নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে চট্টগ্রামের লোহাগড়া, খুলনার কেশবপুর ও রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রত্যাহার করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে চার থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এসব তথ্য জানান।
আজ তৃতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে যেকোনো ধরনের অনিয়ম ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এ ধাপের নির্বাচনে ২৪ উপজেলায় অতিরিক্ত বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচনী এলাকাগুলোতে শনিবার সারা দিন খবর নিয়েছি। যেখানে যেখানে নির্বাচনে অনিয়ম হওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা রয়েছে, সেসব উপজেলায় আমরা অতিরিক্ত বিজিবি ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছি।
নির্বাচনের বিষয়ে কমিশন খুবই কঠোর অবস্থানে রয়েছে দাবি করে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, যেখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাচ্ছি ওইসব উপজেলা থেকে আমরা তাদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোনো অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে সত্য প্রমাণিত হলে আমরা তাদের প্রত্যাহার করছি। ইতোমধ্যে আমরা তিনজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছি। বেশ কিছু ওসি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। এই ধাপে মাদারীপুরের রাজৈর, চট্টগ্রামের লোহাগড়া এবং চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও কচুয়ার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ইসি সচিব বলেন, আমরা তৃতীয় ধাপের ২৪টি উপজেলায় অতিরিক্ত বিজিবি নিয়োগ করেছি। যেখানে প্রয়োজন, আমাদের কাছে টেলিফোনিক বার্তা এলেই বিজিবির সঙ্গে কথা বলে ওইসব উপজেলাতে অতিরিক্ত বিজিবি নিয়োগ করে দিচ্ছি। রংপুরের মিঠাপুকুরে আমরা ৫ প্লাটুন বিজিবি এবং ৭ প্লাটুন র্যাব ও ১৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করেছি। আমরা যেসব উপজেলায় ন্যূনতম অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা আছে ওইসব এলাকায় অতিরিক্ত নজর দিচ্ছি।
তিনি বলেন, সাধারণত আমরা যেখানে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করি সেখানে অতিরিক্ত শক্তি সঞ্চয় ও আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষার জন্য দুই প্লাটুন বা ক্ষেত্রমতে তিন প্লাটুন বিজিবি নিয়োগ করেছি।
ইসি সচিব বলেন, যেসব উপজেলায় আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্যরা প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন, তাদেরও আমরা সতর্কবার্তা হিসেবে এলাকা ত্যাগ করার নোটিশ দিয়েছি। এ ধরনের কয়েকটি উপজেলায় সংসদ সদস্যদের নোটিশ দিয়েছি। সুতরাং যেকোনো ধরনের ভয়ভীতি, প্রভাব বা চাপের ঊর্ধ্বে থেকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য কমিশন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। আমরা চাইব প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মতো তৃতীয় ধাপেও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে আমরা যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করেছি।
সংসদ সদস্যদের সতর্কের বাইরেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে এভাবে পত্র দিয়ে থাকি ‘আপনি এ ধরনের আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন। সুতরাং আপনি অমুক তারিখের মধ্যে এলাকা ত্যাগ করবেন। তা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ প্রত্যেক ক্ষেত্রে আমরা খেয়াল করেছি, আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্যরা এ ধরনের পত্র দেওয়ার পর এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। পত্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন। যদি সম্মান প্রদর্শন না করা হতো তাহলে আমরা দ্বিতীয় পদক্ষেপে যেতাম।