ডিএসসিসির চিঠি আমলে নেয়নি ২০ সেবা সংস্থা!

সংগৃহীত ছবি

মহানগর

সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি

ডিএসসিসির চিঠি আমলে নেয়নি ২০ সেবা সংস্থা!

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ, ২০২১

বর্ষা মৌসুম এলেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। একই জায়গায় কয়েকটি সংস্থা এলোমেলোভাবে কাজ করে। এতে সৃষ্টি হয় জনদুর্ভোগ। সেই কাজটি সমন্বয় করতে সম্প্রতি উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু ওই উদ্যোগে বেশিরভাগ সংস্থার পক্ষ থেকে সাড়া পায়নি ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। 

সংস্থাটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শেখ ফজলে নূর তাপস এলোমেলোভাবে চলমান সকল কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বছরজুড়ে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধে ২৬টি সেবা সংস্থাকে চিঠি দেয় ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ৭ অক্টোবর মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সই করা একটি চিঠি ২৬টি সেবা সংস্থাকে পাঠানো হয়েছিল। ২৫ কর্মদিবসের মধ্যে ওই চিঠির জবাব দিতে বলা হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাত্র ৬টি সরকারি সংস্থা চিঠির জবাব দিয়েছে। বাকি ২০টি সংস্থায় ডিএসসিসির চিঠির উত্তর এখনো দেয়নি।

চিঠিতে বলা হয়েছিল, সড়কে খোঁড়াখুঁড়িসহ যে-কোনো উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে জানাতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে মাত্র ছয়টি সরকারি সংস্থা চিঠি দিয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।

ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা জানান, ২৬টি সংস্থা সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করতে অনুমতি চাইছে। অথচ সামনে বর্ষা মৌসুম আসছে। এখন এসব খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি দিলেই নগরে নাগরিক দুর্ভোগ আরো বাড়তে থাকবে। তাই ডিএসসিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব সংস্থাকে অপেক্ষা করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এই কর্মকর্তা বলেন, মূলত উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে সংস্থাগুলো এলোমেলো করে ফেলে। এমনও দেখা যায়, একই জায়গায় একাধিক সংস্থা পৃথকভাবে কাজ করে। এতে জনগণের দুর্ভোগ বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। এসব কাজ সমন্বয় করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া। যেসব সংস্থা যথাসময়ে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর কোনো সংস্থাকেই ইচ্ছেমতো কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে না।

২৬টি সেবা সংস্থার কাছে পাঠানো চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন সংস্থা রাস্তা কাটার কারণে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। তাই ডিএসসিসির মতামত নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে ঢাকা শহর পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প এবং আগামী দিনে কী উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হবে, তার বিবরণ পাঠাতে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র থেকে জানা যায়, ডিএসসিসির চিঠির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (বিটিসিএল), ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ঢাকা ওয়াসা) উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে চিঠির জবাব দেয়। এ ছাড়া ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড, তিতাস গ্যাস এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর তাদের উন্নয়ন প্রকল্পের কথা ডিএসসিসিকে অবহিত করে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে চিঠি গেলেও তার জবাব দেয়নি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্থাপত্য অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক, মগবাজার মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালক, পদ্মা সেতৃ প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ।

ডিএসসিসির সূত্র বলছে, নানান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করতে চাইছে আরও অনেক সংস্থা। কিন্তু অনুমতি দিচ্ছে না ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তবে যেসব সংস্থা সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি চাইছে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলেনি ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ।

সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, অতীতে সারা বছরই মহানগরীতে বিভিন্ন রাস্তায় উন্নয়নের কথা বলে খোঁড়াখুঁড়ি চলানো হতো। এতে শুষ্ক মৌসুমে সড়কে প্রচুর ধুলাবালি এবং বর্ষা মৌসুমে কাদাপানি হবার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সমন্বিতভাবে এই কাজটি করতে চান। তিনি এলোমেলো কোনও কাজ হতে দিতে চান না। সেই অনুযায়ী সব সংস্থাকে চিঠিও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডিএসসিসি হতাশ হয়েছে। কারণ তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ সংস্থা চিঠির জবাব না দিয়েই রাস্তা কাটার জন্য ডিএসসিসির অনুমতি চাইছে। কিন্তু তাদের আবেদন গ্রহণ করতে ডিএসসিসি অপারগতা প্রকাশ করছে।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ডিএসসিসি পরিকল্পিতভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণকে সাজাতে উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় একই জায়গায় যাতে একাধিক সংস্থা এলোমেলোভাবে কাজ না করে সেই দিকে আমরা নজর দিচ্ছি। একই জায়গাতে একাধিক সংস্থা পৃথকভাবে কাজ করলে জনগণের দুর্ভোগ চরম বেড়ে যায়। সেই কাজটি সমন্বয় করতেই আমাদের উদ্যোগ নেওয়া। আমাদের চিঠির জবাব যারা যথাসময়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের সকল উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী আরো বলেন, আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি। জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কাজ করতে দেয়া হবে না। কোনো সংস্থাকে যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে আর কাজ আর করতে দেয়া হবে না। অবহেলা চলবে না। গত বছরের ৭ অক্টোবর মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সই করা চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল। ২৫ দিনের মধ্যে ওই চিঠির জবাব জানাতে বলা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ২০টি সংস্থা চিঠির উত্তর দেয়নি বলেও জানান ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads