তিতাসের দুটি কেন্দ্রীয় গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থাপনা (সিজিএস) স্টেশনের যান্ত্রিক ত্রুটিতে রাজধানীর বেশকিছু অঞ্চলে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দেওয়া তথ্যানুযায়ী জানা যায়, গতকাল শনিবার সকাল ৮টায় সংস্থাটির আশুলিয়া ও আমিনবাজারের সিজিএস স্টেশন দুটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এতে করে স্টেশন দুটির আওতাধীন এলাকায় তৎক্ষণাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
তবে হঠাৎ এমন যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার বিষয়ে গ্রাহককে কোনো আগাম নোটিশও দিতে পারেনি তিতাস। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ সিজিএস স্টেশন দুটো বন্ধ থাকায় রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, আমিনবাজার, গাবতলী, মিরপুর, পাইকপাড়া, পীরেরবাগ, কল্যাণপুর, শ্যামলী, রিংরোড, মনসুরাবাদ, কাদিরাবাদ, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, আজিমপুর, হাজারীবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের। পাশাপাশি কারণ সম্পর্কে অবগত না থাকায় অনেকের মধ্যে শঙ্কাও দেখা দেয়। গতকাল সকালে এমন ঘটনা ঘটায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে গৃহিণীদের। সকালের নাশতা প্রস্তুতির সময়েই এমন ঘটনা ঘটায় এসব এলাকা অধিকাংশ বাসিন্দাকেই নাশতা সারতে হয়েছে রেস্টুরেন্টে। আবার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেশকিছু রেস্টুরেন্টের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাঘাত ঘটার খবর পাওয়া গেছে।
আর এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকের অভিযোগ ও কারণ জানাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তিতাসকেও।
মুনসুরাবাদ ৬ নম্বর রোডের বেসরকারি কর্মজীবী নারী হোসনে আরা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি, শনিবারেও অফিস করতে হয়। প্রতিদিন সকালের নাশতার পাশাপাশি দুপুরের খাবার প্রস্তুত করেই অফিসে যেতে হয়। কিন্তু গতকাল শনিবার গ্যাস না থাকায় সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার রেস্টুরেন্ট থেকে আনিয়ে নিতে হয়েছে। দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে না এমনটাই শুনছি, এতে করে কত দিন এমন দুর্ভোগে থাকতে হবে জানি না।
রাজধানীর মিরপুর-১ এর বাসিন্দা মুজাহিদুল ইসলাম শিপলু বলেন, ‘সকাল ৯টায় রান্নার জন্য গ্যাসের চুলা জ্বালাতে গেলে দেখা যায় গ্যাস নেই। পরে তিতাস গ্যাসে ফোন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি জানা যায়। কিন্তু গতকাল এলাকায় গ্যাস বন্ধের মাইকিং হয়নি। আগাম নোটিশ ছাড়া গ্যাস বন্ধের কারণে সকাল থেকেই অনেক ভোগান্তিতে আছি।’
মোহাম্মদপুর চানমিয়া হাউজিংয়ের বাসিন্দা সরকার আব্বাস বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কোনো প্রকার ঘোষণা না থাকায় পুরো এলাকায় গ্যাস বন্ধ থাকায় অনেকের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও শঙ্কাও কাজ করেছে। মাইকিং কিংবা টেলিভিশন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নোটিশ জানাতে না পারলেও যেসব এলাকায় এমন সঙ্কট দেখা দিয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের মোবাইল ফোনে মেসেজ করেও জানাতে পারত।
তবে তিতাসের এমন আচরণের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লালমাটিয়া আবাসিক এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক নূর নবী শেখ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তিতাসের এমন আচরণ নতুন কিছু না। হুটহাট গ্যাস বন্ধ হয়ে যায়। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার শিডিউল ঘোষণা করলেও তা কখনো মানা হয় না। কোনো দিন সকালে গ্যাস আছে তো দুপুরে নেই। আবার রাতে আছে তো সকালে থাকে না। এতে প্রতিনিয়তই আমাদের ভুগতে হচ্ছে। আর তিতাসের হটলাইনে ফোন দিলে কখনো কেউ রিসিভ করে, কখনো করে না। আর কোনো কারণও তারা জানাতে পারে না।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের অপারেশন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান খান বলেন, শনিবারের সমস্যাটি অনকাঙ্ক্ষিতভাবেই ঘটেছে। আর এই ত্রুটি তিতাসের নয়, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল)। তারপরও আমরা গ্রাহকের ভোগান্তি দূর করতে কাজ করছি। হঠাৎ করে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়া সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের গ্রাহকদের আগাম কোনো নোটিশ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়, সিজিএস স্টেশন দুটোর যান্ত্রিক ত্রুটি কত সময়ের মধ্যে মেরামত করে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা যাবে। তবে আমরা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার একটি অফিসিয়াল নোটিশ দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে সমাধান হয়ে গেলেই সরবরাহ শুরু করা যাবে, নাহলে আবারো আমাদের নোটিশ দিতে হবে।