বৃষ্টিশূন্য অতিখরার পরে এবার তরমুজ ক্ষেতে হানা দিয়েছে জোয়ারের পানি। লোকসানের আশঙ্কায় আগে ভাগে তরমুজ কেটে বাজারজাত করার চেষ্টায় পটুয়াখালীর বাউফলের বিভিন্ন চরের চাষিদের।
সরেজমিন উপজেলার কচ্ছবিয়ার চরে আজ বুধবার দুপুরে দেখা গেছে পূর্ণিমার অতি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছে প্রায় ২৫-৩০ একর ক্ষেতের তরমুজ। এর আগে বৃষ্টিশূন্য অতিখরায় পোকামাকড়ের আক্রমণে ক্ষতির মুখ থেকে কোনোমতে বেরিয়ে আসতে পারলেও এবার জোয়ারের পানির শঙ্কায় তরমুজ চাষি। পূর্নমাত্রায় তরমুজ পরিপক্ক হতে আরো ৮-১০ দিন সময় লাগবে।
মঙ্গলবার রাতের জোয়ারে চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে তরমুজ ক্ষেত বিপর্যস্ত হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন চরকচ্ছবিয়া, পাঁচ-খাজুড়িয়া, রায়সাহেবের চর, চরনিমদী, চরঈশানসহ কয়েক চরের তরমুজ চাষি।
চর কচ্ছবিয়ার চাষি বাকলা তাতেরকাঠি গ্রামের ফিরোজ চৌধুরীর ১০ একর জামির ক্ষেতের তরমুজ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতি এড়াতে আগেভাগে কেটে বরিশাল সদরে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। পরিপক্ক হওয়ায় তার ক্ষেতের বাঙ্গি বাজারে বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র তিন-চার দিন আগে। ঠিক এই মুহুর্তে পূর্ণিমার অতিজোয়ারের পানি হানা দিয়েছে তার তরমুজ ক্ষেতে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে আছে একই চরের বাবুল খানের বাড়ন্ত তরমুজসহ ক্ষেতের লতানো তরমুজ গাছ। একই অবস্থা পাশের উপজেলা গলাচিপার চরবিশ্বাস থেকে এসে চর কচ্ছবিয়ায় চাষ করা তরমুজ চাষি আলম সরদাড়ের ক্ষেতের।
ফিরোজ চৌধুরী জানান, প্রথম দফায় বাঙ্গি বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র। এক দফায় তরমুজ কেটে বরিশাল শহরে পাঠিয়েছেন মাত্র। এই মূহুর্তে তরমুজ ক্ষেতে অতিজোয়ারের পানির হানায় বিশাল অঙ্কের ক্ষতি হবে তার।
এই রিপোর্ট পাঠানোর প্রাক্কালে মোবাইলফোনে (বিকাল সোয়া ৬টার দিকে) বাবুল খান জানান, রবিফসলেও দিন দিন বাড়ছে বিপদ-আপদ। খরায় এবার তরমুজে পোকামাকড়ের আক্রমন বেশি ছিল। গতে রাতের জোয়ারের ক্ষেতের বিশাল অংশ তলিয়েছে। এখন ক্ষেতের পাশে আল দিয়ে দুপুরের জোয়ারের পানির থেকে রক্ষার চেস্টাও ব্যার্থ হয়েছে। পুরো ক্ষেতই তলিয়ে গেছে তার। জোয়ারের পানিতে এবারেও সর্বনাশ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘৬-৭ দিন পরে তরমুজ কাটতে পারলেই হতো। ওজনে বাড়তো অন্তত ৪-৫ কেজি হারে। সামনে রোজ আসছে। দামও ভাল পাওয়া যেত। করোনার কারণে গত বছর তরমুজে লোকসান গুণতে হয়েছে। এবার জোয়ারের পানিতে ক্ষেত তলাইয়া গেছে। ছেলেমেয়ে লইয়া বাঁচন যাইবে না।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন রবি ফসলের সঙ্গে চলতি মৌসুমে ৫০হেক্টরে ক্ষীরা, ১৬০হেক্টরে বাঙ্গি ও ৯শ’ ৫০হেক্টরে তরমুজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন চরের নীচু এলাকাসহ তরমুজ ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে আমাদের লোকজন মাঠে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। তবে মুগ, মরিচসহ অন্যান্য রবিফসলের ক্ষতির পরিমান এইমূহুর্তে বলা সম্ভব না হলেও ইতোমধ্যে পরিপক্কতা আসায় তরমুজের ক্ষতির আশঙ্কা কম। ২৫-৩০পার্সেন্ট ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।’