গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান নির্বাচন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আনন্দমুখর নির্বাচনের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে এবার। অনেক ইতিবাচক দিক এবার নির্বাচনের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় আছে। প্রতিটি দলই শুদ্ধতা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন এবার আমরা দেখব যা গণতন্ত্রের একটি বড় সার্থক অগ্রযাত্রার চিহ্ন হতে পারে। সবকিছুর পরও যে বিষয়টিতে জনসাধারণ খুব তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখে তা হচ্ছে সঠিক মানুষটি নির্বাচনের প্রশ্নে।
প্রার্থীদের হলফনামার তথ্যগুলো নিয়ে অনেকেরই অনেক প্রশ্ন ইতোমধ্যেই দেখা দিয়েছে। সম্পদের বিবরণীগুলো নিয়ে মানুষ জানতে চায় কিন্তু জানতে চাওয়ার ক্ষেত্রেই বড় অন্তরায় হলো ভিআইপি অনেক প্রার্থীরই নিজস্ব কোনো সম্পদ স্পষ্ট করে দেখানো হয়নি। যাদের হাতে আমরা আমাদের দায়িত্বগুলো ন্যস্ত করব, তারা যদি নিজেরাই সৎ থাকেন, সম্পদের দিক দিয়ে অবৈধ সম্পদের অধিকারী না হন, তবে সেটা আমাদের জন্য আলোর পথই নির্দেশ করবে। কিন্তু জানার বিষয় হলো, কতটা স্বচ্ছতা দেখানো হয়েছে এই হলফনামায়, সেটাই বড় চিন্তার কারণ!
আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবস পালন হলো ৯ ডিসেম্বর। দুদক চেয়ারম্যান এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। নির্বাচনকালীন সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ নিয়ে ব্যাখ্যাও করেছেন। দুদকের ভূমিকা স্পষ্ট করার জন্য অনেক কাজের কথা তিনি তুলে এনেছেন। হলফনামা বা সম্পদের হিসাব নিয়ে কাজ করা, প্রত্যেক প্রার্থী নির্বাচনী ব্যয় কত করছে তার ওপর নজর রাখা এবং কেউ কালো টাকা ব্যবহার করছেন কি-না, সে ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের আরো কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। যেমন— হলফনামায় প্রতিটি প্রার্থীই তার নিজ নিজ হিসাব দেখিয়েছেন এবং এই হলফনামার সঙ্গে কর কমিশনের রিটার্নিং দাখিলে দেখানো আয় মিলিয়ে রেকর্ড সংরক্ষণ করার বিষয়টি বিবেচনায় আনতে পারলে পরবর্তী বছরগুলোতে কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে তা নির্দেশ করা সঠিক হতে পারে। আয়-ব্যয়ের হিসাবের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা স্পষ্ট না হলে কখনোই দুর্নীতিবিষয়ক সঠিকতা যাচাই করা সম্ভব হবে না ।
নির্বাচনী ইশতেহারের ব্যাপারেও দুদকের একটা নির্দেশনা থাকা উচিত। যেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতির এত গতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির উন্নয়নের পরও সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্নীতির শিকার হচ্ছে, সেখানে কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিলে দুর্নীতিবিরোধী কী কী কাজ করবে, তার একটি সুস্পষ্ট ধারণা থাকার ব্যাপারে সব দলেরই দৃঢ় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। বেশিরভাগ দল বা প্রার্থীই বলছেন আমরা দুর্নীতিবিরোধী কাজগুলোকে গতিশীল করব। কিন্তু কেউই স্পষ্ট করে বলছেন না কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের দুর্নীতিবিরোধী কাজগুলো ধাবিত হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে প্রতিটি দলেরই ইশতেহারে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকা জরুরি। দুর্নীতি দমন কমিশন এ ব্যাপারে কথা বললে বিষয়টি আরো গতিশীল ভূমিকায় আসতে পারে বলে মনে করি। দুদক আরেকটি কাজ করতে পারে, তা হলো মানুষকে ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতনতাবিষয়ক যে আইন ও তথ্যগুলো আছে তা পৌঁছে দেওয়া । মানুষ যদি সঠিক আইন ও তথ্য জানে তবে ভোটদানে উৎসাহিত হবে এবং সঠিক ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
সরকার দুর্নীতি বন্ধে অনেক কাজ হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে দুর্নীতি বন্ধে ১০৬-এ ফ্রি কলের সুযোগ ছিল উল্লেখযোগ্য। দুর্নীতি বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আরো শক্তিশালীভাবে কাজ করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আশা করি দুদক তার সক্ষমতা প্রকাশে বিশেষ বিশেষ নীতিমালা গঠন করবে, আইন ও বিচারিক কাজগুলো আরো দ্রুতগতিতে শেষ করার জন্য কাজ করবে এবং অনলাইন মাধ্যমকে আরো গতিশীল করে মানুষের একেবারে কাছে এসে মানুষের অধিকার আদায়ে মূল ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হবে।
লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর