নেত্রকোনার দুর্গাপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কমলা চাষ। আবহাওয়া ও জমির মাটি আশানুরূপ থাকায় উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে বাড়ছে কমলা চাষ। স্থানীয় কৃষক নিকাশ মানকিন প্রায় ১ একর জমির উপর গড়ে তুলেছেন এই কমলার বাগান। বাগানের উৎপাদিত কমলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে রাজধানী শহর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানেই। তবে এই খাতে সরকারি সাহায্য পেলে ব্যাপকভাবে কমলা চাষ সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।
দুর্গাপুরের কৃষদের প্রধান ফসল ধান। বছরের তিনবার ধান চাষাবাদ করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে নতুন ফসলে চাষে আগ্রহী হয়ে পড়ছেন তারা। শীতকালীন ফল কমলার বাজারে চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কমলার চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই অঞ্চলে । এখন বসতবাড়ি থেকে শুরু করে জমিতেও স্বল্প পরিসরে ছোটো ছোটো বাগানে উঠে তুলছেন অনেকে। এই দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে স্থানীয় কৃষক নিকাশ মানকিম ধানের বিকল্প কমলা চাষ করে হয়েছেন বেশ লাভবান।
ধান উৎপাদন করে খরচের টাকাই তুলতে না পারে ধানের বিকল্প কমলা চাষকে বেছে নিয়েছেন কৃষক নিকাশ মানকিম। পাহাড়ের প্রায় ১ একর জমির উপর গড়ে তুলেছেন কমলার বাগান। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে পরিবারের খাওয়ার জন্য কিছু কমলা কিনে আনেন নিকাশ। আর সেই কমলা বীজ থেকে চারা গাছ তৈরি করে বাগান করার উদ্যোগ নেন নিকাশ । ২০০৭ সালে জমিতে এক সাথে ২ শত ৫০ টি চারা গাছ রোপন করে তিনি। এই থেকেই শুরু হয় নিকাশের কমলার বাগান গড়ার স্বপ্ন। সারা বছর এই ফলটির ফলন না হলেও নিয়মিতই গাছ গুলোর পরির্চযা করেন তিনি।
চারা গাছ লাগানো পর মাত্র সাত বছরের মাথায় ২০১৪ সালের থেকেই একে একে ফল আসতে শুরু করে তার বাগানে। গত চার বছরে তার এই বাগানের প্রায় বেশির ভাগ গাছ থেকেই ফলন পেয়ে শুরু করেছেন তিনি। বছরের নভেম্বর মাসের শুর থেকেই ফল পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রঙ বদলাতে শুরু করে। গাছেই কমলা ভালোভাবে পাকার পর ডিসেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত চলে ফলটি সংগ্রহের কাজ। বছরের মাত্র দুই মাস ফলন পেলেও ধানের থেকে লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের কাছেও কমলা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই নিকাশের কমলার বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে কৃষক ও দর্শনার্থীরা। স্থানীয় কৃষকরাও ফলটি চাষ করতে চারা গাছ সংগ্রহ ও পরামর্শ নিতে নিয়মিতই আসছেন নিকাশের বাড়িতে।
আগে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মেঘালয় সহ বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত কমলাই দেশ চাহিদা মিটিয়ে আসছিল। বর্তমানে নিকাশের বাগানের উৎপাদিত কমলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানী শহর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিনিই ক্রেতারা বাগান থেকেই কমলা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। পরে তারাই স্থানীয় বাজার ও বিভিন্ন স্থানে এই কমলা রপ্তানি করে থাকেন। একটি পূর্ণ বয়স্ক কমলা গাছ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৩০০-৪০০টি কমলা পাওয়া যায়। আর একটি কমলা গাছ সাধারণত ৫০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে।
নিকাশ মানকিন জানায়, আমার ধানের ক্ষেতে আছে কিন্তু খরচের তুলনায় তেমন কোনো লাভ হয় না । ফলে আমি এই কমলা চাষকেই বেছে নিয়েছি। এই কমলা চাষে আমি কোন প্রকার সার ও কীটনাশক ব্যবহার করিনা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে এই কমলা টা আবাদ করে থাকি। তাই এই কমলার সবার কাছেই অনেকের চাহিদা। যদি সরকার আমাকে সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলেই আমি কমলার বাগান টি আরো বৃহৎ ভাবে করার চিন্তাভাবনা রয়েছে ।
স্থানীয় কৃষকরা করিম মিয়া জানায়, ধান উৎপাদন করে আমরা খরচের টাকাই তুলেতে পারিনা। এই অবস্থায় নতুন ফসল চাষাবাদী করাই আমাদের একমাত্র ভরসা হয় দাড়িয়েছে। আমাদের এলাকায় নিকাশ ভাই কমলার চাষ করছে আসলে তারা এই উদ্যোগ দেখে আমারও বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা জন্য আগ্রহ দেখেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এল.এম রেজুয়ান জানায়, আমারা নিয়মিতই কমলা চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। তাছাড়াও কি ভাবে কৃষকরা ভাল ভাবে এই কমলা চাষ করতে পারে তার জন্যও এই একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। যাতে করে তারা খুব সহজেই ও অল্প খরচে এই কমলা চাষ করতে পারে।