চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
থানা ও ফাঁড়িতে পুলিশ না থাকার সুযোগে পেশাদার অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। রাত হলেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত আতঙ্কে কাটছে নগরবাসীর নির্ঘুম রাত। চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে গত চারদিন ধরে অনেকে রাত জেগে বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় পাহারা দিচ্ছেন। হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুটের পর চট্টগ্রামের ১৬ থানা ভবন ও ফাঁড়ি এখন কার্যত পুলিশ শূন্য।
এ সুযোগে নগরের আগ্রাবাদ, হালিশহর, খুলশী, ষোলশহর, চকবাজার,জামালখান, টেরিবাজার, নন্দনকানন, পাথরঘাটা সহ বিভিন্ন স্থানে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাটের অভিযোগ আসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
বৃহস্পতিবার ছুরি দেখিয়ে ছিনতাই হয় সিএনজি অটোরিকশা। এদিন রাতে আন্দরকিল্লা রাজাপুকুর লেইন, চেরাগী পাহাড় শরীফ কলোনি, হেমসেন লেইন, আসকার দীঘির পাড়,কাজীর দেউড়ি, দেওয়ানজি পুকুর পাড় এলাকায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ছুটাছুটি করতে দেখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গভীর রাতে নগরের কাজির দেউড়ি ও নন্দনকানন এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৫ ডাকাতকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয়রা।
নন্দনকানন এলাকার বাসিন্দা পলাশ জানান, রাত আড়াইটার দিকে ডাকাতদলের কয়েকজন সদস্য এলাকায় জড়ো হওয়ার পর স্থানীয়রা সেনাবাহিনীর টহল টিমকে খবর দেয়। এসময় একজনকে আটক করে সেনা সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে জানান ।
কাজির দেউড়ি এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাত ২টার দিকে ডাকাত দলের কয়েকজন সদস্য এলাকায় ডাকাতি করতে এলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। এলাকাবাসী তাদের ধাওয়া দেয়। এসময় ৪ জনকে আটক করে সেনাবাহিনীর টহল টিমের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এদিকে সড়কে সন্ধ্যার পর বেড়েছে ছিনতাই। থানায় পুলিশ না থাকায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগও দিতে পারছেন না। আতঙ্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ নিজ নিজ এলাকার ভিডিও ও ছবি পোস্ট করছেন।
এইদিকে সোমবার রাত থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা রাত জেগে বাড়ি-ঘর পাহারা দিচ্ছেন। রাস্তায়, থানায় পুলিশ নেই। চুরি-ডাকাতি হলে অভিযোগ দেওয়ারও সুযোগ নেই। আতঙ্কে কাটছে সময়।
শুধু নগর নয়, উপজেলাগুলোতেও দুর্বৃত্তরা লুটপাট, চুরি-ডাকাতি ও হামলা চালিয়ে জায়গা দখল করছে। বোয়ালখালী, রাউজান, পটিয়া, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, সীতাকুণ্ড, চন্দনাইশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগে দুর্বৃত্তরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় মসজিদের মাইক থেকে দেওয়া হচ্ছে সতর্ক থাকার ঘোষণা। এলাকাবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে রাত জেগে দিচ্ছে পাহারা।
এইদিকে কোনো বিপদ হলে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছে সেনাবাহিনী। এরইমধ্যে সেনাবাহিনীর সহায়তায় থানার কার্যক্রম শুরু করার কার্যক্রম চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জান-মাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।
যেকোন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, হানাহানি এবং প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখিন হলে নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান ও গুজবে আতঙ্কিত হয়ে সেনাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করা থেকে বিরত থাকতেও আহ্বান জানানো হয়।
সেনাবাহিনী ক্যাম্পের সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে নিম্নলিখিত নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী এবং সাতকানিয়া উপজেলা- ০১৭৬৯১০৭২৩১, ০১৭৬৯১০৭২৩২। চট্টগ্রাম (লোহাগাড়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী এবং সাতকানিয়া উপজেলা ব্যতিত)-০১৭৬৯২৪২০১২, ০১৭৬৯২৪২০১৪।
তাছাড়া সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত অনুরোধ।
দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, মসজিদের ইমাম, অন্যান্য ধর্মের প্রতিনিধিসহ সকলের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে হিংসা ও বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটন সংক্রান্ত বিষয়ে অংশগ্রহণ করা হতে নিরুৎসাহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
যেহেতু এই মুহূর্তে সাময়িকভাবে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম চলমান নেই তাই নিজেদের এলাকায় যেকোনো বিরূপ ঘটনা প্রতিহত করতে একতাবদ্ধ থাকা ও প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয় ।