একাত্তরের ডিসেম্বর শুরুর সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণে ক্রমেই পিছু হটতে থাকে পাকিস্তানি সেনারা। একের পর এক বিজয়ের খবর আসতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ৯ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকা দখলের মিশনে নামে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী। তাদের সামনে তখন শুধু ঢাকা দখলের লড়াই। এদিন সব দিকে দিয়ে মিত্রবাহিনী ঢাকার দিকে অগ্রসর হলো। বাইরে থেকে হানাদার বাহিনীর প্রবেশ রুদ্ধ হয়ে যায়। মিত্রবাহিনী একে একে আশুগঞ্জ, দাউদকান্দি, চাঁদপুর ময়মনসিংহ দখলে নিয়ে নেয়।
একাত্তরের এদিন সকালে হানাদার বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতর ঢাকা থেকে প্রথমবারের মতো জেনারেল নিয়াজী স্বীকার করেন, পরিস্থিতি নিদারুণ সঙ্কটপূর্ণ। যুদ্ধে পরাজয় নিকটে বলে একটি সঙ্কেতবাণীও পাঠানো হয় রাওয়ালপিন্ডিতে।
এদিকে দ্রুত পাক হানাদারমুক্ত হতে থাকে একের পর এক এলাকা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা তখনো থেমে থাকেনি। যুক্তরাষ্ট্র এ সময় পাকিস্তানকে সহযোগিতা করার পদক্ষেপ নেয়। আজকের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হতে আদেশ দেন। উদ্দেশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া। কিন্তু উদ্দেশ্য সফল হয়নি। কারণ বীরসন্তানদের মনোবল ভেঙে দেওয়া মোটেও সহজ কাজ ছিল না।
মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে যে জায়গাগুলো শত্রুমুক্ত হয়, তার অন্যতম হলো দাউদকান্দি, গাইবান্ধা, কপিলমুনি, ত্রিশাল, নকলা, ঈশ্বরগঞ্জ, নেত্রকোনা, পাইকগাছা, কুমারখালী, শ্রীপুর, অভয়নগর, পূর্বধলা, চট্টগ্রামের নাজিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা। দাউদকান্দি শত্রুমুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত মেঘনার সম্পূর্ণ পূর্বাঞ্চল মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। এর আগে কুমিল্লামুক্ত হওয়ার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে দাউদকান্দির মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিবাহিনীর হামলায় টিকতে না পেরে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।