চলমান মহামারি করোনাভাইরসের মধ্যে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। এতে চরম ক্ষুব্ধ নিম্নআয়ের মানুষেরা। তারা বলছেন, লকডাউনে এমনিতেই আয়ের পথ বন্ধ। তারপর বেড়েছে চালের দাম। এভাবে বাড়তে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ না থাকায় চালের দাম বেড়েছে।
শুধু চাল নয়, নতুন করে বেড়েছে সবজি ও মাছের দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা পর্যন্ত। আর ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে কমেছে ১০ টাকা।
চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে ৪-৫ টাকা। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা। গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। বাজারে এখন মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা, গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি। এখন পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৪৮ টাকা কেজি। বাজারে নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৬৭ কেজি। টিসিবির হিসাব বলছে, গত এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
নবাবগঞ্জ বাজরের চাল ব্যবসায়ী পারভেজ মিয়া বলেন, বন্যা, বৃষ্টি ও লকডাউননের কারণে বাজারে চাল সরবরাহ কম। তাই দাম একটু বেড়েছে। তবে শিগগিরই চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে বরং আরো বাড়তে পারে। একই বাজারে কথা হয় সিএনজিচালক আলকাস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে আয়ের সব পথ বন্ধ। বাড়িতে বসে খাওয়া ছাড়া তো আর উপায় নেই। ধার-কর্জ করে চলছি। তারমধ্যে বাজারে এসে দেখি চালের দাম বেড়েছে। সাথে সবজি ও মাছের। এই কঠিন মুহূর্তে এসব জিনিসের দাম বাড়লে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকবে না। সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। সবচেয়ে থেকে বেশি বেড়েছে গাজরের দাম। এক সপ্তাহ আগে কেজি ৮০ টাকা কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। একইভাবে ৮০ টাকা কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।
হাতিরপুল বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মোমিন মিয়া বলেন, বেগুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। ৫০ টাকা কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঝিঙে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বাজারে দেখা যায়, করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। চিচিঙ্গার কেজি সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়ে গেছে। ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম বেড়ে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আগের মতো ঢেঁড়শ ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বাজারে করল্লা ৬০ টাকা, চাল কুমড়া কেজি ৪০-৫০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি ৪০ টাকা। শসার দাম ৪০ টাকা। কাঁকরোল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা।
আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। আর দেশি আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের কেজি গত সপ্তাহের মতো ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে বেশি। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। রূপচাঁদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। চিংড়ি আগের মতো ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়লেও কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ টাকা কেজি। ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগি এবং লাল লেয়ার মুরগি। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। আর সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা।
আর ফার্মের মুরগির ডিম ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। অবশ্য গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা। আর খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।
শুকনা মরিচ প্রতিকেজি ১৫০-২৫০ টাকা, রসুনের কেজি ৮০-১৩০ টাকা, হলুদ ১৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনির প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা। এছাড়াও প্যাকেট চিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮-৮০ টাকায়।