বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জনশক্তিসহ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। দেশটির বাদশাহর নির্দেশে ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মনোনীত দুই মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলও এসেছে বাংলাদেশে। আর এরই মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ সংক্রান্ত দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারকেও সই করেছে সৌদি প্রতিনিধিদলটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তার কার্যালয়ে এই চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর হয়েছে। সৌদি প্রতিনিধিদের সঙ্গে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থার প্রতিনিধিরা। এর আগে গত বুধবার রাতে সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়কমন্ত্রী মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাভি এবং অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন মাজিদ আল-তাওজরির নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশে পৌঁছায়। দলের সঙ্গে রয়েছেন সৌদি উন্নয়ন তহবিল ও সরকারি বিনিয়োগবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ দেশটির শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে সৌদি আরবের দুই মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পরে সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি বাদশাহ বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে আগ্রহী বলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী মাজিদ বৈঠকে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি প্রতিনিধিদলের এই সফরে অন্তত ১৬টি প্রকল্পে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
চুক্তি ও সমঝোতার মধ্যে রয়েছে- ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সৌদি আরবের আলফানার কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি)। ইজিসিবির পক্ষে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অরুণ কুমার সাহা এবং আলফানার কোম্পানির পক্ষে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট খালিদ বিন কাবেল আল সুলামি এ চুক্তিতে সই করেন। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনে সৌদি কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। জেনারেল ইলেকট্রিকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান আহমেদ ভূইয়া এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন নাজিব আল হাজি চুক্তিতে সই করেন। বাংলাদেশ সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং সৌদি আরবের আল মাম ট্রেডিং এস্টেটের মধ্যে জনশক্তি রফতানি বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।
বিএমইটির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এসকে রফিকুল ইসলাম এবং আল মামের চেয়ারম্যান ইউসুফ আবদুল্লাহ আল মুশির এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন। ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ প্ল্যান্ট নির্মাণে সৌদি আরবের ইউসুফ আল রাজি কনস্ট্রাকশন এস্টেটের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম এবং বিনিয়োগকারী কোম্পানির ইউসুফ বিন আবদুল্লাহ আল রাজি এই সমঝোতায় সই করেন। সৌদি-বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সৌদি আরবের আল আফালিক গ্রুপ (এএইচ গ্রুপ) এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম এবং এএইচ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল আজিজ এস আলফালেক এতে সই করেন। বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) এবং রিয়াদ ক্যাবলস গ্রুপ অব কোম্পানির মধ্যে তার উৎপাদনের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম এবং রিয়াদ ক্যাবলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুস্তাফা মোহাম্মদ রাফিয়া এই এমওইউতে সই করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই সৌদি মন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়ে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘তারা সৌদি বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্সের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এখানে এসে তারা যা দেখেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন, তার খুব প্রশংসা করেছেন।’ বিশেষ করে বাংলাদেশের রফতানি আয় ১০ বিলিয়ন থেকে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাভি বাংলাদেশ-সৌদি সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন বলেও প্রেস সচিব জানান।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের দেশকে উন্নত করতে চাই। জায়গা কম হলেও আমাদের জনসংখ্যা প্রচুর। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে বিনিয়োগকারীদের জমি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের বিরাট অভ্যন্তরীণ বাজারের কথাও তিনি তুলে ধরেন।
লালমনিরহাটে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আইন পাস করা হয়েছে।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম।