একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ১৪ নভেম্বর ছিল নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আগাম প্রচারণা চালানোর শেষ দিন। বেঁধে দেওয়া এই সময়সীমার মধ্যে পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার ফেস্টুনসহ যাবতীয় আগাম প্রচারণাও সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয় ইসি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অপসারণ না করা হলে সংশ্লিষ্ট প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। ইসির এমন কড়াকড়ি নির্দেশনার পর প্রচারকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিতে পারলেও দেওয়াল পরিষ্কারে অভিযানে নামে দেশের সব সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। তবে রাজধানীসহ সারা দেশে দেয়াল ‘সিংহভাগ’ পোস্টার ও আগাম প্রচারণা মুক্ত হলেও প্রচারণায় সরব রয়েছে ফেসবুকের ওয়াল। জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ছাড়াও, বিভিন্ন নামের ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে যথারীতি ঝড় চলছে আগাম প্রচারণার। দলের মনোনয়ন নিশ্চিত হতেই প্রতীক, স্লোগান ও দলীয় প্রধান, আদর্শিক নেতাদের ছবি সংবলিত ডিজিটাল ভার্সনের পোস্টারে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির দেয়াল।
দলীয় মনোনীত প্রার্থীর প্রচারণার পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেও কম সক্রিয় নয় ফেসবুকের ওয়াল। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন প্রচারণার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সে বিষয়েও কিছু বলতে পারছে না ইসি সংশ্লিষ্ট বিভাগ। নির্বাচন আইনের মধ্যে না পড়লে কিছুই করার নেই এমনও দাবি করছে সাংবিধানিক সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিরা। আর বিষয়টি পুরোটাই নির্বাচন কমিশন সচিবের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে এমন মন্তব্য রয়েছে তাদের।
এদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গবেষকদের মতে, আগাম প্রচারণা নিষিদ্ধের সময়সীমার মধ্যে এ ধরনের সকল কাজই নির্বাচন আচারণবিধি ভঙ্গের শামিল। আইনে ডিজিটাল ফরমেট থাকুক বা না থাকুক যেকোনো আগাম প্রচারণার বিরুদ্ধেই আইন প্রয়োগ করা সম্ভব।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপির ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ পর্যালোচনা করা হয়। এ দিন ক্ষমতাসীন দলের পেজটিতে দলীয় প্রতীক ও প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়ে ডিজিটাল পোস্টার (ইমেজ) পোস্ট করা হয়। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন পোস্ট লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে বিএনপির ভ্যারিফাইড পেজে নির্বাচন উপলক্ষে তাদের দাবি দাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ ও সংবাদের লিংক শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত আইডিতে প্রতিদিনই চলছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রচারণা। এমনই ঐক্যফন্টের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে করা বিকৃত ছবিও পোস্ট করা হচ্ছে তার ওয়াল থেকে। ‘গুজবে কান দেবেন না’-এমন শিরোনামের ফেসবুক গ্রুপে সরকারিবিরোধী প্রচারণা ও অপ্রচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পোস্টের পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন পোস্ট।
বিগত কয়েক দিনে ঢাকা জেলার একটি আসন থেকে সরকারি দলের মনোনয়ন পেতে যাওয়া এক ব্যবসায়ীর জনসংযোগ কার্যক্রম ফেসবুকে লাইভ প্রচার করাসহ ভোট চেয়ে আগাম প্রচারণাও চালানো হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে।
তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা না করায় আগাম ভোট চাওয়ার প্রচারণা তেমন চলছে না। তবে সরকারবিরোধী প্রচারণায় বিভিন্ন নামে-বেনামের ফেসবুক পেজ, গ্রুপ ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকেও চলছে সমানতালে প্রচারণা। আমরা জিয়ার সৈনিক, দেশনেত্রী গোষ্ঠী, স্বাধীনতার ঘোষক, যুব অহঙ্কার তারেক রহমান এমন বহু নামের ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত আইডি থেকে চলছে সরকারবিরোধী প্রচার ও ‘অপ্রচার’। এসব প্রচারণার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিকৃত ছবি পোস্ট করা হচ্ছে সেখানে। বিভিন্ন সহিংসতার ছবিসহ নানা ‘অপ্রচারও’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে এসব পেজ ও অ্যাকাউন্টে।
এ ব্যাপারে কথা বলা হলে নির্বাচন কমিশনের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অনুবিভাগের জ্যেষ্ঠ মেইনটেইন্যান্স প্রকৌশলী মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আগাম প্রচারণা নিষিদ্ধ থাকলে ফেসবুকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ও বিরোধীদের বিপক্ষে প্রচারণা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়বে কিনা সঠিক বলতে পারবো না। আমাদের এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগাম নির্বাচনী প্রচারণার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে ইসি থেকে কোনো নির্দেশনা আছে কি না এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া উইং) জাকির হোসেন খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ইসি থেকে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা এখনো আমাদের কাছে আসেনি। তবে আগে থেকেই এ ধরনের অপ্রচার ও গুজব ঠেকাতে আমরা নানা ধরনের কারিগরি পদক্ষেপ নিয়েছি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আগাম প্রচারণা নিষিদ্ধের মধ্যে যত ধরনের প্রচারণা হোক না কেন তা দণ্ডনীয় অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘন। এগুলোর বিরুদ্ধে ইসি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, শুধু আইনে আছে কি নেই এই অজুহাতে। তার মানে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইসি কাজ করছে না।