বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

দেনায় ডুবুডুবু বাপেক্স

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ অক্টোবর, ২০২০

গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের (জিডিএফ) দেনার দায়ে ডুবতে বসেছে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্স। গত আট বছরে ১৯ প্রকল্পের বিপরীতে বাপেক্স ঋণ নিয়েছে তিন হাজার এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে মাত্র ২৫ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে তারা। বাকি টাকা কবে ফেরত দিবে বা আদৌ ফেরত দিতে পারবে কি না-তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যক্রমে পরিবর্তন না এনে এভাবে ঋণ নিয়ে চললে দেনার পরিমাণ বেড়ে একসময় সংস্থাটির কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।

গ্যাসের উন্নয়ন ও অনুসন্ধানে আগে সরকার ও বিদেশি সংস্থার ঋণের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। ২০০৯ সালে গ্যাসের অনুসন্ধান-উত্তোলনে সহায়তার জন্য গ্রাহকের অর্থে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গড়ে তোলা হয়। নীতিমালা তৈরির পর এ তহবিল থেকে ২০১২ সাল থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণ নিয়েই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু একবার নিলে আর ফেরত না দেওয়ার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে কোম্পানিগুলোর মধ্যে। তাই গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালাতে সুদসহ এ অর্থ ১০ বছরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। তবে বাপেক্স যা নিচ্ছে তা থেকে ফেরত দিতে পারছে খুব অল্প অংশ।

সম্প্রতি এক অনলাইন সেমিনারে বাপেক্সকে এ অর্থ অনুদান হিসেবে দেওয়ার দাবি জানান বিশেষজ্ঞরা। তবে সরাসরি এ দাবি নাকচ করে দেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, অনন্তকাল কোনো কোম্পানি এভাবে অনুদান নিয়ে চলতে পারে না। তাদের স্বাবলম্বী হতে হবে। তিনি এ সময় বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানির কথা উল্লেখ করে বলেন, তারা তো বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে আসছে, পরিশোধও করছে।

বাপেক্স গত কয়েক বছরে তিন হাজার এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এই টাকায় ১৯টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নতুন করে আরো সাতটি প্রকল্পের জন্য তারা ঋণের আবেদন করতে যাচ্ছে। মাত্র দুই ভাগ সার্ভিস চার্জ দিয়েই এ ঋণ পরিশোধ করা যায়। ঋণ পরিশোধের সময় পাওয়া যায় ১০ বছর। এরপর আরো দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড থাকে।

এ বিষয়ে বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক চিশতি বলেন, বাপেক্স যে টাকা ঋণ নিয়েছে আগামী ১০ বছরের মধ্যে তা শোধ দিতে হবে। এদিকে আরো বেশ কিছু প্রকল্পের জন্য ঋণ হিসেবে তহবিল থেকে টাকা নেবে বাপেক্স। কিছু অনুদান হলেও বেশির ভাগই ঋণ। এভাবে দিনের পর দিন তহবিলের টাকা ঋণ হিসেবে নিতে থাকলে একসময় বাপেক্সের দেনার পরিমাণ এত বেড়ে যেতে পারে যে তারা কাজই করতে পারবে না। আর অন্য ব্যাংক বা বিনিয়োগকারী সংস্থাও তখন তাকে টাকা দিতে পারবে না। এই টাকা বাপেক্সকে অনুদান হিসেবে দিলে এ সমস্যা তৈরি হতো না। তিনি বলেন, বাপেক্সকে দিয়ে এমন সব জায়গায় কাজ করানো হচ্ছে যেখান থেকে আগামী ১০ বছরের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আসবে না। যেমন- ভোলার গ্যাসক্ষেত্র খননকাজ। খননের পর গ্যাস পাওয়াই যাবে। কিন্তু এই গ্যাস কী করা হবে? এখননোতো পাইপলাইনই হয়নি। পাইপলাইন স্থাপন করে গ্রিডে গ্যাস আনতে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগবে। সে পর্যন্ত গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে বসে থাকতে হবে বাপেক্সকে।

তহবিলের টাকা ঋণ হিসেবে নিলে বাপেক্সের উচিত এমন জায়গায় কাজ করা যেখানে গ্যাস পাওয়ার সত্যিই সম্ভাবনা আছে। আর বিদেশি কোম্পানি যখন বাপেক্সের সঙ্গে এই তহবিলের টাকা নিয়েই কাজ করবে তাহলে তাদের পুরনো আবিষ্কৃত ক্ষেত্র না দিয়ে নতুন ক্ষেত্র দেওয়া উচিত। যেমন- পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের অনুসন্ধান হতে পারত। কিন্তু সেখানে অনুসন্ধান করা হয়নি।

জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের জন্য তহবিল থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে, আবার ফেরতও দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি ধারাবাহিক বিষয়। আমাদের তহবিলের সব টাকা ফেরত দিতে হবে। কিছু শর্ত আছে। আমরা সব মেনেই কাজ করে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads