জীব ও পরিবেশ

দখলে মৃতপ্রায় কালীগঙ্গা নদীর সচল হবে গতিপথ

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৮ অগাস্ট, ২০২৩

আকরামুজ্জামান আরিফ,কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :

বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর শাখা নদী কালীগঙ্গায় পানিপ্রবাহ না থাকায় এখন মৃতপ্রায় এই নদী। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শেষ প্রান্ত কুমারখালী উপজেলার ছেউরিয়া গ্রামে কালীগঙ্গার উৎসমুখ।


অভিযোগ রয়েছে,বাঁধ দিয়ে রেলপথ ও সড়ক নির্মাণের পর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী,ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নদী দখল করে মাছ চাষ,ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এরপর থেকেই প্রায় ৩৫০ মিটার চওড়া নদীটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। ক্রমাগত এ অবস্থা চলতে থাকলেও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে দখলের অভিযোগ স্বীকার করে কলীগঙ্গা নদীর গতিপথ সচল রাখতে এসব দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।


বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন,”জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদীর গতিপথ সচলসহ অন্যান্য বিষয়গুলো দেখে থাকেন। তারা নদী রক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্পের প্রস্তাবনা দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের অংশ হিসেবে নদীর দুই পাশের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে।”


নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ২৫-৩০ বছর আগে এলাকাবাসী কালীগঙ্গা নদীর উৎসমুখ বন্ধ করে দিলে নদীটি শাসরুদ্ধ হয়ে পড়ে। উৎসমুখ থেকে কয়েকশ গজ দূরে লালন শাহ্’র মাজারের সামনে নদীর বিশাল এলাকা ভরাট করে মাঠ বানানোর পর থেকে নদীটি দখল শুরু করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। নদীর উৎসমুখ বন্ধের আগে লাহিনী এলাকায় নদীর মাঝখানে বাঁধ দিয়ে ব্রিটিশ সরকার রেললাইন নির্মাণ করে এবং বাঁধের পাশে মহাসড়ক স্থাপন করা হয়েছে। তখন থেকে কালীগঙ্গা গতিপথ হারাতে শুরু করে।


নদী পাড়ের বাসিন্দা চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামূল হক মনজু বলেন, ”এই নদীতে এক সময় মাছ ধরতাম, গোসল করতাম। স্থানীয়রা ঘরের কাজ, কৃষিকাজ সব নদীর পানি দিয়েই করতো। এখন নদীতে পানি নেই,দখল হয়ে গেছে। নদী দখলমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। তারাই তাদের অংশটুকু দখলমুক্ত করে বুঝিয়ে দিবেন।


নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া অংশের ছেউরিয়া থেকে শুরু করে লাহিনী, সাঁওতা, কমলাপুর, পিয়ারপুর, শালঘরমধুয়া, বাঁশগ্রাম, কুশলীবাসা, হরিনারায়ণপুর পর্যন্ত নদীটির দুই পারে অসংখ্য ঘরবাড়ি,দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নদী দখল করে বিভিন্ন ফলফলাদির গাছ লাগিয়ে বাগান তৈরি করেছে প্রভাবশালীরা। আবার অনেকে নদীর স্থানে স্থানে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছে। আবার কেউ বাধ দিয়ে মাছ চাষ করছে।


বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল(বিআরটিএন)কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি খলিলুর রহমানের মজু বলেন, “ঐতিহ্যবাহী কালীগঙ্গা নদীর উৎস মুখে প্রতিবন্ধকতা অপসারণ,গতিপথ সচল রাখা,নদী প্রশস্তকরণ ও কালীগঙ্গাকে আবার নতুন রূপে জাগিয়ে তুলতে আন্দোলনে নামেন বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল।”


জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর দাবি তুলে ধরা হয়। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মনজুর আহমেদ চৌধুরী ও পরিচালক ড.কবিরুল ইসলাম কালীগঙ্গা নদী বাঁচাতে ইতিবাচক সাড়া দেন।
পরিবেশবিদ গৌতম কুমার রায় বলেন, “জীববৈচিত্র্য রক্ষা,ফুলের পরাগায়ন ও দেশীয় মাছের উৎপাদন বিকাশে কালীগঙ্গা নদীর গতিপথ সচল ও নদী প্রশস্তকরণের বিকল্প নেই। অনেকদিন ধরেই এই দাবি উঠেছে। দখলবাজদের আগ্রাসনে নদীর অস্তিত্ব এখন নর্দমায় রূপ নিয়েছে। কালীগঙ্গাকে বাঁচাতে বার বার দাবি উঠলেও কোন দৃশ্যমান কার্যক্রম এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। তবে নদী বাঁচাতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন যে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা যেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয়।”


মুঠোফোনে কথা হয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পরিচালক ড.কবিরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, “কুষ্টিয়া জেলার অভ্যন্তরীণ এই নদীটি দখলে ও পানিশূন্যতায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। তবে নদী অবৈধ দখলমুক্ত করা চ্যালেঞ্জিং মন্তব্য করে এই কর্মকর্তা বলেন,অবৈধ দখলদারদের চিহিৃত করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনকে এই অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য বলা হয়েছে। ”


ড.কবিরুল ইসলাম আরও বলেন,জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড.মজিবর রহমান হাওলাদার সরজমিনে কালিগঙ্গা নদী পরিদর্শন করেছেন। এরপর বর্তমান চেয়ারম্যান দুই দফায় পরিদর্শন করেছেন। কালীগঙ্গা নদীর গতিপথ সচল রাখতে একটি কমিটিও করা হয়েছে। কালীগঙ্গার গতিপথ সচল রাখার জন্য নদী রক্ষা কমিশন রেলওয়ে ও সড়ক বিভাগের সাথে কথা বলেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বাঁধের নিচ দিয়ে কালীগঙ্গার পানি প্রবাহের বিকল্প ব্যবস্থা বের করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বাঁধ দেয়া অংশে সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার ব্যাপারে আশস্ত করেছেন। এলজিইডিকে নদীর উৎসমুখে ৯২ মিটার প্রশস্থ সেতু, নদীকে বিভক্ত করা সাঁওতা এলাকায় সাইফুন সেতু নির্মাণ ও বাঁধবাজার অংশে পুনরায় খনন করে কালীগঙ্গার গতিপথ সচল রাখার করার প্রস্তাবনা দিয়েছে নদী রক্ষা কমিশন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads