একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত যশোর-২ আসনের প্রার্থী সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিতে হাইকোর্টের আদেশ আটকে গেছে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে। গতকাল শনিবার রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে চেম্বার জজ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ আদেশ দেন। সকালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক সাবিরা সুলতানার হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে।
আজ রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে। সেখানে নির্ধারিত হবে বিষয়টির ভাগ্য।
সাধারণত ছুিটর দিনে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার নজির বেশি নেই। ২০০৬ সালে এবং ১৯৯৯ সালে রাতে চেম্বার জজ আদালত বাসায় জরুরি বিষয় নিষ্পত্তি করেছিলেন। সাবিরা সুলতানার আবেদনে হাইকোর্টের আদেশ অন্য দণ্ডিতদের নির্বাচনের পথ খুলে দিতে পারে এবং আপিল চলাকালে দণ্ড স্থগিত হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার হাইকোর্টের আগের আদেশের বিপরীতমুখী হওয়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার।
গত শুক্রবার আপিলের এ সিদ্ধান্ত নেয় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। সে অনুযায়ী গতকাল শনিবার সকালে স্থগিতের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদনের ওপর শুনানি শেষে স্থগিতাদেশ দেন চেম্বার জজ আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ হাসান চৌধুরী। সাবিরা সুলতানার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আমিনুল ইসলাম। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান ও এবিএম বায়েজিদ।
আদেশের পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ আদেশের ফলে সাবিরা সুলতানার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ আর থাকল না, যদি না আপিল বিভাগ কাল ভিন্নতর কোনো আদেশ দেন। সে পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত থাকছে। এটা জরুরি ভিত্তিতে করা হয়েছে কারণ এর সঙ্গে সাংবিধানিক প্রশ্ন জড়িত।’
সাবিরা সুলতানা বিএনপি সমর্থিত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-২ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীও তিনি। দুর্নীতির মামলায় দণ্ড থাকায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার। গত বৃহস্পতিবার সাবিরা সুলতানার আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের একক বেঞ্চে তার দণ্ড স্থগিত করেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ (১) ধারা এবং সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করেন আদালত।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, কোনো ব্যক্তির দণ্ড আপিল বিভাগে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত, তার সাজা বা দণ্ড চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে না। আপিল চলাকালে তার সাজা বা দণ্ড স্থগিত হলে তিনি নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হবেন না।
আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, এই আদেশের পর যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান, তারা হাইকোর্টে সাজা বা দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
গত বুধবার বিচারিক আদালতে কোনো ব্যক্তি দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চের দেওয়া আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ওই আদেশের ফলে বিচারিক আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট দণ্ড স্থগিত করা হলে কিংবা আপিল চলাকালে কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনে দুদকের মামলায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানাকে গত ১২ জুলাই ঢাকার বিশেষ আদালতের বিচারক শহিদুল ইসলাম দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ সালের ২৬ (২) ধারায় তিন বছর ও ২৭ (১) ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে দুই ধারায় পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরো তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। সাবিরা সুলতানার এক কোটি ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও আদেশ দেওয়া হয়।
গত ১৭ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ ৭-এর বিচারক মো. শহিদুল ইসলামের আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিলের শর্তে জামিনের আবেদন করেন তিনি। আদালত শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠান। গত ৬ আগস্ট তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
পরে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে সাবিরা সুলতানা সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে শুনানিতে অপারগতা প্রকাশ করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এরপর নিয়ম অনুসারে মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এটি শুনানির জন্য পাঠান। শুনানি শেষে দণ্ড স্থগিত করা হয় সাবিরা সুলতানার।
সাবিরা সুলতানা ২০০৯ সালের ২৪ মে ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকা সম্পদের হিসাব জমা দেন দুদকে। পরবর্তীতে দুককের অনুসন্ধানে দেখা যায় ৪৫ লাখ টাকার সম্পদের বিষয়ে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়াসহ এক কোটি ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকার সম্পত্তি বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। পরে ২০১০ সালের ২০ জুলাই দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ আহমেদ বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন। একই বছর ২৫ জুলাই ৯ জনকে সাক্ষী করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।