শীতকালীন সবজি মুলার আগাম চাষ করে বড় লাভের আশা করলেও ঠাকুরগাঁওয়ের শত শত কৃষকের সেই আশার গুড়ে বালি পড়েছে। দাম না পাওয়ার হতাশায় ক্ষেতে মুলা রেখেই জমি চাষ দিচ্ছেন তারা। তবে কৃষিবিদরা বলছেন, এই ঘটনাটি কৃষকদের জন্য ‘মন্দের ভালো’ হয়েছে। পরবর্তী ফসল ধানের জন্য সেচ ও সারের খরচ কিছুটা কমবে তাদের।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, এ বছর জেলায় সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। এর মধ্যে এককভাবে কেবল মুলারই আগাম চাষ হয়েছে কমপক্ষে ৫০০ হেক্টর জমিতে। অনুকূল আবহাওয়া পেয়ে ফলনও ভালো হয়েছে। এই অবস্থায় একই সঙ্গে বেশিরভাগ চাষির মুলা বাজারে আসায় দাম কম পাচ্ছেন তারা। তা ইমুলার স্থানীয় বাজারদরের পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো বিক্রি করার চেয়ে জমিতে রেখেই চাষ দিচ্ছেন কৃষকরা।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজারে এখনো ২০ টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে না প্রতিকেজি মুলা। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে চাষিদের মুলার দাম উঠছে প্রতি কেজি দৃই থেকে তিন টাকা।
প্রায় সপ্তাহখানেক ধরেই দেখা যাচ্ছে, সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার মুলা চাষিরা ফসল না তুলেই জমিতে হাল চাষ দিচ্ছেন। অন্য ফসলের উৎপাদনের জন্য করছেন জমি তৈরি। কৃষকরা জানান, মৌসুম শুরু হলেও তারা মুলার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। উৎপাদন খরচের তিন ভাগের একভাগও মিলছে না। মুলা উত্তোলন ও বাজারজাত করতে যে খরচ হবে সে টাকাও উঠছে না। তাই বাধ্য হয়ে ক্ষেতে মুলা রেখেই অন্য ফসল উৎপাদনের জন্য জমি তৈরি করছেন।
সদর উপজেলার মরিচপাড়া এলাকার মুলা চাষি শাহীন আলী জানান, তিনি এক একর জমিতে মুলার চাষ করেছিলেন। ফলনও ভালো হয়েছিল। প্রথম দিকে দামও পাচ্ছিলেন ভালো। কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে বাজারে এক টাকা বা দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এক বস্তা বাছাই করা মুলার দাম এখন ১০০ টাকা। তাই আর মুলা তুলছি না, মুলাসহ জমিতে হাল দিচ্ছি।
একই কথা বলেন গিলাবাড়ী এলাকার মুলা চাষি নাসিমুল হক। তিনি বলেন, চার একর জমিতে মূলা চাষ করেছি, কিন্তু বিক্রি করতে না পেরে মূলাসহ জমিতে হাল দিচ্ছি। এখন ওই জমিতে আলু চাষ করব।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন বলেন, কৃষকদের আমরা যে পরিকল্পনা দিয়ে ছিলাম সে অনুসারে তারা সবজি চাষ করেনি। অনেকেই একই ধরনের ফসল চাষ করেছেন। আবার বাজারেও তুলেছেন একই সঙ্গে। ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা কমে গেছে অনেক, যার ফলে দামও কমে গেছে স্বাভাবিক নিয়মে। মুলার স্থানীয় বাজারদরের এই অবস্থায় সেগুলো বিক্রি করার চেয়ে জমিতে রেখেই চাষ দিয়ে বরং কৃষকরা সঠিক কাজ করেছেন বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, এই মুলা জমির প্রাকৃতিক খাবার হিসেবে কাজ করবে। এ ছাড়া মুলা ডিকম্পোস্ট হতে প্রায় ৩০ দিনের মতো সময় লাগে। সে সময়টাতে জমির আর্দ্রতা ঠিক রাখতেও এটি সহায়তা করবে। বাড়তি সেচের প্রয়োজন হবে না।
কৃষিবিদ আফতাব হোসেনের মতোই বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাজিম উদ্দীন। তিনি বলেন, বিষয়টি কৃষকের জমির জন্য মন্দের ভালো হয়েছে। ওইসব জমিতে পরে আলু বা ধানের ভালো ফলন পাবেন কৃষকরা। তবে মুলা চাষের জন্য কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে তা যেন আগামীতে না হয় সে জন্য তাদের সচেতন করতে আরো বেশি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।