তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া

সংগৃহীত ছবি

তথ্যপ্রযুক্তি

ফিরে দেখা ২০১৮

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া

  • এম. রেজাউল করিম
  • প্রকাশিত ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

হাতে গোনা আর কয়েকটি দিন পরেই শেষ হতে যাচ্ছে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের আরো একটি সাল। অন্যান্য খাতের মতো দেশের তথ্যপ্রযুক্তি এবং টেলিযোগাযোগ খাতের জন্যেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর ছিল ২০১৮। এ বছরই দেশের কয়েকটি বড় প্রাপ্তি হয়েছে যা বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অন্যরকম পরিচয়ে। বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে সমৃদ্ধির দেশ হিসেবে, প্রযুক্তি বিশ্বে অর্জন করে নিয়েছে নিজেদের একটি জায়গা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সকল অর্জন নিয়ে বাংলাদেশের খবরের ‘টেক সালতামামি’। সারা বছরের এই খাতে ঘটে যাওয়া বড় ঘটনা ও অর্জনগুলোকে নিয়েই লিখেছেন এম. রেজাউল করিম

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ঘটনাসমূহ

মহাকাশে একটুকরো বাংলাদেশ

চলতি বছরের ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিট (স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ১৪ মিনিটে) কেপকেনাভেরালের জন কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে ফ্যালকন ৯ রকেটের পিঠে মহাকাশে যাত্রা শুরু করে এক টুকরো বাংলাদেশ। এরপর ৩৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিরক্ষরেখার ১১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রিতে স্থাপিত হয় দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) বঙ্গবন্ধু-১। আর এরই মধ্য দিয়ে চলতি বছরের অর্জনের তালিকায় এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি।

স্যাটেলাইট মহাকাশে যাওয়ার পর পরীক্ষামূলকভাবে দেশে সম্প্রচার কার্যক্রম চালানো হয়। সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সরাসরি সম্প্রচার করার পরীক্ষাতেও এটি সফলতা দেখিয়েছে। পরে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দুবাইতে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের সম্প্রচারসহ আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। একই সঙ্গে অন্য কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

উৎক্ষেপণের ছয় মাসের মাথায় গত ৯ নভেম্বর বিকেল ৫টায় ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেস কোম্পানির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে স্যাটেলাইটটি বুঝিওয়ে দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের দায়িত্ব বুঝে নেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। একই অনুষ্ঠানে বিটিআরসি আবার এই স্যাটেলাইটের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয় বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটিডকে (বিসিএসসিএল)।

স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মূলত ‘কমিউনিকেশন এবং ব্রডকাস্টিং’ ক্যাটাগরির এ স্যাটেলাইট। অর্থাৎ এটি যোগাযোগ এবং সম্প্রচার কাজেই মূলত ব্যবহার করা হবে। এ স্যাটেলাইটে থাকছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার সক্ষমতা। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে ব্যবহার করবে। আর ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য রাখা হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় করণে সক্ষম হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিবছর অন্যান্য দেশের স্যাটেলাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দেড় কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করে। বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হলে এ অর্থ বাংলাদেশেই থেকে যাবে। ফলে বড় অঙ্কের টাকার বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে। দেশের বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ ব্যয়ও কমে আসবে। এ ছাড়া স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া যাবে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ। ফলে ব্যান্ডউইথের বিকল্প উৎসও পাওয়া যাবে। এই ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে দেশের দুর্গম দ্বীপ, নদী ও হাওর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা চালুও সম্ভব হবে।

বেসিস নির্বাচন

নানা জল্পনা-কল্পনা আর বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে চলতি বছরের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নির্বাচন। আর এই নির্বাচনে বিজয়ী হয় আলমাস কবীরের নেতৃত্বাধীন প্যানেল ‘টিম হরাইজন’। নির্বাচনের লক্ষ্যে গত ৪ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেয়া ৪০ জনের নামসহ একটি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে বেসিস নির্বাচন বোর্ড। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার পর নির্বাচনে তিন প্যানেলে ২৬ প্রার্থী এবং অ্যাসোসিয়েট হিসেবে ৫ প্রার্থী অংশ নেন। তবে বেসিসের ১১ সদস্যের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ মার্চ বেসিস নির্বাচন বাতিল করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে বর্তমান কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর কথা বলে একটি আদেশ দেয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই আদেশে ৩১ মার্চের নির্বাচন বাতিল করে নতুন পুনঃতফসিল ঘোষণার নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে বেসিস নির্বাচন বাতিলের খবর প্রকাশ হলে সেদিনই বিকাল থেকে বেসিসে ভিড় জমাতে থাকেন প্রার্থী এবং সদস্যরা। তারা সেখানে গিয়ে নির্বাচন বাতিল হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দাবি জানান। এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর এবং সাবেক সভাপতি এবং সরকারের শেষ মেয়াদের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, তারা পূর্বঘোষিত তারিখ অনুযায়ীই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবেন। এর পরদিন ২৮ মার্চ বেসিসের নির্বাচন বাতিলের জন্য দেওয়া চিঠি প্রত্যাহার করে নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এবারের নির্বাচনে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নারী উদ্যোক্তা ও জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুনা শামসুদ্দোহার নেতৃত্বে ‘প্যানেল উইন্ড অব চেইঞ্জ’, ফ্লোরা টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম ডিউকের নেতৃত্বে প্যানেল ‘টিম বিজয়’ এবং বেসিসের সাবেক সভাপতি ও মেট্রোনেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলমাস কবীরের নেতৃত্বে ‘টিম হরাইজন’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলো।

কম্পিউটার পণ্যের এমআরপি নীতিমালা বাস্তবায়ন

কম্পিউটার পণ্যে দাম ও বিক্রয়োত্তর সেবা নিয়ে গ্রাহক হয়রানি কমাতে সারা দেশে কম্পিউটার এবং কম্পিউটার যন্ত্রাংশে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) নীতিমালা ও বিক্রয়োত্তর সেবা নীতিমালা বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। কম্পিউটার এবং কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ বা পণ্য ব্যবসায় অনুমোদিত উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণ, ব্যবসায়িক উন্নয়ন এবং ক্রেতাসাধারণের স্বার্থরক্ষা ও সন্তুষ্টির লক্ষ্যে গত ২২ জুলাই থেকে দেশজুড়ে নীতিমালা কার্যকর করে সংগঠনটি। সংগঠনটি বলছে এ নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে ভোক্তারা প্রযুক্তি পণ্য কিনে ওয়ারেন্টির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিভ্রান্তির মুখোমুখি হবে না। এমআরপি ও ওয়ারেন্টি পলিসি প্রতিটি প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রয় কেন্দ্রে সংরক্ষিত থাকবে। সর্বসাধারণের জন্য বিসিএস ওয়েবসাইটে (www.bcs.com.bd) নীতিমালা দুটি পাওয়া যাবে। এছাড়াও গ্রাহকরা চাইলে এমআরপি ও ওয়ারেন্টি সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ বিসিএসকে লিখিতভাবে কিংবা অভিযোগ সম্পর্কে ০১৮৪৭২৮৯০৯৫ নম্বরে যোগাযোগ করেও জানানো যাবে।

দেশের হাইটেক পার্ক থেকে প্রথম আইওটি ডিভাইস রফতানি

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে তৈরি করা ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইস রফতানি করেছে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডেটাসফট সিস্টেমস বাংলাদেশ। মূল চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ হাজার ডিভাইস সরবরাহের কথা থাকলেও চলতি বছরের ৩১ জুলাই সৌদি আরবের উদ্দেশে প্রথম লটের ১০০ আইওটি ডিভাইস পাঠানো হয়।

জানা যায়, মক্কায় কেন্দ্রীয়ভাবে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় শহরের বাসাবাড়িগুলোতে ট্যাঙ্কের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে কখন ট্যাঙ্কের পানি শেষ হয়ে গেল সেটি কর্তৃপক্ষ বা বাসাবাড়ির মালিকরা বুঝতে পারেন না। ডেটাসফটের তৈরি এসব ডিভাইস ওই বাসাবাড়ি এবং বিভিন্ন দফতরের পানির ট্যাঙ্কে বসানো হলে পানির স্তর ২০ শতাংশের নিচে নেমে এলেই সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ট দেবে ডিভাইসটি। এই আইওটি পণ্যের প্রতিটির দাম পাঁচশ’ ডলারের কাছাকাছি পড়বে বলে জানিয়েছে ডেটাসফট। এতে করে পাঁচ হাজার ডিভাইসের জন্য তাদের ২০ কোটি টাকার মতো আয় হবে।

অ্যাসোসিও ডিজিটাল সামিট বাংলাদেশের ৫টি সম্মাননা

জাপানে অনুষ্ঠিত এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলোর সংস্থা ‘অ্যাসোসিও ডিজিটাল সামিট ২০১৮’তে চারটি বিভাগে দেশের চার সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাসোসিওর সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দ্য অ্যাসোসিও অনারারি অ্যাওয়ার্ড’ সহ মোট পাঁচটি সম্মাননা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে আউটস্ট্যান্ডিং আইসিটি কোম্পানি অ্যাওয়ার্ড বিভাগে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল), আউটস্ট্যান্ডিং ইউজার অর্গানাইজেশন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ক্যাটাগরিতে ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রজেক্ট (ইনফো সরকার) এবং আইসিটি এডুকেশন অ্যাওয়ার্ডে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে এই সম্মাননা জানানো হয়। এ ছাড়া অ্যাসোসিওর সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দ্য অ্যাসোসিও অনারারি অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন জেএএন অ্যাসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ এইচ কাফি।

জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট র্যাংকিং-এ ৯ ধাপ এগিয়ে

সারাবিশ্বে দেশগুলোর ডিজিটাল গভর্নমেন্ট তৈরি করে তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সহজ করণে জাতিসংঘ একটি জরিপ চালায়। ২০০১ সাল থেকে শুরু হওয়া ইউএন ই-গভর্নমেন্ট সার্ভে রিপোর্ট নামে প্রকাশিত এই গবেষণার এ বছরের গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশ ০.৪৭৬৩ পয়েন্ট পেয়ে ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১১৫তম স্থান অর্জন করেছে। জাতিসংঘের এ বছরের ই-গভর্মেন্ট সার্ভের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ২০১৬ সালে ছিল ১৪৮তম অবস্থানে আর এ বছর বাংলাদেশে আরও ৯ ধাপ এগিয়ে ১১৫ তম অবস্থানে এসেছে। গত তিন র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ মোট ৩৫ ধাপ এগিয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আইসিটি টুল ব্যবহার করে আইসিটি সেবা তৈরি এবং মোবাইল বা ওয়েব অ্যাপের মাধ্যমে তা উপস্থাপনা করায় বাংলাদেশের মূল উন্নতি হয়েছে। এ ছাড়াও হিউম্যান ক্যাপিটেল সূচক ও টেলিকমিউনিকেশন সূচকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে বলেও জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ও সম্মাননা

সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজনে ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ২০১৮’ উদযাপন করা হয়। এদিন ব্যক্তি পর্যায়ে ৬ জন ও প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে ৩টি সংস্থাকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ-২০১৮’ সম্মাননা দেওয়া হয়। যার মধ্যে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ‘রূপকল্প ২০২১’ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র প্রণয়নে ভূমিকা রাখা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহযোগিতা করায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি এম ইমাম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইংয়াফেস ওসমান ও আওংয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), ওয়ালটন, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং ডিএমপির সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগকে সম্মাননা দেওয়া।

রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের স্বর্ণ লাভ

ফিলিপাইনের ম্যানিলায় গত ১৫ থেকে ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ২০তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে (আইআরও) প্রথমবার অংশগ্রহণ করে স্বর্ণপদক জয়লাভ করেছে বাংলাদেশ। দুটি ক্যাটাগরিতে ২৩টি দেশের প্রায় ৮০০ প্রতিযোগীর সাথে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশ দল ১টি স্বর্ণ, ২টি হাইলি রিকোমান্ডেন্ট ও ১টি টেকনিক্যাল পদক লাভ করেছে।

‘ক্রিয়েটিভ ক্যাটেগরি’ জুনিয়র গ্রুপে স্বর্ণপদক পেয়েছে চিটাগাং গ্রামার স্কুলের (ঢাকা) কাজী মোস্তাহিদ লাবিব, তাফসির তাহরীম ও ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মো. মেহের মাহমুদের রোবট টাইগার্স দল। রোবট ইন মুভি জুনিয়র গ্রুপে হাইলি রিকোমেন্ডেট পদক পেয়েছে সানবীমস স্কুলের নাশীতাত যাইনাহ রহমান ও আগা খান স্কুলের যাহরা মাহজারীন পূর্বালীর দল ‘রোবো চ্যালেঞ্জার্স ও রোবট টাইগার্স’। ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি সিনিয়র গ্রুপে টেকনিক্যাল পদক পেয়েছে লালবাগ সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মো. খায়রুল ইসলাম ও ঢাকা কলেজের সানি জুবায়েরের দল টিম বাংলাদেশ।

দেশের প্রথম ল্যাপটপ কারখানা

বিদেশ থেকে আমদানি কমিয়ে দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের হাইটেক ও মাইক্রোটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পার্কে চালু হয় দেশের প্রথম কম্পিউটার উৎপাদন কারখানা। গত ১৮ জানুয়ারি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এই কারখানার উদ্বোধন করেন।

এখানে উচ্চ মানসম্পন্ন ল্যাপটপ, ডেস্কটপ মনিটরসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্য তৈরি হয়। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীসহ কারখানায় সব মিলিয়ে এখন প্রায় ১ হাজার কর্মী। প্রাথমিকভাবে প্রতি মাসে ৬০ হাজার ল্যাপটপ, ৩০ হাজার ডেস্কটপ এবং ৩০ হাজার মনিটর উৎপাদনের লক্ষ্য তাদের। শুরুতে বিনিয়োগ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। ৩ লাখ বর্গফুটের বিশাল এই কারখানায় আয়োজন করা হয়েছে কম্পিউটার সংযোজন-উৎপাদনের এক মহাযজ্ঞ। ল্যাপটপ ও ডেস্কটপের ডিজাইন ডেভেলপ, গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ, মাননিয়ন্ত্রণ বিভাগ ও টেস্টিং ল্যাব নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই কারখানা। কারখানার জন্য যে যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে তা জার্মান ও জাপান প্রযুক্তির।

ইতোমধ্যেই এই কারখানায় তৈরি বিশ্ববাজারে প্রবেশ করলো ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ল্যাপটপ আফ্রিকায় রপ্তানীও শুরু হয়ে গেছে। চলতি বছরের ২২ মার্চ নাইজেরিয়ার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন বেজ নাইজেরিয়া লিমিটেডের সাথে ল্যাপটপ রপ্তানির আনুষ্ঠানিক চুক্তির মাধ্যমে ল্যাপটপ রপ্তানিকারক দেশের খাতায় বাংলাদেশের নাম উঠে আসে।


টেলিকম খাতের ঘটনাসমূহ

সরকারি তথ্য ও সেবা প্রদানে চালু হলো কল সেন্টার ‘৩৩৩’

প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি তথ্য ও সেবা জনগণের কাছে আরো সহজে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে চালু হয়েছে কল সেন্টার ৩৩৩। এর মাধ্যমে একজন নাগরিক খুব সহজেই ৩৩৩ নম্বরে কল করে জানতে পারবেন প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ কল সেন্টার সেবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের উদ্যোগে চালু হওয়া এ কল সেন্টারে দেশের সকল নাগরিক ৩৩৩ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা ০৯৬৬৬৭৮৯৩৩৩ নম্বরে কল করে সরকারি সেবা প্রাপ্তির পদ্ধতি, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য, বিভিন্ন এলাকার পর্যটনের স্থানসমূহ এবং বিভিন্ন জেলা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। এ ছাড়া কল সেন্টারের মাধ্যমে নাগরিকরা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে প্রতিকারের জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তথ্য প্রদান ও অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে ৬৪ জেলায় কল সেন্টারটির সেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছিল এটুআই। পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের আওতায় এই কল সেন্টারের মাধ্যমে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখের বেশি নাগরিককে বিভিন্ন ধরনের তথ্য ও সেবা প্রদান করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সেবা এ কল সেন্টারে যুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছে এটুআই। এ ছাড়া ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তাদেরকেও এই কল সেন্টারে যুক্ত করা হবে। এসএমএস, আইভিআর, ইউএসএসডি কোড ভিত্তিক সেবা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও লাইভ চ্যাট এ কল সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে এটুআইয়ের। এ কল সেন্টারটি পরিচালনায় কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি এবং কল সেন্টার কোম্পানি জেনেক্স।

ফোরজি চালু

চলতি বছরে টেলিযোগাযোগ খাতে বাংলাদেশের অন্যতম অর্জনের মধ্যে একটি হচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক (ফোরজি) যুগে পা রাখা। নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা শেষে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে চার মোবাইল ফোন অপারেটরকে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) টেলিযোগাযোগ সেবার লাইসেন্স হস্তান্তর করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। লাইসেন্স পাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে ফোরজি নেটওয়ার্ক চালুর মাধ্যমে নিজেদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে অপারেটরগুলো। আর খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় তারা।

দেশে ফোরজি সেবা দেওয়ার জন্য গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত স্পেকট্রাম নিলামে তোলে বিটিআরসি। যদিও ফোরজি স্পেকট্রাম নিলামে অংশ নিয়েছিল শুধুমাত্র বাংলালিংক এবং গ্রামীণফোন। এই নিলাম অনুষ্ঠানে ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড থেকে গ্রামীণফোন ৫ মেগাহার্জ এবং বাংলালিংক কিনেছিল ৫.৬ মেগাহার্জ তরঙ্গ। অন্যদিকে পর্যাপ্ত পরিমান স্পেকট্রাম থাকায় নিলামে অংশ নেয়নি রবি। আর টেলিটকের হাতে থাকা বর্তমান স্পেকট্রামের তুলনায় গ্রাহক সংখ্যা কম থাকায় নতুন করে স্পেকট্রাম ক্রয়ে অনাগ্রহী ছিলো রাষ্ট্রায়ত্ত এই অপারেটরটি। এদিকে বিটিআরসি সুত্র থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে ফোরজি ইন্টারনেটের গতি ৭ মেগাবিট পার সেকেন্ড নির্ধারণ করা হতে পারে। যদিও অপারেটরগুলোর পরীক্ষামূলক ব্যবহারে এর ১০ গুনের বেশি গতি পেয়েছে।

অন্যান্য অপারেটরদের সাথে চালু করে না করলেও গত ১৬ ডিসেম্বর একরকম নিরবেই নিজেদের ফোরজি সেবা চালু করেছে রাস্ট্র মালিকানাধীন টেলিকম অপারেটর টেলিটক। এরআগে চলতি বছরের মে ও আগস্ট মাসে দুই দফা চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট ফোরজি সেবা চালু করার উদ্যোগ নিলেও তাতে সফল হয়নি টেলিটক। দেশের বেসরকারি তিনটি মোবাইল অপারেটর এ সেবা চালু করার ১০ মাস পর ঢাকার নির্দিষ্ট ১২টি স্থানে ফোরজি সেবা চালু করলো টেলিটক। জানা গেছে, শুরুতে রাজধানীর গুলশান, নিকেতন, বারিধারা, বনানী, রমনা, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, শ্যামলী, ফার্মগেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট এলাকায় টেলিটকের ফোরজি নেটওয়ার্ক পাবেন গ্রাহকরা। আর টেলিটক ফোরজি’র ডাউনলোড স্পিড থাকবে ৪০ এমবিপিএস ও আপলোড স্পিড থাকবে ১৫ এমবিপিএস। তবে আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকার সব স্থানে টেলিটকের ফোরজি পাওয়া যাবে বলে দাবী করেছে টেলিটক।

টেলিটক সূত্রে জানা গেছে, অপারেটরটি ফোরজি সেবা চালু করার জন্য ৯৮৭ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এর মধ্যে ৫৫০টি টাওয়ার ইতিমধ্যে দেশের প্রধান জেলা শহরগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫৫০টি টাওয়ার চালুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

ফাইভজি পরীক্ষা

পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তিতে কেমন হবে বিশ্ব তা দেখতে উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও পঞ্চম প্রজন্মের (ফাইভজি) মোবাইল নেটওয়ার্কের পরীক্ষা চালানো হয়েছে। চলতি বছরের ২৫ জুলাই রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ফাইভজির পরীক্ষা করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এ সময় ফাইভজির সর্বোচ্চ গতি পাওয়া গেছে ৪.১৭ জিবিপিএস।

এদিকে ফাইভজি প্রযুক্তির পরীক্ষায় কারিগরিভাবে সহযোগিতা করেছে চীনের প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। আর ফাইভজি পরীক্ষা চালাতে হুয়াওয়েকে এক সপ্তাহের জন্য স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেয় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। হুয়াওয়ের এই পরীক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে সহায়তা করে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম অপারেটর টেলিটক ও বেসরকারি অপারেটর রবি। ফাইভজি প্রযুক্তির পরীক্ষা ছাড়াও একই জায়গায় ‘বাংলাদেশ ফাইভজি সামিট’র আয়োজন করা হয়েছিলো।

মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি সার্ভিস

নানা জল্পনা-কল্পনার পর চলতি বছরের অক্টোবরে চালু হয়েছে নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদল বা মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা। এমএনপি সেবা চালুর জন্য প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১২ সালে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এমএনপি নীতিমালায় অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী এ নীতিমালার অনুমোদন দেন। এরপর গত বছরের নভেম্বরে নিলামের মাধ্যমে এ সেবা প্রদানের দায়িত্ব পায় ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেক কনসোর্টিয়াম। লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী দায়িত্ব পাওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে এমএনপি সেবা চালুর কথা থাকলেও বিভিন্ন অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যেতে থাকে এমএনপি সেবাটি। এরপর কয়েক দফায় পিছিয়ে গত পহেলা অক্টোবর চালু হয় এ সেবা। এমএনপি সেবা খাতে ৭২তম দেশ হিসেবে নিজেদের নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ।

মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি সার্ভিস (এমএনপিএস) সেবা হচ্ছে, মোবাইল গ্রাহকগণ তার ব্যবহূত মোবাইল নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অন্য যেকোনো অপারেটর বদল করে ভয়েস ও ডাটা সেবা নিতে পারবেন। তবে সরকার নির্ধারিত নিয়মে, কোন গ্রাহক অপারেটর বদল করণে চাইলে, তাকে নির্ধারিত ফি দিতে হবে। আর একবার অপারেটর বদল করলে কমপক্ষে তিন মাস আর অপারেটর বদল করা যাবে না।

মোবাইল গ্রাহক ১৫ কোটি ছাড়ানো

বাংলাদেশের মোবাইল গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) তথ্যানুসারে চলতি বছরের অক্টোবোর মাস পর্যন্ত এই হিসেব করা হয়। কমিশনের তথ্যানুযায়ী গত দশ মাসে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহক বেড়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার। এরমধ্যে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ২০ লাখ ৫ হাজার। অন্যদিকে রবির গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার, বাংলালিংকের ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৯ হাজার এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার।

গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের নতুন নম্বর সিরিজ চালু

টেলিযোগাযোগ খাতে চলতি বছরের ঘটনাপ্রবাহের তালিকায় আছে দেশের দুই অপারেটরের নতুন দুই নাম্বার সিরিজ চালুর ঘটনাও। চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর গ্রামীণফোন দেশের গ্রাহকদের সেবার জন্য ‘০১৭’ সিরিজের পাশাপাশি নতুন নম্বর সিরিজ ‘০১৩’ সিরিজ এবং ২৯ নভেম্বর বাংলালিংক তাদের নতুন নম্বর সিরিজ ০১৪ বাজারে নিয়ে আসে।

গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যাপক চাহিদার কারণে গ্রামীণফোনের ০১৭ সিরিজের নম্বর শেষ হয়ে যেতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির অনুরোধ সাপেক্ষে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন ০১৩ সিরিজের ২ কোটি নম্বর বরাদ্দ করে। ০১৩ নম্বরের নতুন সিম কার্ড সকল সিম বিক্রয় কেন্দ্রে, একই মূল্যে পাওয়া যাবে বলেও জানানো হয় অপারেটরটির পক্ষ থেকে।

এদিকে বাংলালিংকের নতুন সিরিজ উন্মোচন অনুষ্ঠানে অপারেটরটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ০১৪ সিরিজে ১ কোটি সিম বিক্রি করবে অপারেটরটি। ০১৯ সিরিজের প্রিপেইড ব্যবহারকারীরা এনআইডি ভেরিফিকেশন করে বিনামূল্যে ০১৪ সিরিজের সিম সংগ্রহ করতে পারবেন। বর্তমানে ৩ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহক নিয়ে মোবাইল অপারেটর হিসেবে তৃতীয় অবস্থানে আছে বাংলালিংক। তারা এর আগে ০১৯ সিরিজের সিম বিক্রি করেছে।

টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স প্রদান

দেশে টেলিযোগাযোগ সেবায় চারটি প্রতিষ্ঠানকে মোবাইল ফোন টাওয়ার অবকাঠামো ভাগাভাগি সংক্রান্ত টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গত ১ নভেম্বর বিটিআরসির প্রধান সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের কাছে এই লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইডটকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, সামিট টাওয়ারস লিমিটেড, কীর্তনখোলা টাওয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড ও এবি হাইটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড।
জানা যায়, মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষেণ ও অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় বিপুল ব্যয়ের পাশাপাশি টাওয়ারের অনিয়ন্ত্রিত সংখ্যা, ভূমি ও বিদ্যুতের সংকট ছাড়াও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাবের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে এ লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স প্রদানের ফলে মোবাইল টাওয়ার লাইসেন্স রোল আউটের ওপর ভিত্তি করে অপারেটরগুলো কোনো নতুন টাওয়ার স্থাপন করণে পারবে না।

এ ছাড়া এক অপারেটর আরেক অপারেটরের কাছে আর টাওয়ার ভাড়া দিতে পারবে না। কিন্তু লাইসেন্স পাওয়া টাওয়ার কোম্পানির কাছে তাদের টাওয়ার বিক্রি করতে পারবে।

লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রথম বছরে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে। দ্বিতীয় বছর জেলা শহর, তৃতীয় বছর ৩০ শতাংশ উপজেলা, চতুর্থ বছর ৬০ শতাংশ উপজেলা ও পঞ্চম বছর দেশের সব উপজেলায় টাওয়ার সেবা দিতে হবে। টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্সের জন্য ২৫ কোটি টাকা দিয়ে এ লাইসেন্স নিতে হবে। বার্ষিক নবায়ন ফি থাকবে ৫ কোটি টাকা। আর দ্বিতীয় বছর থেকে বিটিআরসির সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগি হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে জমা দিতে হবে ১ শতাংশ হারে। লাইসেন্সের মেয়াদকাল ১৫ বছর।

এসএমপি প্রবিধানমালা

টেলিযোগাযোগ খাতের ব্যবসায় একক আধিপত্য বিস্তার ঠেকাতে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা (সিগনিফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার-এসএমপি) সংক্রান্ত প্রবিধানমালার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গত ১৪ নভেম্বর জারিকৃত এই প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ খাতে খুচরা মোবাইল সেবা প্রদানকারী কোনো প্রতিষ্ঠান বাজারের ৪০ শতাংশের বেশি দখলে রাখতে পারবে না।

প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, গ্রাহক সংখ্যা, অর্জিত বার্ষিক রাজস্ব এবং কমিশন কর্তৃক বরাদ্দকৃত তরঙ্গসহ অন্যান্য সম্পদের হিসাব করেই খুচরা মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিবেচনা করা হবে।
প্রবিধানমালায় আরো বলা হয়েছে, কাঠামোগত দিক, আচরণগত দিক, বাজারে সকল অংশীদারের মোট বিক্রীত এককের শতকরা হার এবং সম্ভাবনাময় মোট বিক্রীত এককের শতকরা হার, অন্তর্বর্তী বাজারের কাঠামো, অর্থনীতির পরিসর ও মাপকাঠি, পণ্য বা সেবা পার্থক্যকরণ ও বিক্রয় প্রবর্ধনের মাত্রা নির্ণয়, সরবরাহের আচরণ, মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত আচরণ, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বাজারের জন্য নির্ণায়ক নির্ধারণ ও বাজারের নিয়ন্ত্রণের শতকরা হার ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে কমিশন তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা নির্ধারণ করণে পারবে। একই সঙ্গে দেশের টেলিযোগাযোগ বাজারে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতাসম্পন্ন অপারেটর চিহ্নিত করে করণীয় ও বর্জনীয়-সংক্রান্ত নির্দেশ জারিকরণে পারবে কমিশন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর ধারা ৯৯, ধারা ২৯ এর দফা ঘ’র ক্ষমতাবলে প্রণীত এই প্রবিধানমালায় বলা হয়, কমিশনের নিজস্ব উদ্যোগে কিংবা কারো অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এই প্রবিধানমালা না মানে, সেক্ষত্রে অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে কমিশন ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads