সিনথিয়া সুমি
তারুণ্য জীবনের সেই সময় যখন একজন মানুষ তরুণ থাকে; কিন্তু শৈশব এবং প্রাপ্তবয়স্কের মাঝামাঝি সময়কেও তারুণ্য বলা হয়ে থাকে। আরেকভাবে বলা যায়, যার মধ্যে সৌন্দর্য, সজীবতা, জীবনীশক্তি, উদ্দীপনা ইত্যাদি থাকে সে-ই তরুণ। এর সংজ্ঞা নির্দিষ্ট বয়সের সাথে ভিন্ন হয়। তারুণ্য কখনো সময়ের সঙ্গে বা নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমায় বেঁধে রেখে বর্ণনা করা যায় না।
তারুণ্য মানে না কোনো নিষেধ-বাধা। তারুণ্যের উদ্দামতা সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো দুঃসাহস যেমন রাখে, ঠিক তেমনি এ বয়সে হিমালয় পর্বত জয় করার মতো দুঃসাহস রাখে। জল, স্থল, আকাশ, মহাকাশ, পর্বত কোথায় নেই তারুণ্যের ছাপ। যেখানেই চোখ পড়বে তারুণ্যের জয়গান।
তারুণ্যে উচ্ছ্বাস কখনো কখনো সময়ের সঙ্গে বা নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমায় বেঁধে রেখে বর্ণনা করা যায় না। অসম্ভবকে সম্ভব করতে ঝুঁকি নিতে পারার বয়স তারুণ্য, হুটহাট আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠার বয়স তারুণ্য। তারুণ্যের ছাত্রজীবন মধুর জীবন। এখানে নেই কোনো সাংসারিক জটিলতা, নেই কোনো ভাবনার অবকাশ। জীবন এখানে দীপ্তকণ্ঠে গেয়ে ওঠে- প্রত্যয় আর চেতনার উৎস হচ্ছে তারুণ্য। অনুপ্রেরণার অজেয় শক্তি। যারা নিজ প্রতিভায়, উদ্যমে, কর্মযজ্ঞে বদলে দেয় পৃথিবী তারাই চিরনবীন। তাদের নিয়েই নজরুল-সুকান্ত রচনা করেছেন দ্রোহের-বিপ্লবের হাজারও কবিতা ও গান। তরুণ বয়সটাই হচ্ছে নানা রোমাঞ্চকর কাজে পা বাড়ানোর শ্রেষ্ঠ সময়। আস্থার হাতটা ধরে অজানাকে জানতে বেরিয়ে পড়তে কেবল তরুণরাই পারে। বোরিং বাস জার্নি, ঘুমিয়ে পড়া বা কানে হেডফোন দিয়ে একা একা গান শোনা, বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করা এসব কোনোকিছুরই অবকাশ নেই। হৈহুল্লোড় করে, সবাই মিলে গান গাইতে গাইতে ঘুরে বেড়িয়ে, হাসি ঠাট্টা করে কখন যে কেটে যায় ওই রোমাঞ্চকর দিনগুলো, খবরই থাকে না।
তারুণ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাসে কাটিয়ে দেখা যায় জীবনের রঙিন মুহূর্ত। তরুণ বয়সের বন্ধুরা হয়ে ওঠে জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যাদের ছাড়া একমুহূর্ত চলা যায় না। চিন্তাও করা যায় না কোনো কিছু। আজ এখানে ঘোরাঘুরি তো কাল আরেক জায়গায়। ক্যাম্পাস জীবনের সবচেয়ে আপনজন তো এরাই। সময় সুযোগ পেলেই যাদের সঙ্গে জমে ওঠে গল্প, আড্ডা, গান। তরুণদের আড্ডায় প্রতিদিন যেন আরো নতুন করে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সারা দিনের হাজারো ব্যস্ততা সত্ত্বেও এক ডাকেই কাছে পাওয়া যায় সবাইকে। দিন গড়িয়ে বিকাল বা গোধূলি লগ্নেও যেন কারোরই কোনো ক্লান্তি নেই, ব্যস্ততা নেই, বিকালের নতুন উচ্ছ্বাসে শুরু হয় তরুণদের আড্ডা। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনসহ নানা ব্যস্ততার পর বা এসবের ফাঁকেও আড্ডা চলে অবিরত। নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা, শিল্প-সাহিত্য, রাজনীতি-অর্থনীতি, প্রেম-ভালোবাসা, ক্লাস-পরীক্ষা সবই উঠে আসে এই আড্ডাবাজিতে। গল্পে আর আড্ডায় কাটে সময়। কখনো কখনো গানে গানে ছড়িয়ে পড়ে তারুণ্যের উদ্দামতা, কখনো ছোটখাটো খেলায় মেতে ওঠে তারুণ্য ভরা সবুজ প্রাণ। আর ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপার তো আছেই। সময় সুযোগ মিললেই সব পিছুটান ভুলে তরুণরা চলে যেতে পারেন কাছে কিংবা দূরে কোথাও। প্রকৃতি, সাগর, পাহাড় কিংবা ইটপাথরের নগরে একচিলতে খোলা হাওয়ায় একদল বন্ধু-বান্ধব মিলে ঘুরে আসতে পারেন।
খাওয়া আর গল্পের তালে তালে স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় করে রাখতে পারেন তারুণ্যকে। টুংটাং গিটারের শব্দেও জমিয়ে তুলতে পারেন ক্যাম্পাসের আড্ডা। দলবেঁধে বন্ধুরা মিলে চায়ের কাপে ঝড় তুলতে পারেন তরুণ বয়সে। যার রেশ ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপের চ্যাটিংয়ে পাওয়া যাবে না কখনো।
কিন্তু তাই বলে শুধু আনন্দ আড্ডায় তরুণ বয়সটা পার করা উচিত নয়।
তারুণ্য জয়ের বয়স, অসম্ভবকে সম্ভব করার বয়স। এ বয়সটায় যেমন নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে কাজ করা উচিত, তেমনি দেশের জন্য, দশের জন্য ভালো কাজে আত্মনিয়োগ করেও তারুণ্যকে স্মরণীয় করে রাখতে হবে।
তারুণ্য একটি অভিজ্ঞতা যা নির্ভরতার একটি স্বতন্ত্র রূপ। এর স্তর আকৃতি হতে পারে, যা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী চিহ্নিত করা যেতে পারে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, একটি পৃথক সাংস্কৃতিক রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, যেখানে একটি তরুণ পর্যায়ের নির্ভরতা বলতে বোঝায় যে তারা এখনো তাদের পরিবারের ওপর মানসিকভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল।