অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের উন্নয়নের জন্য সময় চেয়ে বলেছেন, ‘আমি যেভাবে সংবিধান পেয়েছি, যেভাবে কর্মপরিকল্পনা পেয়েছি, যেভাবে অর্থনীতি পরিকল্পনা সাজাতে হয়; সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাকে সময় দিতে হবে। আমাকে সময় দেন, আপনারা ফলাফল পাবেন।’
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে না, এমন সমালোচনার জবাবও দেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন-২০২০’-এ অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু কথা উঠে আসে, যেমন দেশে তো উন্নয়ন হচ্ছে, মাথাপিছু জিডিপিও ভালো। গত পাঁচ বছরে ৪৫ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তবে এখানে তো জবলেস গ্রোথ। আপনারা অর্থনীতির ছাত্র, অর্থনীতির প্রবক্তা, পলিসি মেকিংয়েও সাহায্য করেন; যদি কর্মসংস্থানই না হবে তাহলে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি কোথা থেকে আসবে? অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর কর্মসংস্থান হাত ধরে চলে।’
দৈনিক বণিক বার্তা ও সিটি ব্যাংকের যৌথ আয়োজনে দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ ও বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মাসরুর আরেফিন।
সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে, যেখানে কর্মসংস্থান, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অবদান অনেক কম। কিন্তু অর্থনীতিতে তারা সবার ওপরে। তাদের অন্য খাত আছে। আমরাও তো সেখাতে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকটা মিটিংয়ে বলেন, চাকরির জন্য কষ্ট করতে হবে না। সবাই চাকরি পাবেন। চাকরির জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সেখানে দুই থেকে তিন কোটি মানুষের চাকরি হবে।’
সঞ্চয়ের বিভিন্ন সেবা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সঞ্চয় সেবাগুলো বালিশের নিচে টাকা রাখার মতোই। এগুলোর কোনো বহুমুখী ব্যবহার নেই। এগুলো আমাদের মেইনস্ট্রিম ইকোনমিতেও আসে না। কীভাবে এগুলোকে নিয়ে আসা যায়, সেগুলোকে এনেছি সিস্টেম দিয়ে, আমরা তো গায়ের জোরে কিছু করতে চাইনি। সঞ্চয়ের সেবাগুলো ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য, যারা পেনশন পান তাদের জন্য। আমরা দেখলাম এটার অপব্যবহার হচ্ছে। ... সেগুলোতে আমরা চাইনি। ব্যাংকিং খাতে আমরা অটোমেশন করে ফেলেছি। এটাতে কারা সঞ্চয়পত্রের মালিক সেটা জানতে পারছি। কিছুদিনের মধ্যে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রেরও অটোমেশন হয়ে যাবে। এর ওপরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এটাতেও কেউ ঠকবেন না।’
পুঁজিবাজার প্রসঙ্গ টেনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পুঁজিবাজার উঠবে নাকি নামবে, সেটা দেখার দায়িত্ব আমার না। আমার কাজ হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। আমি যদি এ দেশের ক্ষুদ্র মৌলিক অর্থনীতিগুলোকে শক্তিশালী করি, তাহলে পুঁজিবাজারেও ভালো প্রভাব পড়বে। আমার কাজটি হচ্ছে, সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি গতিধারা শক্তিশালী রাখা। এসব করতে পারলে আমাদের সব অর্জন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি সব আমরা করতে পারব।’