দ্বিতীয় ডোজের অনিশ্চয়তায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

দ্বিতীয় ডোজের অনিশ্চয়তায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৬ মে, ২০২১

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৪ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ে টিকা এলেও দেশে সংকট সৃষ্টি হবে। গতকাল বুধবার দুপুরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। তখন থেকে গত ৪ মে পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৭৫৭ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩১ লাখ ৬ হাজার ৭০৯ জন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মোট ৮৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৬ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকার বর্তমান মজুতের সঙ্গে হিসাব মিলিয়ে দেখা গেছে, ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৪ ডোজের সংকট রয়েছে। টিকা সংকটের কারণে গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে এখনো দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া বাকি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ৪৮ জন। দেশে মজুত আছে ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩৪ জনের। এ কারণে টিকার দ্বিতীয় ডোজের অনিশ্চয়তায় পড়েছেন প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষ। 

তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ঈদুল ফিতরের আগেই চীন থেকে টিকা আসতে পারে। আমরা আশা করছি সেটি দ্রুতগতিতেই আমাদের কাছে পৌঁছবে। এ টিকা ছাড়াও রাশিয়ার যে স্পুটনিক টিকা বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে আলোচনা চলছে, সেটি আনতে ছাড়পত্র প্রয়োজন, যা বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আছে। আশা করছি দ্রুত গতিতেই ছাড়পত্র পেলে রাশিয়ার টিকা আনতে সক্ষম হবো।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালস নামক একটি কোম্পানি মডার্নার টিকা আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে। এটি নিয়েও তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বিদ্যমান আছে। এ ছাড়া দেশে তিনটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ইতিমধ্যে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা জানিয়েছে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন করতে চায়। তারা এটি নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের সক্ষমতাও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে দেখা হয়েছে। এই তিনটি কোম্পানি সারা দেশে প্রায় এক বছরে দেড় কোটি টিকা উৎপাদন করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। দেশে আমরা সংক্রমণের পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছি। বিগত সাত দিনে পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। একটা সময় ছিল যখন প্রতিদিন ছয় থেকে সাত হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হতো। কিন্তু গত সাত দিনে শনাক্তের হার প্রায় ৮.৭১ নেমে এসেছে। এভাবেই সংক্রমণ যেন নিচের দিকে চলে আসে এবং এটা যেন অব্যাহত থাকে, এজন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। জনসাধারণকে চলাচল সীমিত করতে হবে। অবস্থা যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারি, তাহলে সংক্রমণের হার ফের যেকোনো সময় বেড়ে যেতে পারে। এ জন্য সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি  মানতে হবে।

এদিকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, টিকা সংগ্রহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন, ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে সরকার। চলতি মাসে রাশিয়া থেকে স্পুটনিক ও চীন থেকে সিনোফার্মা টিকা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এদের মধ্যে সবাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি। অ্যাস্ট্রাজেনেকা পেয়েছে বলে সবাই ব্যবহার করছে। কিন্তু তারপরও অনেক দেশ জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদনহীন টিকা ব্যবহার করছে। এখন যেহেতু সেরামের সঙ্গে সরবরাহ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে, আমাদের আগের যোগাযোগগুলো আরো বৃদ্ধি করেছি।

রাশিয়ার স্পুটনিক-৫-এর ক্ষেত্রে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। তাদের সঙ্গে দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। একটি হচ্ছে যৌথ উৎপাদন ও দ্বিতীয়টি হচ্ছে টিকা ক্রয়। চীন আমাদের ৫ লাখ টিকা উপহার হিসেবে দিতে চেয়েছে। সেটির ফলাফল দেখে আমরা পরবর্তীতে কিনতে পারব।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা সংগ্রহের বিষয়ে বলেন, তাদের কাছে অতিরিক্ত ছয় কোটি টিকা রয়েছে এবং এর মধ্যে থেকে কয়েক মিলিয়ন টিকা চেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি বিবেচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতকে সহায়তা করে তবে একটি বাড়তি অংশ বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করি। এ বিষয়ে আমাদের রাষ্ট্রদূত যোগাযোগ রাখছেন। ডেনমার্কেও কিছু অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাড়তি আছে, টিকা সংগ্রহের জন্য তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ হচ্ছে। 

দেশে গত ২ মে থেকে টিকার নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে। সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে উল্লেখ করা আছে- নিবন্ধকরণ অস্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে এটি সাময়িক বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান।

প্রসঙ্গত, বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা কেনার চুক্তি হয়। গত নভেম্বরে হওয়া ওই চুক্তি অনুযায়ী, সিরাম  থেকে বাংলাদেশে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসার কথা। এরই ধারাবাহিকতায় জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রায় এক হাজার তিনশ কোটি টাকায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদিত তিন কোটি ডোজ টিকা সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনার অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। চুক্তির পর সেরাম থেকে দু’টি চালানে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা  পেয়েছে বাংলাদেশ। এরপর পাশপাশি আরও ৩২ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে এলেও চুক্তি অনুযায়ী, আর কোনো টিকা পায়নি বাংলাদেশ। ভারতে করোনার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে রেখেছে সে দেশের সরকার। জুন-জুলাইয়ের আগে টিকা সরবরাহ অনিশ্চিত বলেও জানিয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট। যার কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকেও টিকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads