দাম কমেনি আটা ও ময়দার

সংগৃহীত ছবি

পণ্যবাজার

দাম কমেনি আটা ও ময়দার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১ অগাস্ট, ২০২২

গম রপ্তানিতে কৃষ্ণসাগর ব্যবহারে একমত হয়ে চুক্তি করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। ফলে রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে গম আমদানির বাধা উঠে গেছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারেও গমের দাম কমেছে। এর প্রভাবে দেশের পাইকারি বাজারেও কমেছে আটা ও ময়দার দাম। কিন্তু দাম কমছে না খুচরা বাজারে। এখনো প্রতি কেজি আটা এবং ময়দা বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামে। কবে খুচরা বাজারে আটা-ময়দার দাম কমবে তা জানেন না কেউই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের এই সুফল পেতে আরো কিছু সময় প্রয়োজন। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমা গম এখনো দেশে এসে পৌঁছায়নি।

আন্তর্জাতিক বাজারের হালনাগাদ তথ্যে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। দেশের পাইকারি বাজারেও আটার দাম কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। বিশ্ববাজারে বর্তমানে প্রতি টন গম বিক্রি হচ্ছে ৩৪২ ডলারে। যা গত মে মাসে বেড়ে উঠেছিল ৪৩৮ ডলারে। ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে ৩ থেকে ৪ শতাংশ। দেশের পাইকারি পর্যায়ে কমেছে আটা-ময়দার দামও। বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আটার দাম ২ হাজার ১ শ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১ হাজার ৭ শ টাকা। বস্তাপ্রতি ময়দার দামও কমেছে প্রায় ২০০ টাকা। এর কোনো প্রভাব নেই দেশের খুচরা বাজারে।

এদিকে যুদ্ধচলাকালীন খাদ্যশস্য রপ্তানির জন্য কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলো খুলে দিতে জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি চুক্তি সই করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এই যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষের পদধ্বনির মধ্যেই খাদ্যশস্য রপ্তানির জন্য কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো খুলে দিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। গত ২২ জুলাই চুক্তিটি সই করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এর ফলে খাদ্যশস্য নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কেটে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

জানা গেছে, খাদ্যশস্য রপ্তানিতে রাশিয়া ও ইউক্রেন চুক্তি সইয়ের পর দেশের বাজারেও গম ও আটা-ময়দার দাম আর বাড়েনি। তবে বিক্রেতারা বলছেন, খুচরা পর্যায়েও দ্রুত দাম কমতে শুরু করবে। এদিকে টিসিবির হিসাব বলছে, এক বছরে আটা-ময়দার দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৫৬ ভাগ।
জানা গেছে, এই মুহূর্তে ইউক্রেনে দুই কোটি টন গম আছে। রাশিয়ায় আরো বেশি পরিমাণ গম মজুত আছে। যুদ্ধের কারণে এখন রাশিয়া ও ইউক্রেন কেউই তা রপ্তানি করতে পারছে না।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায় এবং খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায়। যদিও বাজারভেদে দাম কমছে খুব সামান্য। ব্যবসায়ীদের দাবি, বিশ্ববাজারের কম দামের গম এখনো বাজারে আসেনি। বর্তমানে যে গম দিয়ে এখন আটা-ময়দা করা হচ্ছে সেগুলো আগের কেনা। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ার কারণে বিপদে আছেন ব্যবসায়ীরা। এর ওপর পরিবহন খরচও কমেনি। যা একটি বড় কারণ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। ভারত থেকে গম আসছে না। গম আনতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে। এ দুটি দেশ থেকে গম আসতে বেশ সময়ের প্রয়োজন। এছাড়া কৃষ্ণ সাগরের গমের কোনো শিপমেন্ট এখনো এসে পৌঁছায়নি।

জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গমের আমদানি কমেছে অনেক। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে মাত্র ৪০ লাখ টন গম। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে গম আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৪ লাখ ৪৩ হাজার টন। ২০১৯-২০ অর্থবছর গম আমদানি হয়েছিল ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার টন।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২০ জুলাই পর্যন্ত সরকারের গুদামে গম মজুতের পরিমাণ এক লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন। বিশ্বে গম আমদানিকারক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

এ প্রসঙ্গে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা জানিয়েছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর ফলে গম আমদানির জন্য বিকল্প দেশের সন্ধান করি, এবং বেশি জাহাজ ভাড়া পরিশোধের মধ্য দিয়ে ভিন্ন দেশ থেকে গমও ভুট্টা আমদানি করে বাজারে আটা ময়দার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। এখন রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করার সুযোগ ফিরে আসার ফলে আমাদের মধ্যেও অনেকটা স্বস্তি কাজ করছে। আশা করছি, আমদানি শুরু হলেই দেশের বাজারেও দাম কমবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলালউদ্দিন জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তি খুবই ভালো সংবাদ। এই চুক্তি যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে ওখান থেকে আমাদের দেশে গম আসবে। গম এলে আমাদের গমভিত্তিক যেসব খাদ্য আছে তার দাম কমে আসবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads