ড্রাগন ফল চাষে আলমগীরের সাফল্য

ছবি: বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

ড্রাগন ফল চাষে আলমগীরের সাফল্য

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ২ অক্টোবর, ২০২০

চারদিকে সবুজের সমারোহ। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে  অসংখ্য ড্রাগন গাছ। সবুজ গাছে শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন গোলাপি,লাল আর সবুজ ফল। এমন একটি পরিপাটি বাগান করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিঙ্গা গ্রামের প্রবাসী মো. আলমগীর হোসেন। মৌসুমী ফল লিচু,কাঁঠাল ও পেয়ারার পর এবার পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন চাষে  তিনি এক অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছেন।

বাড়ি সংলগ্ন ৩০ শতাংশ জায়গার মধ্যে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল ড্রাগনের ৬০০ চারা লাগিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়। মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে  তার ৩০ শতাংশ জমিতে  এ পযর্ন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন। তার বাগানে আরো যে ফল রয়েছে সব মিলিয়ে আড়াই লাখ টাকার উপর বিক্রি হবে বলে জানায়। 

এক মৌসুমে পাঁচবার ফলন হওয়ায় ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে  ফলপ্রেমী লোকজনরা এখানে এসে ড্রাগন বাগান দেখছেন ও কিনছেন।  ইতোমধ্যে কৃষিক্ষেত্রে ড্রাগন চাষে অনন্য অবদান রাখায় স্থানীয়দের কাছে আলমগীর এখন ড্রাগন ফল চাষী হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।

ফল চাষী আলমগীর জানান , বেকারত্ব ঘোচাতে এক সময়  তিনি বিদেশ চলে যান। সেখানে বেশ কয়েক বছর থাকার পর দেশে চলে আসেন। এক পর্যায়ে বাপ-দাদার পুরনো পেশা কৃষিকাজে মনোযোগ না হয়ে বিকল্প পেশা করার চেষ্টা করেন।  গত দেড় বছর আগে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে পরীক্ষামূলক ৩০ শতাংশ জমিতে বারি ১ জাতের ৬শটি ড্রাগন চারা লাগিয়ে চাষ শুরু করেন । এতে তিনি অভাবনিয় সাফল্য পান। তার ড্রাগন বাগান  প্রতিটি গাছে রয়েছে ফুল,মুকুল এবং পাকা ড্রাগন। এপ্রিল থেকে মে মাসে ফুল আসে আর শেষ হয় নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা হয়। এক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রামের  উপর হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ৭০ থেকে ৯০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। বাগান থেকে প্রতি কেজি ড্রাগন ৩শ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করেন। এ পর্যন্ত দেড় লক্ষ টাকার ফল বিক্রি করা হয় । আর বাগানে যে ফল রয়েছে আশা করছি আরো ১ লাখ টাকা বিক্রি হবে। তার এই সাফল্য দেখে ফল দেখতে ও ক্রয় করতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোকজন ছুটে আসছেন এই ড্রাগন বাগানে। তিনি আরো বলেন চারা লাগানোর প্রায় দেড়  বছরের মধ্যে ফল বিক্রি করতে পারব তা কখনও আশা করেনি।  আমার দেখাদেখি এলাকার শিক্ষিত যুবকরা এখন ড্রাগন বাগান করেছে। তারাও বাগান করে লাভবান হচ্ছে। এই চাষে আমি খুবই খুশি ,আশাকরি সামনে আরো বেশী জায়গায় এর আবাদ করব ।

ড্রাগন লতানো কাটাযুক্ত গাছ, যদিও এর কোনো পাতা নেই। গাছ দেখতে অনেকটা সবুজ ক্যাকটাসের মতো। ড্রাগন গাছে শুধু রাতে স্বপরাগায়িত হয়ে ফুল ফোটে। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে। কৃত্রিম পরাগায়নও করা যায়। এ গাছকে ওপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টের কিংবা বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ওপরের দিকে তুলে দেওয়া হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার খিজির হোসেন প্রামানিক বলেন, ড্রাগন অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল।  এ ফল চোখকে সুস্থ রাখে,শরীরের চর্বি কমায়,রক্তের কোলেস্টেরল কমায়,উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অন্য ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ খুবই লাভজনক। চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। ড্রাগনের ৪টি জাত রয়েছে , যেমন – হলুদ , সাদা, গোলাপী ও পিংক। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট হতে উদ্ভাবিত বারী ১- যা পিংক হিসেবে পরিচিত । এ পিংক জাতের ড্রাগন ফল দেখিতে সুন্দর খেতেও সুস্বাদু । একটি গাছ থেকে ২০ বছর যাবত ফল আহরণ করা যায় । তিনি আরো বলেন এই এলাকার মাটি এবং আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য বেশ উপযোগি। আমরা সব সময়  চাষিদের ফলন ভালো রাখতে উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে থাকি। আলমগীরের মতো নিজ উদ্যোগে এবং কৃষি বিভাগের সহায়তায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন বলে জানায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads