মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
ডেঙ্গু নির্মূলে স্কাউট, গার্লস গাইড, রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবক ও সিটি করপোরেশনের লোকজনের টিম মাঠে নামানো হোক। পুরান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে, যা প্রতিরোধ করার মতো দেশে গুণগত আর মানসম্মত মশার ওষুধ নেই। যাও আছে তা ডেঙ্গু মশা নিধনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ইতোমধ্যে দেশের অনেকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে করোনার নামে ঘরে বসেই চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে। ইদানীং রাজধানীতে ডেঙ্গুর মশার প্রবণতা যথেষ্ট বেড়েছে।
ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা নামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ডেঙ্গুর অনেক রোগী হাসপাতালে করোনার ভয়ে ভর্তি হতে চায় না। এতে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে বহু মানুষের মধ্যে। তারপর রক্তের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ইতোমধ্যে চাহিদা মোতাবেক রক্ত ও ডোনার সংকট দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ না করলে এটা খারাপের দিকে চলে যেতে পারে। কার্যকর ও মশা নিধনে উপযোগী ওষুধ এ মুহূর্তে ছিটাতে না পারলে এই শক্তিশালী ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা দুষ্কর। প্রথম থেকে দেখেছি ডেঙ্গু মোকাবিলায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অবহেলা ও উদাসীনতা দেখিয়েছে। মূলত ওষুধ কার্যকর না হলে মশা মরবে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। ডেঙ্গু দেশব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এডিস মশার আক্রমণ কমাতে হবে। শুধু সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন নিয়ে এখন এই মশা নিধন কর্মসূচি নয়, গোটা মন্ত্রণালয় অর্থাৎ পুরোপুরি সরকারকে এই ডেঙ্গু মোকাবিলায় অংশ নিতে হবে। পাশাপাশি দেশের বিত্তবান ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো, এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, স্কাউট, গার্লস গাইড, প্রশিক্ষণরত নার্সদের দ্রুত এই ডেঙ্গু রোগীদের পরিচর্চার পাশাপাশি এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য ব্যাপক সচেতনামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, রাজধানীতে বিশেষ করে পুরনো ঢাকাতে ডেঙ্গু ছড়ানোর ঝুঁকি খুবই বেশি। রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মোটামুটি ভালো ব্যবস্থাপনা থাকলেও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা, উপজেলাতে এ রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা রযন্ত্রপাতির যথেষ্ট সংকট রয়েছে। শুধু যন্ত্রপাতি নয়, পর্যাপ্ত চিকিৎসক সংকট দেশব্যাপী। ইতোমধ্যে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ নেই করোনার ভয়ে। এমনকি হাসপাতালে শয্যা খালি। এ রোগের চিকিৎসার ব্যয়ভার গরিব ও দরিদ্র মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে অসহনীয়। বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করতে হবে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সময়মতো চিকিৎসাসেবা পেলে এ রোগের মৃত্যুর হার একেবারে কম। দেশব্যাপী যদি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে শীতকালব্যাপী ডেঙ্গুজরের রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো পরবর্তী চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যেতে হবে। ডেঙ্গুজ্বরের সময় শরীরে ভীষণ ব্যথা হয় বলে অনেকে বিভিন্ন রকমের ব্যথনাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথার ওষুধ খাওয়া ঠিক না। ঘরে-বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ছাদে, বারান্দায়, এসির নীচে, ফ্রিজের নীচে কোথাও জমা পানি রাখা যাবে না। ঢাকা মেডিকাল কলেজের বার্ন ইউনিটে জরুরি ভিত্তিতে ডেঙ্গু চিকিৎসা সেন্টার খোলার অনুরোধ করছি। এ ছাড়া দেশের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে সময় সময় ড্রেন, নালা, নর্দমা, জলাশয়, মজা পুকুর হতে কচুরিপানাসহ অন্যান্য ময়লা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিতে হবে। স্ব-স্ব বাসাবাড়ি ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ফুলের টব, ফুলদানি, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, বাথরুমের কমোড, ডাবের খোল, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার-টিউবে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার রাখা ছাড়াও ঘন ঘন মশার ওষুধ ছিটানো কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না এবং ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে দেওয়া যাবে না। তবে সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার রোধ করা যেতে পারে, পাশাপাশি কোনোভাবেই এই রোগকে অবহেলা করা যাবে না। দেরিতে হলেও দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র প্লেনে করে বিদেশ হতে মশার ওষুধ আনলে সুবিধা হয়। জানি না ওষুধ কবে আসবে? তবে এ ওষুধ কবে আসবে বা কখন ছিটানো হবে তার আগে ডেঙ্গুর যে ভয়াবহতা দেখা দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক : নিবন্ধকার