দেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতাল

দীর্ঘদিনের পুরানো পাবনা মানসিক হাসপাতাল ভবন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

দেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতাল

  • পাবনা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৬ নভেম্বর, ২০১৮

দেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতালটি ১৯৫৯ সালে শহরতলির হেমায়েতপুরে ১১১ দশমিক ২৫ একর জমির ওপর স্থাপিত। প্রথম অবস্থায় হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ছিল ৬০টি। সময়ের চাহিদায় এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ শয্যায়। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। বর্তমানে মাত্র ৫ জন মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল কলেজের দুজন সহকারী অধ্যাপক দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। মঞ্জুরিকৃত মোট ৫৪২টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৮৯টি। চিকিৎসক বাড়ানোর পাশাপাশি একটি হাফওয়ে হাউজ নির্মাণ করা গেলে ৫০০ শয্যার ওপর চাপ কমবে বলে মনে করেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস। দীর্ঘদিন তাদের সেবা করতে গিয়ে হাসপাতালের নার্সদের স্বজন হয়ে উঠেছেন এসব রোগী। স্বজনদের অবহেলা আর ভুল ঠিকানা দেওয়ার কারণে সুস্থ হয়েও বাড়ি ফিরতে পারছেন না পাবনা মানসিক হাসপাতালের ২০ জন রোগী। এদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন ২১ থেকে ২৬ বছর ধরে। ফলে হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝেই কেটে যাচ্ছে তাদের জীবন। মারা গেলে মরদেহটিও গ্রহণ করতে চায় না পরিবার। অপরদিকে দীর্ঘ পাঁচ দশকেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দেশের মানসিক রোগের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘পাবনা মানসিক হাসপাতাল’-এ। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সঙ্কটে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। এমন বাস্তবতায় পাবনা শহরতলির হেমায়েতপুরে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত পাবনা মানসিক হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার মগবাজারের নয়াটোলার আমবাগান এলাকার আবুল হাশেম মিয়ার ছেলে সাঈদ হোসেন। ১৯৯৬ সালের ২২ জুলাই মানসিক রোগী হিসেবে তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে যান স্বজনরা। এরপর কেটে গেছে প্রায় ২১ বছর। কিন্তু সুস্থ হয়েও স্বজনদের ভুল ঠিকানার কারণে বাড়ি ফিরতে পারছেন না তিনি। ৩৬ বছর বয়সে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এখন তার বয়স ৫৬ বছর। ইচ্ছা থাকলেও স্বজনদের কাছে ফিরতে পারছেন না তিনি। শুধু সাঈদ নয়, ঢাকার পল্লবী এলাকার কাজী গোলাম গাউসের ছেলে কাজী আকরামুল জামান ও পাবনার আটুয়া মোমেনাবাদ এলাকার ডলি খাতুনসহ ২০ জন রোগীর অবস্থা একই। স্বজনদের অবহেলায় সুস্থ হয়েও বাড়ি ফিরতে পারছেন না তারা। অপেক্ষার দিন শেষ না হওয়ায় হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝেই কাটছে তাদের দিনরাত। তারা জানান, আমরা বাড়ি ফিরতে চাই কিন্তু কেউ নিতে আসে না। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাসিমা খাতুন জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এসব রোগীর সেবা করতে গিয়ে তারা এখন আমাদের স্বজন হয়ে গেছে। আমরাও তাদের নিজের পরিবারের মানুষ হিসেবে দেখি। আমরা যেভাবে তাদের বলি সেভাবেই তারা চলে। পাবনা মানসিক হাসপাতালের রোগী তথ্য প্রেরণ কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন জানান, রোগী ভর্তির সময় নেওয়া তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে ঠিক থাকলেও পরে তাদের সন্ধান পাওয়া যায় না। এমনকি কোনো রোগী মারা গেলে মরদেহটিও নিতে চান না স্বজনরা। এর পেছনে রয়েছে আর্থিক, সামাজিক ও সম্পত্তিজনিত নানা কারণ। দেশের মানসিক রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পাবনা শহরের শীতলাই হাউজে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল। এর দুই বছর পর ১৯৫৯ সালে শহরতলির হেমায়েতপুরে ১১১ দশমিক ২৫ একর জমিতে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালটি। প্রাথমিক অবস্থায় শয্যাসংখ্যা ছিল ৬০টি। সময়ের চাহিদায় যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০টিতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads