সরবরাহ বাড়ায় গত এক সপ্তাহ থেকেই কমছে ইলিশের দাম। এখন যে দামে ইলিশ মিলছে, সেটা এ বছরের সর্বনিম্ন। এতে বাজারে যারাই আসছে, তাদের আনাগোনা এখন ইলিশের দোকানেই। কেউ কিনছেন, কেউবা আরো কম দামে পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করছেন এক-দু’দিন। সব মিলে সরগরম এখন ইলিশের বাজার। এতে কমে এসেছে অন্যান্য মাছের দামও। শুধু বাজার নয়, পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতেও এখন ভ্রাম্যমাণ ইলিশ বিক্রেতাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ফেরি করে বিক্রি করায় এসব বিক্রেতার কাছে ইলিশের দামও কিছুটা কম। তবে সেসব কিনে মান নিয়ে অভিযোগ করছেন অনেকে।
এদিকে আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ইলিশের ওপর আসছে নিষেধাজ্ঞা। সেটা চলবে পরবর্তী ২২ দিন। এ সময় শুধু ইলিশ ধরা নয়, পরিবহন, মজুত ও বিক্রিও বন্ধ থাকবে। ফলে বর্তমানে বাড়তি সরবরাহ থাকায় বিক্রেতাদের এ ইলিশ বিক্রির বেশ চাপ রয়েছে। দাম কমার এটাই প্রধান কারণ।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট-বড় সব ধরনের ইলিশের দামই কমেছে। বাজারে ছোট আকারের ইলিশ ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৯০০ গ্রাম-এক কেজি ওজনের ইলিশ মিলছে হাজার টাকার মধ্যে। সপ্তাহ ব্যবধানে যা কেজিপ্রতি ২০০ টাকা কম। তবে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ কম থাকায় সেসব মাছের দামও তুলনামূলক বেশি। আর ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের সরবরাহ সবচেয়ে বেশি থাকায় এসব প্রতি হালি ২ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর আধা কেজি ওজনের ইলিশের হালি ১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু এর চেয়ে কম ওজনের ইলিশ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকার মধ্যে।
এদিকে গত দুই বছর থেকে এ বছর দেশে ইলিশের প্রাচুর্য ফিরেছে কিছুটা দেরিতে। এ বছর আগের মতো (আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে) ততটা বিস্তৃতি লক্ষ করা যায়নি রুপালি এ মাছের। সেটা হয়েছিল প্রাকৃতিক কারণে। অন্য বছরের থেকে এ বছর পাঁচ কারণে ইলিশ দেরিতে এসেছে দেশের ভেতরের নদ-নদীতে। তবে দেরিতে হলেও আগের সেই প্রাচুর্য এখন ফিরছে বলে জানিয়েছেন ইলিশ বিশেষজ্ঞরা।
সদ্য সমাপ্ত ‘জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা’ প্রকল্পের পরিচালক জাহিদ হাবিব বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে ইলিশের প্রজনন বিলম্বিত হয়েছে। এরপর অপর্যাপ্ত বৃষ্টি, নদীতে ঢল না থাকায় কিছুদিন আগে পর্যন্ত সেভাবে ইলিশ মেলেনি। তবে এ বছরও সমুদ্রে ইলিশের কোনো কমতি নেই। এখন থেকে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।
এদিকে শেষ পর্যন্ত কম দামে ইলিশ কিনতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করে গতকাল রামপুরা বাজারে এনামুল হক বলেন, গত এক-দেড় মাস ইলিশের দাম কমার জন্য অপেক্ষা করেছি। ভেবেছিলাম এ বছর বুঝি আর ইলিশের দাম কমবে না। কিন্তু শেষপর্যন্ত কমেছে। তবে গত বছরের থেকে এখনো দাম কিছুটা বেশি।
বাংলাদেশের জাতীয় এ মাছের উৎপাদনে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে ২০০৭ সাল থেকে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ২ লাখ ৯০ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৯৬ হাজার টনে। অর্থাৎ বিগত আট বছরের ব্যবধানে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। উৎপাদন বাড়ার কারণে কম দামে ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।