তাই বলে এমন হার!

সিকান্দার রাজার বলে বোল্ড বাংলাদেশের ওপেনার ইমরুল কায়েস। গোটা ম্যাচে এমন ব্যাটিং ব্যর্থতা হতাশায় ডুবিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ক্রিকেট

তাই বলে এমন হার!

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ৭ নভেম্বর, ২০১৮

ওপেনিংয়ে আশা জাগিয়েছিলেন লিটন ও ইমরুল। তাদের বিদায়ের পরই যেন ঘোর শঙ্কা সিলেটের আকাশে। টপ অর্ডারে মুমিনুল, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহও যখন সাজঘরে, পরাজয় তখন রীতিমতো চোখ রাঙাচ্ছে। শেষটাতে আর অভাবনীয় কিছু হয়নি। সিলেট টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে ১৫১ রানে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। খেলায় হার-জিত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর প্রশ্ন একটাই, তাই বলে এমন হার?

চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা কঠিন। টেস্টে তা সবারই জানা। কিন্তু হারার আগেই হেরে যাওয়া তো রীতিমতো আত্মসমর্পণ। বাংলাদেশ করেছে সেটাই। জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ৩২১ রান, যা করতে হলে গড়তে হতো রেকর্ড। কারণ এত রান তাড়া করে জেতার নজির নেই টাইগারদের। সর্বোচ্চ ২১৫ তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ, তাও নয় বছর আগে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। সেই স্মৃতিও ফিরে আসেনি সিলেটে। শেষ দশ উইকেট ঝরঝর করে পড়ল দুপুর পৌনে ২টার মধ্যে। মানে পুরোপুরি দেড় দিন বাকি থাকতেই লজ্জার হার। চরমভাবে পরিলক্ষিত হলো লড়াকু মনোভাবের। টেস্ট ক্রিকেটে দেড় যুগের পথচলায় এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বিব্রতকর পরাজয়গুলোর একটি।

শেষ ইনিংসে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩২১, শেষ দুই দিনে ২৯৫। বাংলাদেশ করতে পেরেছে ১৬৯। টেস্টে দুইশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার বিষাদযাত্রা দীর্ঘায়িত হলো টানা অষ্টম ইনিংসে। তবে সান্ত্বনা পেতে পারে ভক্তরা এই ভেবে, সিলেটে প্রথম ইনিংসের চেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা হলেও রান বেশি হয়েছে?

বাংলাদেশের লজ্জার হারের মধ্যে উৎসবমুখর জিম্বাবুয়ে শিবির। দীর্ঘ খরার মধ্যে যেন নামল মুষলধারার বৃষ্টি। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে চলা জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট পেল যেন সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা। ২০১৩ সালে পাকিস্তানকে হারানোর পর প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল তারা। দেশের বাইরে এটি মাত্র তৃতীয় টেস্ট জয়, ২০০১ সালের পর প্রথম। সেবার তারা জিতেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই, চট্টগ্রামে। তার মানে বিদেশের মাটিতে দীর্ঘ ১৭ বছর পর জয় নামক সোনার হরিণটা স্পর্শ করতে পারল মাসাকাদজা শিবির।

অথচ চতুর্থ দিনের শুরুটা ছিল আশায় পরিপূর্ণ। কিন্তু সাবলীলভাবে ব্যাট করতে পারেননি দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস। জীবন পেয়েছেন দুজনেই। ব্যাটের কানায় লেগেছে বল বার বার। দুজনের জুটি বিচ্ছিন্ন হয় ৫৬ রানে। সিকান্দার রাজার বলে এলবির শিকার লিটন। ৭৫ বলে ২৩ রান তার। ওয়ান ডাউনে নেমে ঝড় তুলতে চেয়েছিলেন মুমিনুল হক। সেটাই যেন কাল হলো। দারুণ দুটি চারের পর মুমিনুল আউট হলেন কাইল জার্ভিসের বল স্টাম্পে টেনে এনে। ২২ রানে জীবন পেলেন ইমরুল, লড়াই করলেন অনেকক্ষণ। কিন্তু ৪৩ রানে ঠিকই রাজাকে উইকেট উপহার দিলেন। সুইপ করতে গিয়ে পায়ের পেছন দিয়ে বোল্ড। টেস্টে বাজে ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ নিজেকে চারে তুলে এনে দিতে চেয়েছিলেন ইতিবাচক বার্তা। একটু পরই বোঝালেন সেই বার্তা ছিল ভুল। রাজাকেই দিয়ে এলেন উইকেট। জিম্বাবুয়েরে মূল দুই স্পিনার ব্র্যান্ড মাভুটা ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা তখনো বলই হাতে পাননি। যখন তারা ডাক পেলেন, পরাজয়ের কালো অন্ধকার যেন ঘনিয়ে এলো বাংলাদেশ শিবিরে। মাভুটার শিকার শান্ত ও মুশফিক। দুজনই করতে পারলেন মাত্র ১৩। শেষের দিকে লড়াই করলেন আরিফুল হক। প্রথম ইনিংসে তিনিই ছিলেন সর্বোচ্চ স্কোরার, ৪৩*। দলের বিপর্যয়ে এদিন করতে পেরেছেন চারটি চার ও দুই ছক্কায় ৩৮। তিনি ওয়েলিংটন মাসাকাদজার শিকার।

সাত রান করে মেহেদী হাসান মিরাজ মাভুটার শিকার। টেল এন্ডারদের মধ্যে তাইজুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম অপু ও আবু জায়েদ রাহী রানের খাতাই খুলতে পারেননি। জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট মাভুটার। সিকান্দার রাজা তিনটি, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা দুটি, কাইল জার্ভিস নেন একটি উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৮৮ রান করার সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন জিম্বাবুয়ের শন উইলিয়ামস।

আগামী ১১ নভেম্বর থেকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। জিম্বাবুয়ের সামনে সিরিজ জেতা কিংবা বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করানোর সুযোগ। স্বাগতিকদের সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ। সাকিব-তামিমহীন মাহমুদউল্লাহ শিবির সেই কাজটি কতটা ভালোমতো করতে পারে, সেটার দেখারই প্রতীক্ষায় এখন সবাই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads