প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরিকে যেন ডালভাতে পরিণত করেছেন তুষার ইমরান। দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে রানবন্যার মেশিন হিসেবে আখ্যা পাচ্ছেন তিনি। এবার নতুন এক ইতিহাসই গড়েছেন তুষার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দুইবার সেঞ্চুরির কৃতিত্ব যোগ হয়েছে তার নামের পাশে। এমন ঘটনা এই প্রথম। মানে লঙ্গার ভার্সন ক্রিকেটে এক ম্যাচের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেছেন তুষার। চলতি বছরই বিসিএলে পূর্বাঞ্চলের বিরুদ্ধে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। এবার জাতীয় ক্রিকেট লিগে খুলনার হয়ে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। তুষার কীর্তির দিনে গতকাল ক্যারিয়ারে তৃতীয় ডবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ঢাকা বিভাগের রনি তালুকদার। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে মজিদের সঙ্গে রনির ওপেনিং জুটিতে এসেছে রেকর্ড ৩৫০ রান- যা জাতীয় লিগে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ।
তুষারের ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির কারণে জমে উঠেছে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের মধ্যকার খেলা। প্রথম ইনিংসে ২১০ রানে অলআউট হয়েছিল খুলনা। যেখানে তুষার ইমরান করেছিলেন ১০৪ রান। জবাবে মিজানুর ও জহুরুল ইসলামের দারুণ সেঞ্চুরিতে রাজশাহীর সংগ্রহ ৫৫২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিন শেষে খুলনার সংগ্রহ ২ উইকেটে ১৮২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে বরাবর ১০০ রানে অপরাজিত আছেন তুষার ইমরান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তুষারের এটি ৩০তম সেঞ্চুরি। তার ধারেকাছে নেই কেউ। তুষারের সঙ্গে ৭২ রানে অপরাজিত আছেন এনামুল হক বিজয়।
৬ উইকেটে ৪৪৬ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল রাজশাহী। ৯১ রানে অপরাজিত থাকা জহুরুল গতকাল পান সেঞ্চুরির দেখা। শুধু তাই নয়, দল অলআউট হলেও ১৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ২৯০ বলের ইনিংসে ২০ চার হাঁকিয়েছেন জহরুল ইসলাম। সানজামুল করেন ৬৪ রান। বল হাতে এদিন চমক দেখান খুলনার আফিফ হোসেন। ৬৬ রানে তিনি তুলে নিয়েছেন ৭ উইকেট। তৃতীয় দিন শেষে খুলনার চেয়ে ১৬০ রানে এগিয়ে রয়েছে রাজশাহী। শহীদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে ম্যাচের শেষ দিনে আজ কী রোমাঞ্চ অপেক্ষা করছে তা-ই দেখার বিষয়।
প্রথম স্তরের অন্য ম্যাচে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে রংপুর ও বরিশালের লড়াই হচ্ছে খুব। ম্যাচটি অনুমিতভাবে এগোচ্ছে ড্রয়ের দিকে। আরিফুলের ডবল সেঞ্চুরিতে রংপুর প্রথম ইনিংসে করেছিল ৫০২ রান। জবাবে তৃতীয় দিন শেষে বরিশালের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩৮৪ রান। দুটি সেঞ্চুরি এসেছে বরিশালের ইনিংসে। ১২৮ রান করেছেন সোহাগ গাজী। তবে ১৩০ রান করেও অপরাজিত আছেন ফজলে রাব্বি। তার সঙ্গে ১২ রানে অপরাজিত থাকা অপর ব্যাটসম্যান নূরুজ্জামান।
দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচে ঘরের মাঠে ফলোঅনে পড়েছে সিলেট বিভাগ। প্রথম ইনিংসে সাদমানের সেঞ্চুরিতে ঢাকা বিভাগ করে ৪২৬ রান। জবাবে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২১৫ রানে গুটিয়ে যায় সিলেট বিভাগ। সর্বোচ্চ ৯১ রান আসে এনামুল হক জুনিয়রের ব্যাট থেকে। ফলোঅনে পড়ে আবার ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিন শেষে সিলেটের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৪৯ রান। শুরুর তিন ব্যাটসম্যান সুবিধা করতে পারেননি। তবে যা করার করেছেন চতুর্থ উইকেটে জাকির ও রাজিন সালেহ। দুজনই তুলে নেন ফিফটি। ৭২ রানে জাকির হোসেন আউট হয়ে গেলেও ৫৩ রানে অপরাজিত আছেন রাজিন সালেহ। তার সঙ্গে ৯ রানে অপরাজিত আছেন অলোক কাপালি। ঢাকা মেট্রোর হয়ে প্রথম ইনিংসে বল হাতে দুটি উইকেট নেওয়া মোহাম্মদ আশরাফুল দ্বিতীয় ইনিংসেও নিয়েছেন দুই উইকেট। একটি করে উইকেট আরাফাত সানি ও আসিফ হোসেনের।
ফতুল্লায় চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে জয়ের সুবাস পাচ্ছে ঢাকা বিভাগ। প্রথম ইনিংসে ঢাকা অলআউট হয়েছিল ২৩৮ রানে। জবাবে চট্টগ্রাম অলআউট হয় মাত্র ১৪২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ঢাকা বিভাগ ১ উইকেটে তোলে ৩৮৫ রান (ডিক্লেয়ার)। উদ্বোধনী জুটিতে রনি ও মজিদ তোলেন রেকর্ড ৩৫০ রান। ১৩২ রান করে বিদায় নেন আবদুল মজিদ। তবে ২২৮ রানে অপরাজিত থাকেন রনি তালুকদার। রনির সঙ্গে ১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন সাইফ হাসান। সব মিলিয়ে জয়ের জন্য চট্টগ্রামকে ৪৮২ রানের টার্গেট দেয় ঢাকা বিভাগ। এ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে গতকাল তৃতীয় দিন শেষে চট্টগ্রামের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৩৫ রান। মানে আজ শেষ দিন জিততে হলে বাকি সাত উইকেটে চট্টগ্রামকে করতে হবে ৩৪৭ রান, যা পাহাড় টপকানোর মতোই দুঃসাধ্য।