রতন বালো :
নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ১৯৭০-৭১ সালে মোট খাদ্যশস্য (চাল ও গম) উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন, সেখানে ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন (চাল, গম ও ভুট্টা) ৪ কোটি ৪৩ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। চাল উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। গত ৫০ বছরে চালের উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে চার গুণ, গম দুই গুণ, ভুট্টা দশ গুণ, আর সবজি পাঁচ গুণ। ফসলের পাশাপাশি দেশীয় ফল, কফি, কাজুবাদাম, গোলমরিচ, ড্রাগনফলসহ অপ্রচলিত ফলের উৎপাদন প্রতি বছর বাড়ছে, সে সাথে ফল আমদানি কমছে।
বর্তমান সরকার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকলের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। যান্ত্রিকীকরণে নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকার বৃহৎ প্রকল্প। এর মাধ্যমে সারাদেশে অঞ্চলভেদে শতকরা ৫০ ভাগ থেকে শতকরা ৭০ ভাগ ভর্তুকিতে কৃষকদেরকে কৃষিযন্ত্র দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিপণ্যের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে ২টি খসড়া রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধিতে উত্তম কৃষি ফসল উৎপাদন, রপ্তানি উপযোগী জাতের ব্যবহার, আধুনিক প্যাকিং হাউস নির্মাণ, অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব স্থাপনসহ নানান কাজ করা হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক (এপিআরসি) সম্মেলনের ৩৬তম অধিবেশন এক প্রতিবেদনে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি এসব তথ্য তুলে ধরেন। চার দিনব্যাপী এ সম্মেলন গত ৮ মার্চ উদ্বোধন করা হয়। সম্মেলন শেষ হচ্ছে আজ শুক্রবার ।
কৃষিমন্ত্রী জানান, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবুজ বিপ্লবের সূচনা করেন। জাতির পিতার কৃষি বিপ্লবের সেই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তিনি জানান, কৃষিক্ষেত্রে ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যে আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটি সারা বিশ্বের একটি বিরল ঘটনা বলে জানান ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
সারা দেশে সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিপণ্যের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে ২টি খসড়া রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে বলে কৃষিমন্ত্রী জানান। এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও কোডিড-১৯ এর চরম ক্রান্তিকাল ও সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন। এ প্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক পদক্ষেপে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ বোরো উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ টন, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ ছাড়াও পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে এক বছরেই কৃষি মন্ত্রণালয় ৭ লাখ টন উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি জানান, এ অধিবেশন আঞ্চলিক অগ্রাধিকার, কোভিড-১৯ এর প্রভাব, কৃষির অবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনার অন্যতম একটি ফোরাম। সম্মেলনটিতে অংশীদারিত্ব, উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির উদাহরণ তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ক্রম উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিতকরণ এবং এ সংশ্লিষ্ট পণ্যের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং চাহিদা পূরণ করা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের সার্বিক উন্নয়ন, সমপ্রসারণ, প্রযুক্তিভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এ মন্ত্রণালয় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী জানান, গত ১২ বছরে দুধ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ, মাংস উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ এবং ডিমের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। ছাগলের সংখ্যা ও মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ, গবাদি পশু উৎপাদনে ১২তম। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মাছ আহরণে বাংলাদেশ ৩য় এবং অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনের ৫ম অবস্থানে রয়েছে। ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে ১ম হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের ইলিশ ২০১৭ সাল থেকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী জানান।