মাত্র গুনাহ লেখেন। (বুখারি : ৬৪৯১)
ভালো কাজ কমবেশি সব মানুষই করে থাকে।
যারা দুনিয়ার জীবনকেই একমাত্র জীবন মনে করে, মৃত্যুকেই মানবের নিঃশেষ বলে বিশ্বাস করে কিংবা সত্য দ্বীনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, তাদের সৎ কর্মের ফলাফল কোনো না কোনোভাবে আল্লাহ দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন। কেননা আখিরাতে প্রতিদান পেতে হলে শর্ত হলো সৎ কর্মের সঙ্গে ইমানের সংযুক্তি।
অতএব, যারা সৎ কর্ম শুধু জনকল্যাণ, সততার বহিঃপ্রকাশ কিংবা একান্ত নিজস্ব প্রয়োজনে সম্পাদন করে থাকে, তারা পার্থিবতায় যা পায় একজন ইমানদার ব্যক্তিও তা থেকে বঞ্চিত হন না। পার্থক্য হলো, মুমিন ব্যক্তি তার ইমানের দাবি হিসেবে, তার প্রভুর আদেশ হিসেবে এবং তার আখিরাতের পুঁজির অতিরিক্ত কিছু হিসাব করেই সৎ কর্মের নিয়ত বা ইচ্ছা করে থাকে। তাই উভয়ের কর্ম এক হলেও প্রতিদানের পার্থক্য ব্যাপক।
লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ