প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর বন্যায় ভেঙ্গে যায় স্বপ্নের বসতবাড়ী ও কৃষকের ফসলি জমি। নিঃস্ব হয় হাজার হাজার মানুষ। তবে তারা শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার বুক চিরে জেগে ওঠা চরে ফসল ফলে স্বপ্ন দেখে ঘুরে দাড়ানোর। এবারেও তিস্তার ধু-ধু বালুচর ভরে গেছে ভুট্টা গাছে।
সরজমিনে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা নদীর বিভিন্ন চর এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জনাগেছে, ওই ধু-ধু বালুচরে বর্ষায় আমন ধান চাষ হয় নাই। তাই আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তিস্তার চরে আগাম ভুট্টা চাষ করেছে এলাকার কৃষক। ভুট্টা একটু দীর্ঘমেয়াদি ফসল হলেও এলাকার একমাত্র অর্থকারী ও লাভজনক ফসল হওয়ায় আগাম ভুট্টা চাষ করতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে কৃষকরা। আগাম ভুট্টা ক্ষেতের সবল চারা গাছ আর আবহাওয়ার আদ্রতা দেখে অধিক ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। তিস্তার বালুচরে এবারে ব্যপকহারে চাষ হয়েছে ভুট্টা।
উপজেলার গড্ডিমারী গ্রামের তিস্তার চর এলাকার ভুট্টা চাষী রবিউল ইসলাম বলেন, ভুট্টা আবাদের টাকা দিয়ে সারা বছর পরিবারের ভরন পোষন চালাই। নিজের জমি ১ বিঘা থাকলেও অন্যের ৫ বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়ে ভুট্টা আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমির জন্য ৪৫০০ টাকা দিয়েছি। সার, বীজ ও সেচসহ সকল ব্যয় বাদ দিয়েও প্রতি বিঘা জমিতে কম হলেও ৭/৮ হাজার লাভ হবে। আগাম ভুট্টা আবাদ করলে ফলন ভাল হয় তাই আমি আগাম ভুট্টা চাষ করেছি। একই এলাকার সাইদ সহ অনেকেই বলেন, তামাক, গম চাষ করলে যে লাভ হয় তার চেয়ে দ্বিগুন লাভ হয় ভুট্টায়। প্রতি বিঘায় ৪০/৪৫ মন পর্যন্ত ভুট্টা হয় এবং ব্যয় হয় প্রতি বিঘায় ৭/৮ হাজার টাকা আর বিক্রি করি প্রায় ২০ হাজার টাকা। শুধু মাত্র ভুট্টা ঘরে তোলার সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সকল ভুট্টা চাষি লাভবান হবে।
উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল আলম সাদাত বলেন, এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন সর্বনাশা তিস্তা নদীর ভাঙ্গনকবলিত। অন্য ফসল চর এলাকায় আবাদ করলে ফলন ভাল হয়না, তাই সবাই ভুট্টা চাষ করেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, এ উপজেলায় গত বছরে ভুট্টা চাষ হয়েছিল ১২ হাজার ৮৮৯ হেক্টর জমিতে আর এ বছর ১২ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। আশা করছি আগামীতে কৃষকরা তামাক চাষ ছেড়ে দ্বিগুন হারে ভুট্টা চাষ করবে।